ভারতের বিপক্ষে ‘তুরুপের তাস’ নাসুম!

বিশ্বকাপ মিশনের প্রায় অর্ধেকের বেশি পথ পাড়ি দেওয়া হয়ে গিয়েছে টাইগারদের। তবে একটি ম্যাচেও এখনো দেখা মেলেনি নাসুম আহমেদের। তবুও ভারত, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ঘুরে ফিরে আসছে তাঁর নাম। কারণ অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে বিশ্বকাপ দলে নাসুমকে রাখার ব্যাপারে টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরণ শ্রীরাম ভারত, পাকিস্তানের ডান হাতি নির্ভর ব্যাটিং লাইনআপকে ইঙ্গিত করেছিলেন।

তবে কি শ্রীরামের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার এখনই মোক্ষম সময়? আপাতত ভারত ম্যাচের দিকে লক্ষ্য দিলে দেখা যায়, ভারতের ব্যাটিং অর্ডারের প্রায় সবাই ডান হাতি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের একাদশে স্বীকৃত ব্যাটারদের মধ্যে সবাই ছিলেন ডানহাতি। অবশ্য বাংলাদেশের বিপক্ষে দীনেশ কার্তিক না থাকায় তাঁর পরিবর্তে দলে ঢুকছেন বাঁহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটার ঋষাভ পান্ত।

তারপরও ভারতের ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম ৪ জন নিশ্চিতভাবেই ডানহাতি থাকছেন। এখন ডানহানি ব্যাটারদের বিপক্ষে নাসুমের সাফল্য আর লেফট আর্ম স্পিনারদের বিপক্ষে বিরাট, রোহিতদের কিছুটা অস্বস্তি- দু’টিই নাসুম আহমেদকে সামনের ম্যাচের একাদশে রাখার সম্ভাবনাকে প্রবল থেকে প্রবলতর করছে। এখন সেই সম্ভাবনাটাই কিছু তথ্যের ভিত্তিতে রেখাপাত করা যাক।

ক্যারিয়ার জুড়ে ১৪০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করলেও বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে রোহিত শর্মার স্ট্রাইক রেট ১২৫। অর্থাৎ বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে তিনি একটু রয়েশয়েই খেলেন। আবার এই বাঁহাতি বোলারদের বিপক্ষে ৪৯ ইনিংসে ১২ বার আউট হয়েছেন রোহিত।  

লোকেশ রাহুল বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে বিধ্বংসী। ক্যারিয়ারে যেখানে ১৩৮ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন সেখানে স্পিনারদের বিপক্ষে তাঁর স্ট্রাইকরেট ১৪৭! তবে আশার বিষয় হলো, ২৮ ইনিংসের মধ্যে তিনি ৭ বারই বাঁহাতি স্পিনারদের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি ৪ ইনিংসে তিনি একবার বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে ধরাশায়ী হয়েছেন। 

বিরাট কোহলি সহজে উইকেট দিতে চান না। তবে ক্যারিয়ার বলছে, ১৩৮ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করা বিরাট বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে বেশ মন্থর গতিতে ব্যাট করেন। লেফট আর্ম স্পিনারদের বিপক্ষে তাঁর স্ট্রাইকরেট ১২০। যদিও এই বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে তাঁর ব্যাটিং গড় ৭৮.২!

বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা এই মুহূর্তের ব্যাটিং সেনসেশন সুরিয়াকুমার যাদবের। যার ক্যারিয়ার স্ট্রাইকরেট ১৭৭.০২, সেই তিনিই বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে রান করেছেন ১২৮ স্ট্রাইকরেটে। একই চিত্র ফুটে ওঠে, হার্দিক পান্ডিয়ার বেলাতেও। বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট ১১৯.৪৪। অথচ তিনি ক্যারিয়ারজুড়ে রান করেছেন ১৪৬.০৩ স্ট্রাইকরেটে। 

বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে ভারতীয় ব্যাটারদের স্ট্রাগলের চিত্রটা ফুটে ওঠে আরেকটি পরিসংখ্যানে। ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের মধ্যে রোহিত শর্মা ব্যতিত সবারই বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে ১২০ এর নিচে স্ট্রাইকরেট ছিল। বিরাট কোহলি আর হার্দিক পান্ডিয়ার স্ট্রাইকরেট তো আরো কম, ১০০ এর নিচে। বিরাট কোহলি এই সময়ের মাঝে লেফট আর্ম স্পিনারদের বিপক্ষে ব্যাট করেছেন ৯৭ স্ট্রাইকরেটে আর হার্দিক পান্ডিয়ার ক্ষেত্রে সে সংখ্যাটা মাত্র ৯৫।  

বাঁহাতি স্পিনারদের বিপরীতে ভারতীয় ব্যাটারদের এমন চিত্রের পাশাপাশি নাসুম আহমেদের নিজের রেকর্ডও বাংলাদেশের আশার পালে হাওয়া দিচ্ছে। ডানহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে ২৬ ইনিংসে ২১ উইকেট নিয়েছেন। আর সেই ইনিংসগুলোতে তাঁর ইকোনমি রেট ছিল ৬.৪৮। অর্থাৎ ডানহাতি ব্যাটাররা তাঁর বিপক্ষে রান তুলতে পেরেছে ১০৭.৯১ স্ট্রাইকরেটে। তাই ভারতের বিপক্ষে একাদশে জায়গা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হতেই পারেন নাসুম। অন্তত পরিসংখ্যান তাঁর হয়েই কথা বলছে।

তবে পরিসংখ্যান তো আর ম্যাচের পরিস্থিতি সব সময় পাল্টে দেয় না। বড়জোর একটা অতীত ডেটার ভিত্তিতে সক্ষমতার চিত্র দেয় মাত্র। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাঁহাতি ব্যাটারদের কথা মাথায় রেখে মিরাজকে একাদশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের সে পরিকল্পনা ব্যর্থ করে ছেড়েছিল রাইলি রুশো, ডি ককরা।

ভারতের ব্যাটিং লাইনআপটাও তো বিশ্বের অন্যতম সেরা। এখন তাদের বিপক্ষে নাসুমের কার্যকারিতা পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাঠে কতটা খাটবে সেটা আগেভাগেই বলে দেওয়া বেশ কঠিন। তবে পরিসংখ্যান আর মাঠের চিত্র এক হলে, সাকিবের কথা মতো, একটা আপসেট ঘটাতেই পারে টিম বাংলাদেশ। 

    

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link