পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজকে সামনে রেখে দল ঘোষণার পর থেকে বেশ কিছু চমক নিয়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা। বেশ কয়েক বাদ পড়ার তালিকায় আছেন সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। যদিও বাংলাদেশ দলের প্রধান নির্বাচক জানিয়েছেন পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড সিরিজের চার টেস্টের কথা মাথায় রেখেই বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে মুশফিককে। তবে মুশফিকের কাছে জানা গেলো ভিন্ন কথা। গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মুশফিক জানালেন বিশ্রাম চাওয়ার মতো এতো বড় খেলোয়াড় তিনি হননি। ‘অ্যাভেইলেবল’ থাকা সত্ত্বেও দলে নেওয়া হয়নি তাকে।
বাদ পড়ার ব্যাপারে মুশফিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেকোনো ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারেই উত্থান-পতন থাকে। এটাই প্রথমবার না যে আমি বাদ পড়েছি। তবে দীর্ঘদিন পর বলতে পারেন। আমি বাদ পড়েছি এতে সমস্যা নেই, আমি নেগেটিভ ভাবে নেইনি এটা। আমি সবসময়ই বাংলাদেশের হয়ে সেরাটা দিতে চেয়েছি এবং ভবিষ্যতেও তাই করবো। কিছু সময় থাকে আমি ভালো পারফরম করতে পারি তেমনি কিছু খারাপ সময়ও আসে। এটাই তো শেষ নয়, যদি কখনো সুযোগ পাই আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টাই করবো।’
বাদ পড়ার কষ্টটা চাপা রাখলেও সেটা সরাসরি না জানানোয় বেশ কষ্ট পেয়েছেন মুশফিক সেটাও স্পষ্ট। মুশফিকের মতে তারা চাইলেই আলোচনার মাধ্যমেই সবকিছু করতে পারতো। তিনি বলেন, ‘তাঁদের উচিত ছিলো এটা বলা যে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সবারই সবকিছু অকপটে স্বীকার করা উচিত। কারণ দলের চেয়ে উর্দ্ধে তো কিছু না, আর আমি সেখানে সাধারণ একজন সদস্য। পারফরম্যান্সে উত্থান-পতন থাকবেই এবং প্রত্যেককে যার যার পারফরম্যান্স এবং ফিটনেস দিয়ে বিচার করা উচিত অবশ্যই। তারা সহজেই বলতে পারতো যে আমরা একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করছি। তোমাকে এই সিরিজে আমরা চিন্তা করছিনা, তুমি পারফরম করলে তারপর আবার… ফিরবে।’
টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আসলে মুশফিকের অনূভুতিটা যে অন্যরকম হতো সেটাও স্পষ্ট। তবে দেরী করে জানানোর চাপা ক্ষোভটাও যে আছে সেটাও প্রায় পরিষ্কার। মুশফিক বলেন, ‘তারা যদি আমাকে এভাবে বলতো তাহলেও আমি আরেকটু ভালো অনুভব করতাম যে অন্তত তারা আমাকে সেই সম্মানটা দিয়েছে। তারা যদি আসন্ন চার টেস্ট নিয়ে চিন্তা করেই থাকে তাহলে এটা বিশ্বকাপের আগেই বলতে পারতো যে আমাদের চারটা টেস্ট আছে তুমি একটা বিরতি নেও। সেটা আমার জন্যই ভালো হতো কারণ আমি মানসিকভাবে নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করতাম এবং জাতীয় লিগেরও দুইটা রাউন্ড খেলতে পারতাম। কিন্তু তাঁরা এটা খুব দেরি করে জানিয়েছে।’
