ক্রিকেট ইতিহাসে ইনিংসে দশ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন মাত্র তিনজন। ইংল্যান্ডের জিম লেকার, ভারতের অনিল কুম্বলের পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই তালিকায় সম্প্রতিই নাম লেখান নিউজিল্যান্ডের স্পিনার আজাজ প্যাটেল। অবশ্য এই তালিকায় নাম উঠাতে গিয়েও ভাগ্য সহায় না হওয়ায় পারেননি লঙ্কান গ্রেট মুত্তিয়া মুরালিধরন। কেন পারেননি? – সেই গল্পটাই বলতে চলেছি এবার।
জানুয়ারি ২, ২০০২। ক্যান্ডিতে সেবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মুরালির স্পিন ভেলকিতে মাত্র ২৩৬ রানে শেষ জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংস। সেদিন প্রথম ৯ উইকেটই শিকার করেন মুরালি! মুরালির সামনে হাতছানি ছিল তৃতীয় বোলার হিসেবে ইনিংসে দশ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়ার। প্রথম দিন শেষে মুরালির বোলিং ফিগার ছিল ৩৯ ওভারে ৫১ রানে ৯ উইকেট!
পরের দিন মুরালির ব্যক্তিগত প্রথম ওভারেই জিম্বাবুয়ের ব্যাটার ট্রাভিস ফ্রেন্ডের ব্যাট-প্যাড হয়ে ক্যাচ উঠলেও মিস করেন রাসেল আর্নল্ড! এরপর অনেকটাই সহজ এক লেগ বিফোরের আবেদনও নাকচ করে দেন আম্পায়ার। দুইবার সুযোগ হয়েও যেন রেকর্ডে নাম লেখাতে পারছিলেন না মুরালি।
অপর প্রান্তে চামিন্দা ভাসের বলে অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়া করে হেনরি ওলোঙ্গা উইকেটের পেছনে কুমার সাঙ্গাকারাকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিলে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। একাধিক সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় সেদিন ক্যান্ডিতে ইতিহাস গড়তে পারেননি মুরালি।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে জয়সুরিয়ার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৫০৫ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। ২৬৯ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে জিম্বাবুয়ে। চামিন্দা ভাস, মুরালিধরন আর চারিথা বুদ্ধিকার দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ১৭৫ রানেই গুড়িয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
দ্বিতীয় ইনিংসে মুরালি শিকার করেন ৬৪ রানে ৪ উইকেট। ম্যাচে মুরালির দাপটে বোলিংয়ে ইনিংস ও ৯৪ রানের বড় ব্যবধানে জয় পায় শ্রীলঙ্কা। দুই ইনিংস মিলিয়ে ওই টেস্টে মুরালি শিকার করেন ১৩ উইকেট।
ইনিংসে ১০ উইকেট নিতে পারলে মুরালি বনে যেতে ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগারের অধিকারী। জিম লেকার, অনীল কুম্বলেদের চেয়ে তিনি বেশ কম রানই দিয়েছিলেন। তবে ভাগ্য সহায় না হওয়ায় ইনিংসে দশ উইকেট পাওয়ার কীর্তি গড়তে পারেননি এই লঙ্কান তারকা। অবশ্য ক্যান্ডিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মুরালির ৫১ রানে ৯ উইকেট শিকার করা ইনিংসটিই ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার।
১৯৫৬ সালে ম্যানচেস্টারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংলিশ স্পিনার জিম লেকার প্রথম বোলার হিসেবে দশ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন। ৫১.২ ওভারে ২৩ মেইডেন দিয়ে মাত্র ৫৩ রানে ১০ উইকেট নেন লেকার। সেই রেকর্ডে একক রাজত্ব করছিলেন প্রায় ৪৩ বছর!
এরপর ১৯৯৯ সালে দিল্লিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে দশ উইকেট শিকার করেন ভারতীয় লেগ স্পিনিং কিংবদন্তি অনিল কুম্বলে। মাত্র ২৬.৩ ওভারে ৯ মেইডেন দিয়ে ৭৪ রানে ১০ উইকেট নেন কুম্বলে। তার প্রায় ২২ বছর পর ২০২১ সালে ভারতের বিপক্ষ দশ উইকেট নিয়ে এই অনন্য রেকর্ডে নাম লেখান আজাজ প্যাটেল। অল্পের জন্য এই রেকর্ডে নাম উঠেনি স্পিন কিংবদন্তি মুরালিধরনের!