রোলার কোস্টার রাইড

২০১৯ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। প্রথম ম্যাচ চলছে। মুখোমুখি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু ও চেন্নাই সুপার কিংস। সিএসকে জয়ের জন্য মাত্র ৭১ রান তাড়া করতে নেমেছে। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার শেন ওয়াটসন ক্রিজে। স্কোর বোর্ডে জমা এই রান তখন রীতিমত নস্যি!

ম্যারমেরে সেই ম্যাচের উত্তাপ হয়ে আসলো তখন ঘণ্টায় ১৫১ কিলোমিটার গতির এক বাউন্সার। সরাসরি আঘাত হানে বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়ানের হেলমেটে। ওয়াটসন কেবল পেসে পরাস্তই হলেন না, হুমড়ি খেয়ে পড়ে পড়ে গেলেন ক্রিজে।

বোলারটি হলেন দিল্লীর নবদ্বীপ সাইনি। আক্ষরিক অর্থেই তিনি হরিয়ানার রাস্তা থেকে উঠে এসেছেন।

গেল ছয়-সাত বছর ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে সাইনি বেশ ধারাবাহিক ভাবে পারফরম করে যাওয়া ক্রিকেটারদের একজন। আর ২০১৯ আইপিএলে এসে তিনি হয়ে ওঠেন অতিমানবীয়। ২০২০ সালের আইপিএলে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। নিয়মিত ১৫০ কিলোমিটারের ওপর গতি নিয়ে বল করেছেন, উইকেট নেওয়ায় বিরাট কোহলির ভরসার পাত্র হয়ে উঠছেন।

তিনি এখন শাইনিং সাইনি!

তবে, এমন উজ্জ্বলতা ছড়ানোর আগের পথটায় অসংখ্য বাঁধা পেরোতে হয়েছে এই তরুণকে। সাইনির ক্রিকেট মাঠে যাত্রাটা রোলার কোস্টার রাইডের চেয়ে কম কিছু নয়। তিনি ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত চামড়ার বলে খেলেননি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেরও অংশ ছিলেন না কখনো। হরিয়ানার কর্নালে তিনি তখন ২০০ রুপির বিনিময়ে টেনিস বলের স্থানীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলে বেড়াতেন।

একবার কর্নাল প্রিমিয়ার লিগ খেলছিলেন। তখন সাইনির ওপর চোখ যায় দিল্লীর সাবেক মিডিয়াম পেসার সুমিত নারওয়ালের। নারওয়ালই মূলত এই টুর্নামেন্টের আয়োজক। সাইনির পেস দেখে মুগ্ধ হন তিনি।

সাইনিকে সেখান থেকে সোজা নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লী দলের নেটে। নেটে তাঁর চূড়ান্ত পরীক্ষা নেন গম্ভীর। নেটে দেখেই সাইনিকে পছন্দ হয়ে যায় তাঁর। সাইনিকে এক জোড়া বুট দিয়ে বলেন নিয়মিত দিল্লীর নেটে আসতে। দিল্লীর ক্রিকেটে সেটাই সাইনির সূচনা।

সাইনির ক্যারিয়ারে এই গম্ভীরের ভূমিকার কোনো শেষ নেই। দিল্লীর সাবেক এই অধিনায়ক রঞ্জি ট্রফির দলে সাইনিকে নেওয়ার জন্য রাজ্য দলের নির্বাচকদের কাছে অনুনয়-বিনয়ের কোনো কমতি রাখেননি। শেষ অবধি ২০১৩-১৪ মৌসুমের রঞ্জি ট্রফিতে দিল্লী দলের হয়ে অভিষেক হয় সাইনির।

এরপর থেকে সাইনিকে আর কখনোই পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৭-১৮ মৌসুমে তিনি রঞ্জিতে দিল্লীতে ফাইনালে নিয়ে যাওয়ার পেছনে ছিলেন প্রধান কারিগর। আট ম্যাচে ৩৪ উইকেট নিয়ে তিনি শেষ করেন মৌসুম।

সেমিফাইনালে বেঙ্গলের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫৫ রান দিয়ে নেন তিন উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩৫ রান দিয়ে পান চার উইকেট। বেঙ্গল সেই ম্যাচে মাত্র ৮৬ রান তাড়া করতে গিয়েও হেরে যায়। ফাইনালে পৌঁছায় সাইনির দিল্লী।

২০১৮ সালের জুনেই একবার জাতীয় দলের দুয়ারে পৌঁছেছিলেন সাইনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক টেস্টের স্কোয়াডে রাখা হয়েছিল তাঁকে। সেবার ব্যাটে বলে না হলেও, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর সুযোগ পান পরের বছরই। আর যত, সময় যাচ্ছে – ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট কিংবা জাতীয় দল – যে কোনো পরিচয়েই নিজেকে অপরিহার্য্য করে তুলছেন সাইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link