কুলকিনারাহীন ফ্রেড রহস্য

বেঞ্চ গরম করা থেকে শুরু করে সবচেয়ে বাজে দিনটির সাক্ষী হয়ে রয়েছেন ফ্রেড। ব্রাজিল ফুটবলের ঐতিহ্যের বিপরীতে তিনি ছিলেন এক আমজনতা। তারকায় ঠাসা ব্রাজিলের এক আক্ষেপ কিংবা শত প্রশ্নের জন্মদাতা ফ্রেড। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল মানেই তো সাম্বা নৃত্যের মত দৃষ্টিনন্দন কারিকুরি। সেখানটায় ফ্রেড বড্ড সাদামাটা। জমকালো আয়োজনের সাদা রঙের কাপড়।

বেঞ্চ গরম করা থেকে শুরু করে সবচেয়ে বাজে দিনটির সাক্ষী হয়ে রয়েছেন ফ্রেড। ব্রাজিল ফুটবলের ঐতিহ্যের বিপরীতে তিনি ছিলেন এক আমজনতা। তারকায় ঠাসা ব্রাজিলের এক আক্ষেপ কিংবা শত প্রশ্নের জন্মদাতা ফ্রেড। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল মানেই তো সাম্বা নৃত্যের মত দৃষ্টিনন্দন কারিকুরি। সেখানটায় ফ্রেড বড্ড সাদামাটা। জমকালো আয়োজনের সাদা রঙের কাপড়।

ফ্রেড ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বের প্রদেশ মিনাস জেরাইসে জন্মেছিলেন ১৯৮৩ সালের অক্টোবরের তিন তারিখে। তাঁর প্রদেশের নামের বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘মোহরের খনি’। তবে মোহরের মত মূল্যবান হতে পারেননি ফ্রেড ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে।

ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের আক্রমণভাগটা সবসময় দখলে ছিল তারকার ফুটবলারদের। সেখানটায় পেলে, সক্রেটিস, রোনালদিনহো, রোনালদো, রোমারিও থেকে শুরু করে নেইমারদের মত তারকারা সামলেছেন আক্রমণের দায়িত্ব। এই তালিকায় ফ্রেড যেন বড্ড বেমানাম। তিনি যেন ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট শিশু। তাইতো বেশ প্রশ্ন জাগে, কি করে তিনি ব্রাজিলের মত একটি দলের বিশ্বকাপের মঞ্চের অন্যতম প্রধান অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন?

এর সঠিক উত্তর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সঠিক উত্তর তো দূরে থাক কাজ চালিয়ে নেওয়ার মত উত্তর খুঁজে পাওয়াও কঠিন কাজ। ২০০২ সালের শিরোপা জয়ের পর ২০০৬ সালেও শিরোপা নিজেদের দখলে নিতে চেয়েছিল ব্রাজিল। আর সে দলেই রোনালদো, আদ্রিয়ানো, রবিনহোদের ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়েছিল। তবে ফ্রেড যখন প্রথম দলের সাথ যুক্ত হন তখন তিনি ছিলেন টগবগে তরুণ।

তিনি সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন জাতীয় দলের কাছে। তরুণ ফ্রেডকে নিয়ে রীতিমত ট্রান্সফার মার্কেটে কাড়াকাড়ি লেগে যাওয়ার মত অবস্থা ছিল। তাঁর মধ্যে হয়ত প্রতিভার ছিটেফোঁটা লক্ষ্য করেছিল ইউরোপের বেশকিছু ক্লাব। সালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ক্রুজেইরোর হয়ে ৪৩ ম্যাচে ৪১ গোল করে নজরে আসেন ফ্রেড। তাইতো তাঁকে সে সময়ের লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন দল অলিম্পিক লিঁও দলে ভেড়ায় ২০০৫ সালে। তাঁর জন্যে ফ্রেঞ্চ ক্লাবটি খরচ করেছে ১৫ মিলিয়ন।

তবে ইউরোপিয়ান ফুটবলে তিনি খেই হারিয়ে ফেলেন। সেখানটায় তাঁর সেই গোল করার সক্ষমতা কেমন যেন ফিঁকে হয়ে যায়। ঠিক ওখানটায় তাঁকে নিয়েই যেন সবার যত প্রশ্ন। যেখানে এক মৌসুমে তিনি চল্লিশ গোল করেন সেখানে তিন মৌসুমে ফ্রেঞ্চ লিগে তাঁর গোল ৪৩। হিসেবে গড়মিল। আর সেই গড়মিল হওয়া হিসেবটা আর কখনোই যেন মেলানো যায়নি।

তবুও কোন রকমের হিসেব ছাড়াই তাঁকেই ২০১৪ সালের ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে আক্রমণের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর প্রধান কারণ ২০১৩ সালের কনফেডারেশন্স কাপ জয়ে তাঁর অবদান। সে টুর্নামেন্টে তিনি ছিলেন অনবদ্য, দূর্দান্ত। একজন ‘নাম্বার নাইন’ এর কাছ থেকে একটা দল যা প্রত্যাশা করে তিনি ঠিক সে কাজটাই করেছিলেন পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই। গোলে ক্ষুধায় একজন স্ট্রাইকারের ভয়ংকর ক্ষুধার পরিচয় তিনি দিয়েছিলেন।

সেবার ফাইনালে স্পেনকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল ব্রাজিল। তিন গোলের দুইটি করেছিলেন ফ্রেড। ভাবুন তবে ঠিক কতটা কার্য্যকর একজন স্ট্রাইকার তিনি ছিলেন। তবে আবার তিনি হারিয়ে যান বিশ্বকাপের মঞ্চে। তাঁর এই হঠাৎ জ্বলে উঠে আবার হারিয়ে যাওয়ার ঠিক কোন সংজ্ঞা হয়ত খোদ ফ্রেডের জানা নেই। পুরো বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল অবধি তাঁর গোল ছিল মোটে একটি।

অথচ তিনি ছিলেন আক্রমণ ছকের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ৭-১ এর সে ট্র্যাজেডির সাক্ষী তিনিও ছিলেন। ঘরের মাঠে ঘরের দর্শকদের সামনে এমন বাজে হার মেনে নেওয়া বড্ড কষ্টের। তবে সে হার প্রমাণ করে দিয়েছিল যে বিশ্বকাপের যাত্রায় ব্রাজিল ছিল সেবার গড়পরতা মানের এক দল। শুধুমাত্র নেইমারের একক নৈপুণ্যে সেবার কোয়ার্টারফাইনাল অবধি পৌঁছাতে পেরেছিল। আর বাকি পথটার গল্প তো সবারই জানা।

তবে ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে ফ্রেড বেশ ভালই দিন পার করেছেন। রীতিমত ব্রাজিলিয়ান ঘরোয়া ফুটবলের কিংবদন্তির কাতারে ফেলা যাবে তাঁকে। তবুও কেন জানি জাতীয় দলে তাঁর পারফরমেন্সকে কোনভাবেই ব্যখা করা যেন যায়না। রহস্যে ঘেরা থাক ফ্রেডের ক্যারিয়ার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...