অন্যরকম অভিষেকের অপেক্ষায় রাহুল

আর্ন্তজাতিক পরিসংখ্যান দিয়ে তার সময়টা বোঝা যাবে না।

তিনি ছিলেন দূরন্ত পারফরমার। সেই পারফরম্যান্স দিয়েই জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন। কিন্তু আর্ন্তজাতিক ক্যারিয়ার দীর্ঘ হয়নি। সে নিয়ে হয়তো আফসোস থাকতে পারে। তবে অবসরের এতোদিন পর অন্যরকম একটা অভিষেকের সামনে দাড়িয়ে আছেন এক সময়ের অলরাউন্ডার নিয়ামুর রশিদ রাহুল।

দেশের মাটিতে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ম্যাচ রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সিরিজ শুরু হবে আগামী ২০ জানুয়ারি, বুধবার থেকে। এই প্রথম কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের আর্ন্তজাতিক ম্যাচে দায়িত্ব পালন করবেন রাহুল। এর আগে আইসিসি বিশ্ব ক্রিকেট লিগ টু এর ৬ টি ওয়ানডে ম্যাচ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা আছে তার।

রাহুল বলছেন, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানো সেই ম্যাচে মাঠে নামার মতোই একটা অনুভূতি হচ্ছে তার। তিনি ঘরের মাটিতে টেস্ট খেলুড়ে দলের ওয়ানডে পরিচালনার জন্য মুখিয়ে আছেন। তবে তার আসল লক্ষ্য টেস্ট।

এবার করোনা মহামারীর কারণে নিরপেক্ষ ম্যাচ রেফারি ও নিরপেক্ষ আম্পায়ারের জায়গা থেকে সরে এসেছে আইসিসি। সেই বিবেচনায় স্থানীয়রাই নিয়োগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে সিরিজে দায়িত্ব পালন করবেন সব স্থানীয় অফিশিয়ালরা।

তিনটি ওয়ানডেতেই ম্যাচ রেফারি হিসেবে থাকছেন রাহুল। আম্পায়ার হিসেবে কাজ করবেন শরফুদৌলা ইবনে সৈকত, মাসুদুর রহমান মুকুল, গাজী সৈকত ও তানভীর আহমেদ। এই চারজনই আগে আর্ন্তজাতিক ম্যাচ করেছেন।

আর্ন্তজাতিক ম্যাচ রাহুলও করেছেন। তবে তার পরিচালনা করা ম্যাচে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দল এর আগে ছিলো না।

১৯৯৯ সালে জাতীয় দলের হয়ে দু’টি ওয়ানডে খেলেছেন রাহুল। এর মধ্যেই অবশ্য ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নর্দাম্পটনে পাকিস্তানকে হারানো ম্যাচের সদস্য ছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে পাঁচ ওভার বোলিং করে এক মেইডেন পেয়েছিলেন, রান দিয়েছিলেন পাঁচটি।

প্রবল প্রতিভাধর বলে বিবেচিত হলেও এরপর আর কখনো জাতীয় দলে জায়গা পাননি।

এ ছাড়া ৩৭টি প্রথম শ্রেনীর ম্যাচ ও ৪০ টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। তবে এসব ক্রিকেটে তার বলার মতো খুব বেশী কীর্তি নেই। ২০০৬ সাল অবধি তিনি নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন।

২০০৬ সালে খেলা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে রাহুল কোচিং কোর্স ও আম্পায়ারিং কোর্স করেন। ইচ্ছে ছিলো আম্পায়ার হওয়ার। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা এবং ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা মিলিয়ে বন্ধুদের পরামর্শে ম্যাচ রেফারি হিসেবে কাজ শুরু করেন ২০০৮ সাল থেকে। রাহুল বলছিলেন, ‘আমাকে আমার আম্পায়ার বন্ধু মুকুলই পরামর্শ দিয়েছিলো। পরে আমি দেশের আম্পায়ার, ম্যাচ কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়দের কাছ থেকে দারুন সমর্থন পেয়েছি। সকলকে এই সময় ধন্যবাদ জানাতে চাই।’

ম্যাচ রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অনেকদিন হলো। আইসিসির ম্যাচেও কাজ করছেন বেশ কিছুদিন। আইসিসির ডিভিশন টুতে নেপাল, ওমান ও যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি ম্যাচে গত বছরই ম্যাচ রেফারি হিসেবে কাজ করেছেন। এবারই প্রথমবারের মত দু’টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যকার ওয়ানডে ম্যাচে দায়িত্ব পালন করবেন, সেটাও আবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

রাহুল মনে করেন, আইসিসি এই যে তার ওপর আস্থা রেখেছে, এটা তার জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া, ‘আমি আগে আইসিসির কিছু ম্যাচে ম্যাচ রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কয়েকটা ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনালেও দায়িত্বে ছিলাম। তবে কোনো টেস্ট প্লেয়িং টিমের ওয়ানডে এই প্রথম হবে। দেখুন, আমি নিজে নানা কারণে টেস্ট খেলতে পারিনি। ওটা ছিলো আমার চূড়ান্ত স্বপ্ন। এখন টেস্ট পরিচালনার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করি। আইসিসি আমার কাজে সন্তুষ্ট হলে হয়তো সে দায়িত্বটাও পাবো একদিন।’

তাই হোক, রাহুলের হাত ধরে আমরাও পেয়ে যাই একজন টেস্ট ক্রিকেটের ম্যাচ রেফারি। আমাদের আরেকটা প্রাপ্তি হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link