Social Media

Light
Dark

স্লেজিং ও অস্ট্রেলিয়া: একটি ভালবাসার গল্প

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বেশ ক্ষেপেই গিয়েছিলেন। বল টেম্পারিংয়ে জড়িতদের কঠোর সাজা দেওয়ার সাথে সাথে তিনি স্লেজিংয়েরও অবসান চাইলেন। যদিও, নাক উঁচু অস্ট্রেলিয়ানদের এই নেতা মনে হয় ভুলেই গেলের যে এই স্লেজিং হল খোদ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটেরই অলঙ্কার। এই অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের হাত ধরেই বিকশিত হয়েছে স্লেজিং।

এবার প্রশ্ন হল, এই স্লেজিং এলোই বা কোথা থেকে? স্লেজিং শব্দটার উৎপত্তি কবে কোথায় হয়েছে, তা নিয়ে অনেকগুলো মতবাদ প্রচলিত আছে। এর মধ্যে দু’টোকে সত্যি বলে ধারণা করেন ক্রিকেট ঐতিহাসিকেরা।

ইয়ান চ্যাপেলের মতে, স্লেজিং (sledging) শব্দটা প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল অ্যাডিলেড ওভালে। সেটা ১৯৬৩-৬৪ অথবা ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমের কথা। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত শেফিল্ড শিল্ডের লড়াই চলছে। একজন ক্রিকেটার কোনো একটা অপমানের প্রতিক্রিয়ায় হাতুড়ি দিয়ে কিছুতে আঘাত করার ভঙ্গীমা করেছিলেন (sledgehammering)। সেই থেকে প্রতিপক্ষের প্রতি অপমানসূচক কোনো কথাকে ‘স্লেজিং’ বলা হয়।

বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম বিবিসির প্যাট মারফির মতবাদটা ইন্টারেস্টিং। তাঁর মতে শব্দটার প্রচলন শুরু হয়েছিল ষাটের দশরে মাঝামাঝি সময়ে। সে সময় গ্রাহাম করলিং নামে একজন বোলার ছিলেন। নিউ সাউথ ওয়েলস ও অষ্ট্রেলিয়া দলের হয়ে বোলিং ওপেন করতেন। গ্রাহাম করলিংয়ের স্ত্রীর সাথে তার একজন টিমমেটের গোপন প্রেম ছিল। এটা নিয়ে তখন মিডিয়ায়ও টুকটাক খবর বের হচ্ছিল। গ্রাহাম একবার ব্যাটিং করার সময় ফিল্ডিং টিম তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে আমেরিকান শিল্পী পার্সি স্লেজের ‘হোয়েন আ ম্যান লাভস আ উইম্যান’ গানটি গাওয়া শুরু করে।

সেই থেকেই প্রতিপক্ষকে অপমান করা বা কথা বলে ক্ষেপিয়ে দেওয়া বোঝাতে ‘স্লেজিং’ শব্দটা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উল্লেখ্য, পার্সি স্লেজের ‘হোয়েন আ ম্যান লাভস আ উইম্যান’ গানটি অত্যধিক জনপ্রিয় হয়েছিল সে সময়। গানটি বের হওয়ার পর সবাই তাকে এক নামে চিনতো।

‘স্লেজিং’ শব্দটি এই যুগে একটি ক্রিকেটীয় শব্দ হিসেবেই বিবেচিত হয়। এটি একটি অস্ট্রেলিয়ান শব্দ। এতেই বোঝা যায়, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সাথে এর সম্পর্কটা ভালবাসার চেয়ে কম কিছু নয়। টেনিসে এর সামান্য ব্যবহার থাকলেও অন্যান্য খেলায় এ শব্দটির প্রচলন নেই।

গ্রাহাম করলিং

আর এই স্লেজিংয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে একেবারেই নেই, সেটা বলা যাবে না। সর্বশেষ, দেশের মাটিতে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের ওয়ানডে সিরিজেও স্লেজিং নিয়ে চলেছে বিস্তর আলোচনা। সেবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান জস বাটলারকে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে যখন বাংলাদেশ আউট করে, তখন পুরো টিম উল্লাসে ফেটে পড়ে।

বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের এমন ‘বুনো’ উল্লাস পছন্দ হয়নি জস বাটলারের। মাঠেই বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরে খেলা শেষে দুই দলের খেলোয়াড়দের সৌজন্যমূলক হ্যান্ডশেকের সময় আবারো বাদানুবাদে জড়ান অধিনায়ক বেন স্টোকস।

অক্সফোর্ড ডিকশেনারিতে ‘স্লেজিং’ শব্দের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়, বিশেষ করে ব্যাটসম্যানের মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটানোর উদ্দেশ্যে কটুক্তি করা।’

মার্ভ হিউজ

এখন স্লেজিংকে অনেকেই খেলার একটা কৌশল হিসেবে মনে করে। কোনো সেট ব্যাটসম্যানকে আউট করতে প্রতিপক্ষ বোলারদের যখন সব কৌশলই ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন তারা স্লেজিংয়ের আশ্রয় নেয়। যাতে ব্যাটসমানের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে, অথবা উত্তেজিত হয়ে একটা ভুল শট খেলে আউট হয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link