পয়েন্ট টেবিলের নিচের দিকে থাকা দুই দলের লড়াই। সেই লড়াইটা বড্ড ম্যারম্যারেই হবার কথা। তবে এদিন নাহিদুল ইসলাম যেন উত্তেজনার খানিকটা সুবাতাস ছড়িয়ে দিতে চাইলেন গোটা মিরপুরের আবহাওয়াতে। তিনি রীতিমত বল হাতে তাণ্ডব করলেন। তিনি একাই অবরুদ্ধ করে দিলেন ঢাকা ডমিনেটর্সের ফিরে আসার সকল পথ।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নাহিদুল ইসলাম নামটা বেশ পরিচিত। একজন অলরাউন্ডার হিসেবেই নামডাক রয়েছে তাঁর। ঘরোয়া ক্রিকেটে সব ফরম্যাটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাঁর আনাগোনা। তবে খবরের কাগজে জায়গা হয়েছে অল্প-স্বল্প। কিন্তু এবার আর সেই অল্প-স্বল্প গল্পে সীমাবদ্ধ হতে চাইলেন না তিনি। রীতিমত প্রধান খবরের উৎস হয়ে গেলেন নিজের বোলিং নৈপুন্যে। এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সুন্দরতম বোলিং ফিগারের মালিক এখন নাহিদ।
হয়ত ইতিহাস নন্দিত কোন বোলিং ফিগার নয়। তবে সেটা স্রেফ উইকেটের বিচারে। নাহিদুলের অফস্পিন ভেলকিতে পুরো ঢাকা ডমিনেটর্সের দূর্বল ব্যাটিং অর্ডার তছনছ হয়ে যায়। তিনি একাই নিয়ে নেন চারটি উইকেট। আট ওভারেই ঢাকার প্রায় অর্ধেক ব্যাটারের ঠিকানা তখন প্যাভিলন। আর সেই বিপর্যয় ঘটানোর কাজটা করেছেন নাহিদুল ইসলাম। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই নাহিদুলের জোড়া আঘাত।
প্রথমে তিনি তুলে নেন মিজানুর রহমানের উইকেট। ব্যাটের কানায় লাগা বল গিয়ে জমা পড়ে খুলনা টাইগার্সের বোলার নাহিদ রানার হাতে। এরপর এক বল বাদ রেখে আবারও উইকেটের দেখা পান নাহিদুল। এবার তাঁর শিকার উসমান গানি। তিনিও ক্যাচে কাঁটা পড়ে হাটা ধরেন সাজঘরের উদ্দেশ্যে। সেই ওভারটিতে কোন রানই নিতে পারেনি ঢাকার ব্যাটাররা। এরপরের ওভারেও নাহিদ আরও একটি উইকেটের দেখা পেয়ে যান।
এবারও ক্যাচ আউট। মোহাম্মদ মিথুনের হাওয়ায় ভাসানো বল তালুবন্দি করেন তামিম ইকবাল। সেই ওভারে অবশ্য রানের খাতায় আঁচড় লাগে। তিন রান যুক্ত হয় নাহিদুলের বোলিং ফিগারে। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে আবারও বোলিং প্রান্তে সরব উপস্থিতি নাহিদুলের। এবার বিদেশি খেলোয়াড় অ্যালেক্স ব্লেককে ঠায় দাঁড় করিয়ে রাখলেন ব্যাটিং প্রান্তে। আরও একটি মেইডেন ওভার যুক্ত হয় নাহিদুলের নামের পাশে।
তখন কেবল আর মাত্র একটি উইকেটের অপেক্ষা। আর খুব বেশি রান খরচা না করার একটি সুপ্ত বাসনা। নাহিদুল হয়ত সেসব কিছুই মাথায় আনেননি। তিনি নিজের এমন শুভ দিনটাই কেবল উপভোগ করতে চাইলেন। দিনটিকে আরও উপভোগ্য বানিয়ে দিলেন অ্যালেক্স ব্লেক। তিনিও ক্যাচ তুলে দিলেন তামিমের হাতে। ব্যাস নাহিদুলের ঝুলিতে চলে এলো চারখানা গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। অন্যদিকে ব্যাকফুটে ঢাকা ডমিনেটর্স।
প্রথম দশ ওভারের মাঝেই নাহিদুলের কোটা পূরণ করে ফেলেন অধিনায়ক ইয়াসির আলী চৌধুরি। তাতে অবশ্য ভালটা খুলনারই হয়েছে। চারটি দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়া গেছে। ব্যক্তিগত চতুর্থ ওভারে আবারও কেবল তিনটি রান খরচ করেন নাহিদুল। যার বদৌলতে এবারের বিপিএলে সেরা বোলিং ফিগারের মালিক বনে যান তিনি।
নাহিদুলের বোলিং ফিগার ৪-২-৬-৪। দুর্দান্ত এই বোলিং ফিগার নিয়েই তিনি শেষ করেন নিজের কোটা। দারুণ সব বলে তিনি কুপকাত করেছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। মিরপুরের উইকেট খানিকটা স্লো এবং তা ব্যাটারদের জন্যে কঠিন পরীক্ষার মঞ্চ। আর সেই মঞ্চেই কঠিনতম পরীক্ষাটা নিয়ে নিয়েছেন নাহিদুল। তবে দৃষ্টিকটু সব শট নির্বাচন নিশ্চিতভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে ঢাকার খেলোয়াড়দের।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে স্পটলাইট এখন নাহিদুলের উপরে। এই স্পটলাইটের আলো থেকে বেড়িয়ে আসতে নিশ্চয়ই চাইবেন না নাহিদুল। তেমনটা প্রত্যাশা করাও ভুল।