ফিজ-হাসান যুগলবন্দী: অনবদ্য ডেথ বোলিং

মুস্তাফিজুর রহমান আর চলে না। বিদেশের মাটিতে তো চলেই না। কিন্তু সমালোচনার জবাব দিতে নয় মুস্তাফিজুর রহমান হয়তো নিজের বাজে সময়টা পেছনে ফেলার জন্য হলেও এমন একটা স্পেলই করতে চেয়েছিলেন।

সেই জন্যই কিনা ম্যাচ শেষে ম্যাচের স্মারক হিসেবে একটা স্ট্যাম্প নিজের কাছেই রেখে দিতে চাইলেন মুস্তাফিজ। ফিরে আসার ম্যাচটা নিশ্চিত ভাবেই মনে রাখতে চাইবেন তিনি।

নতুন বল কিংবা পুরোনো, দল ঠিক যখন যখন চেয়েছে তখনই ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছেন মুস্তাফিজ। শুধু কাটার বা স্লোয়ারে নির্ভরতা নয়, মাথা খাটিয়ে বল করা মুস্তাফিজকেই যেন অনেকদিন ধরে খুঁজছিলেন বাংলাদেশের সমর্থকরা।

সেই মুস্তাফিজ দেখা দিলেন চেমসফোর্ডের এসেক্স কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব মাঠে। ১০-০-৪৪-৪ বোলিং ফিগারটাও হয়তো ফিজের বোলিংয়ের ফিরিস্তি দিতে পারবে না পুরোপুরি।

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে একাদশে সুযোগ পাননি। অন্যান্য সময় হলে হয়তো এটিকে বিশ্রাম বলে চালিয়ে নেয়া যেত। কিন্তু গত কয়েক মাসে ওয়ানডে ক্রিকেটে মুস্তাফিজের যা পারফরম্যান্স তাতে মুস্তাফিজের একাদশের বাইরে থাকাকে বিশ্রাম বলার উপায় নেই মোটেও। খরুচে বোলিংয়ের জন্য মুস্তাফিজকে একাদশের বাইরে রাখার গণদাবীও উঠেছিলো একটা সময়।

দ্বিতীয় ম্যাচ শরীফুল ইসলামের খরুচে বোলিংয়ের পর শেষ ম্যাচে তাকে একাদশ থেকে বাদ দিয়ে মুস্তাফিজকে নেয়া হয় একাদশে। ২৭৪ রান ডিফেন্ড করতে নেমে অধিনায়ক তামিম নতুন বলটা মুস্তাফিজের হাতে দিয়ে ভরসা করতে চাইলেন মুস্তাফিজের ওপরই। দারুণ এক ওপেনিং স্পেলে সেই আস্থার কি দারুণ প্রতিদানই না দিলেন ফিজ।

স্টিভেন ডোহেনিকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেকথ্রুটা এনে দিয়েছিলেন এই ফিজই। এরপর মাঝের স্পেলটাতে উইকেট না পেলেও কৃপণ বোলিংয়ে দলকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন। সব ম্যাজিক যেন জমিয়ে রেখেছিলেন শেষ স্পেলটার জন্য।

৪৩ তম ওভারে যখন আক্রমণে আবার ফিরলেন তখন ম্যাচে আয়ারল্যান্ডই ফেভারিট। গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হ্যারি টেক্টরকে ফিরিয়ে শান্ত ব্রেক থ্রু এনে দিলেও উইকেটে তখনো আছেন লর্কান টাকার।

আক্রমণে ফিরেই কার্টিস ক্যাম্ফারকে ফিরিয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে থাকেন বাংলাদেশকে। এরপর বাংলাদেশের জন্য ভয়ংকর হয়ে ওঠা ৫৩ বলে ৫০ করা টাকারকে ফিরিয়ে আয়ারল্যান্ডকে ম্যাচ থেকেই এক প্রকার ছিটকে দেন মুস্তাফিজ।

নিজের শেষ ওভারে জর্জ ডকরেলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয়ের পথটা রচনা করে রেখে যান মুস্তাফিজই। সেই পথে হেটে শেষ ওভারে নিজের ঠাণ্ডা মেজাজের পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন হাসান মাহমুদ।

হাসান মাহমুদের অস্ত্র ভান্ডারের দারুণ সব ব্যাক হ্যান্ড স্লোয়ারের প্রদর্শনীর কোনো জবাবই ছিলো না আইরিশ ব্যাটারদের কাছে। শেষ ওভারে দশ রান ডিফেন্ড করেন দারুণ ভাবে। দারুণ সব স্লোয়ার-ইয়োর্কারে ডেথ ওভারের জন্য টিম ম্যানেজমেন্টকে অনেকটাই চিন্তামুক করছেন হাসান।

নিজের শেষ স্পেলের তিন ওভারে তিন উইকেট তুলে নিয়ে প্রায় হাত থেকে ফসকে যাওয়া ম্যাচে বাংলাদেশকে জয় এনে দেন মুস্তাফিজ। মুস্তাফিজ যখন শেষ স্পেলে বল করতে আসেন তখন বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতবে এটা বিশ্বাস করার লোক হয়তো খুব বেশি ছিলো না। মুস্তাফিজের স্পেলটার বিশেষত্ব এখানেই।

ক্যারিয়ারের প্রথম দিকটাই এই কাজটা অনেকবারই করে এসেছেন মুস্তাফিজ। কিন্তু এভাবে অসম্ভব জায়গা থেকে বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতানোর স্বাদটা অনেকদিন পর পেলেন ফিজ। ফিজের ‘ফিজ’ হয়ে ফেরাটা বিশ্বকাপের আগে প্রশান্তির শীতল বাতাসই বইয়ে দেবার কথা বাংলাদেশ দলে।

ভারতের মাঠের বিশ্বকাপে যে এই মুস্তাফিজকে খুব করে চাই -ই চাই টাইগারদের। সাথে হাসান মাহমুদ কিংবা তাসকিন আহমেদরা তো আছেন। এমন যুগলবন্দী ফিরে আসুক বারবার।

ওয়ানডে বিশ্বকাপের মূল পর্বের আগের দৌঁড়টা তিনে থেকে শেষ করল বাংলাদেশ। এবার মূল পর্বে নতুন ইতিহাস গড়ার পালা। সেই ইতিহাসটাও লেখা হোক হাসান-মুস্তাফিজদের নামে, পেস বিপ্লবের নামে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link