নেট রান রেট ও ভ্যান ডার ডুসেন

দক্ষিণ আফ্রিকা এই বিশ্বকাপে ভালো খেলিয়াও পরাজিত। নেট রান রেট দক্ষিণ আফ্রিকার সেমি-ফাইনালে যাবার পথে সবচেয়ে বড়ো অন্তরায় হয়ে দেখা দিলো। বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দল ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা কিন্তু দেখালো, যে তাদের এই নতুন দলও পারে। ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হলেন রাসি ভ্যান ডার ডুসেন।

অনবদ্য খেলেছেন তিনি। কিন্তু খুব খুঁটিয়ে যদি দেখা যায়, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায়ের কিছুটা হলেও দায় কিন্তু ভ্যান ডার ডাসেনের ওপরেই বর্তায়। কেন এমন লিখলাম, তা নিয়ে বিস্তারে প্রবেশ করার আগে একটু ভূমিকা দেওয়া জরুরি। আগেও বহু জায়গায় লিখেছি, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রতিটা বল জরুরি।

বিশেষত এই ধরণের টুর্নামেন্টে। কারণ সেখানে স্বভাবতই নেট রান রেট একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক এই জায়গায় রাসি ভ্যান ডার ডাসেনের খেলা দুটি ইনিংস চরম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রথমটির কথা আগে বলি। বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুবাই তে। দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৪৪ তাড়া করতে নেমে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে রান তুলে নেয় ১৮.২ ওভারেই।

আপাতদৃষ্টিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বড়ো জয়। সেই জয়ের আলোতে অবশ্য রাসির করা ৫১ বলে ৪৩ রানের ইনিংস ঢাকা পরে গেছে। দ্বিতীয়টি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। মাত্র ৮৫ তাড়া করতে নেমে রাসি করেন ২৭ বলে ২২। দুটি ইনিংসের স্ট্রাইক-রেট যথাক্রমে ৮৪.৩১ ও ৮১.৪৮। অস্ট্রেলিয়া বাংলদেশের বিরুদ্ধে মাত্র ৬ ওভারে প্রায় সমপরিমাণ রান তুলে নেয়। অস্ট্রেলিয়া সেমি-ফাইনাল গেলো ১.২১ নেট রান রেট নিয়ে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সমসংখ্যক ম্যাচ জিতেও শেষ করলো ০.৭৩৯ নেট রান রেট নিয়ে। দুটি ম্যাচেই যদি রাসি ভ্যান ডার দাসেন নিদেনপক্ষে ১০০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করতেন তাহলেই দক্ষিণ আফ্রিকার নেট রান রেট গিয়ে দাঁড়াতো ০.৯১৮। ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলি। দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে রান তাড়া করেছে ১৮.২ ওভারে। রাসির রান ৫১ বলে ৪৩।

এবার ১০০ স্ট্রাইক রেটে খেললে (বাকি সব জিনিস কনস্ট্যান্ট ধরে) দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটি জিততো ১৭ ওভারেই। এবং তারপর বাংলাদেশ ম্যাচেও রাসি যদি ২৭ বলে ২২ না করে ২২ বলে ২২ করতেন, তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ জিতে নিতো ১২.৪ ওভারেই (১৩.৩ ওভারের পরিবর্তে)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া মিলিত ভাবে ২৩০ তাড়া করেছে ২২.৪ ওভারে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সেখানে এই দুই ম্যাচ মিলিয়ে ২২৭ তাড়া করতে নিয়েছে ৩১.৫ ওভার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে যদি ধরেই নি, ১৭ ওভারের কমে জেতা যেত না, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তো যেত। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১০ ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকা জিতলে তাদের নেট রান রেট দাঁড়াতো ১.১৬৬। ৯.১ ওভারে বাংলাদেশের রান তাড়া করলেই দক্ষিণ আফ্রিকা অস্ট্রেলিয়ার নেট রান রেট অতিক্রম করে ফেলতো। এবং এমনও নয় যে এই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেটা করা যেত না।

ছোট দল গুলোকে যেভাবে বড়ো দলগুলি এবার হিসাব কষে হারিয়েছে, তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার এই পদস্খলন আশ্চর্য্যই করে। আগে থেকে হিসাব না করার দরুন দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০৩ বিশ্বকাপে বিদায় নেয়। ২০২১ এ এসেও চিত্রটা খুব একটা বদলায় নি। যদিও ওখানে বাউচারের ওপর অনন্ত চাপ ছিল। এখানে ভ্যান ডার ডুসেন অনন্ত সুযোগ পেয়েও পারলেন না। তা সে যতই তিনি ৯৪ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link