বিশ্বকাপের ভরাডুবির পর দেশে ফিরে টিম ম্যানেজমেন্টকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি খেলার জন্য এভেইলেবল আছে। তবে সবার সিদ্ধান্তেই কিনা নামকাটা পড়লো এই অভিজ্ঞ ব্যাটারের। তিনি বলেন, ‘তাঁরা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো আমি অ্যাভেইলেবল কিনা। আমি বলেছি আমি এভেইলেবল। এবার বাকিটা আপনাদের সিদ্ধান্ত। তারা আমাকে বলেছে নির্বাচক প্যানেল, ম্যানেজমেন্ট, প্রধান কোচ ও টিম ডিরেক্টর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে আমাকে রাখবে না।’
অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে মুশফিক প্রস্তুত থাকলেও নেওয়া হয়নি দলে। তাই অনেকটা হাসির ছলেই প্রশ্ন করলেন তিনি কি বাঘ যে ভয় পেতে হবে! সাবেক এই অধিনায়ক বললেন, ‘আমি কোনো বাঘ যে আমি তাদেরকে বা কাউকে খেয়ে ফেলবো? অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে নান্নু ভাই আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো আমার আব্বা-আম্মা কেমন আছে। আমি বলতাম তারা এখন সুস্থ হয়ে উঠছে, ভালো আছে। আমি অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরপরেও তারা কিছুই বলেনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দল জিতলো, তারা চিন্তা করেছে আমাকে আর দলে প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘সত্যি বলতে এটা আমার জন্য খুব চ্যালেঞ্জের ছিলো। আমার কাছে মনে হয়েছে যোগাযোগের একটা ঘাটতি আছে। কারণ আমি জানি না আমি কোনো বাঘ নাকি সিংহ… আমার মনে হয় সরাসরি খোলামেলা আলাপ করলেই সবার জন্য ভালো হয়।’
নুরুল হাসান সোহানকে নিজের গ্লাভস তুলে দিতে চেয়েছিলেন বিশ্বকাপের পরে। তবে ম্যানেজমেন্ট সহ কোচিং প্যানেলের কারণে একটা হযবরল পরিস্থিতিতেই মুশফিককে ছাড়তে হয়েছে কিপিং গ্লাভস। তিনি বলেন, ‘আমি আমাকে শুধু একজন ক্রিকেটার হিসেবেই ভাবিনা। আমি একজন পরামর্শকও হতে পারি এবং আমি নিশ্চিত করতে চাই যেই আমার জায়গাটা নিবে আমি যেখানে শেষ করেছি সে যাতে সেখান থেকেই শুরু করতে পারে। আমি মনে করি এটা আমার দায়িত্বও। যদি আমি সোহানের ব্যাপারে বলি। একটা ছেলে আমার চোখের দিকে তাকাতেও লজ্জাবোধ করছে যে আমারই খারাপ লাগছে। তাই আমি বলেছি এয়া আরো সুন্দরভাবেও গুছিয়ে করা যেতে পারতো যদি তারা আমাকে শুধু বলতো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি বিশ্বকাপের পরেই কিপিং ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। আমি মনে করি সোহানের সক্ষমতা আমার চেয়েও বেশি। আমি আমার নিজের হাতেই তাকে এটা দিতে চেয়েছি। কিন্তু কেনো এটা হলো না! এটা কেন এমন ভাবে ঘটলো আমিও নিজেও জানিনা।’
দলের কারো সাথে কোনো পরামর্শ কিংবা আলোচনা না করেই তাদের ব্যাপারে হুট করে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়াত নিয়মটা বিসিবিতে নতুন নয়। তবে মুশফিক জানালেন সবকিছু খোলাশা করে বলাটাই সবার জন্য শ্রেয়। মুশফিক বলেন, ‘এখন যদি কেউ বলে যে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কারণ এটা দলের জন্য প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু সেই ক্রিকেটার সহ বাকিরা জানেও না কেনো এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং পরিকল্পনাটা কি? তাহলে এটা আসলে ভিন্ন দিকেই মোড় নেয়। তাই আমাদেরকে অবশ্যই সবকিছু পরিস্কার করে বলা উচিত।’
– ক্রিকবাজ অবলম্বনে