নতুন কিউই ব্রিগেড

৫০ ওভারের শেষ দুটো বিশ্বকাপে রানার্স আপ দেশটা।

কুড়ি বিশের শেষ বিশ্বকাপেও শেষ চারে পৌঁছেছিলো তারা। এমনকি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও দুরন্ত পারফরম্যান্স ফাইনালে পৌঁছানোর দৌড়ে রেখেছে তাদের। সেই হ্যাডলির দেশ নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক দুর্দান্ত সব সাফল্যের কান্ডারী যদি উইলিয়ামসন, টেলর, গাপটিল, বোল্ট, সাউদি, ল্যাথামরা হন তাহলে তাঁদের ভবিষ্যতের হাল ধরার প্রজন্ম ও উঠে আসছে খুব দ্রুতই।

বলা যায় গোকুলে বাড়ছে তারা। কিউইদের এত সব সাফল্যের মাঝে সেই নতুন প্রজন্ম ও যেন ভবিষ্যতের জন্য মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে আর ভার নিয়েছে হ্যাডলির দেশের ক্রিকেটের চিরন্তন রোম্যান্সকে আরো বাড়িয়ে দেওয়ার। সেই তাঁদের নিয়েই আজ গল্প হোক।

  • টিম সেইফার্ট

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ছেড়ে আসা জুতোয় পা গলানোর জন্য কিউয়িদের সেরা বাজি ২৬ বছর বয়সী নর্দান ডিস্ট্রিক্টসের এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে সবচেয়ে দ্রুততম শতরান করেন সেইফার্ট মাত্র ৪০ বলে অকল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এরপর থেকেই জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুরন্ত পারফরমেন্স এই ছোট প্যাকেটে বড়ো ধামাকাওয়ালা সেইফার্টের।

ভারতের বিরুদ্ধে গত বছরের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৮৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও অপরাজিত ৮৪ রানের ইনিংস খেলে টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে প্রথম দশে উঠে এসেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। উইকেটের পেছনেও তাঁর বিশ্বস্ত হাত আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর দলে আরো গুরুত্ব বাড়াবে।

  • গ্লেন ফিলিপ্স

উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসাবে ঘরোয়া ক্রিকেটে অকল্যান্ডের হয়েছে নিয়মিত খেললেও নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে মূলত ব্যাটসম্যান হিসাবেই খেলেন দক্ষিণ আফ্রিকাজাত এই ফিলিপ্স। কিউইদের টি-টোয়েন্টি ব্রিগেডের মিডল অর্ডারে অন্যতম ভরসা ফিলিপ্স জাতীয় দলে প্রথম সুযোগ পান ঘরোয়া সুপার স্মাশ টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ স্কোরার হয়ে।

ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও পরিচিত মুখ ফিলিপ্স ইতিমধ্যে একটি মাত্র টেস্ট খেললেও তাঁর প্রতিভার আসল বিকাশ ঘটেছে ক্রিকেটের নবীনতম ফরম্যাটেই। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুরন্ত এক শতরান করে শিরোনামে আসা ২৪ বছরের তরুণ ফিলিপ্স ভবিষ্যতে কিউইদের হয়ে তিন ফরম্যাটেই মাত করবেন এ আশা করাই যায়।

  • টম ব্লান্ডেল

নিউজিলান্ডে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানদের রমরমার বাজারে আরেক দুরন্ত প্রতিভা হলেন ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত টম ব্লান্ডেল। সিফার্ট বা ফিলিপ্সরা যেমন সাদা বলের ক্রিকেটে ঝড় তোলার জন্য পরিচিতি ব্লান্ডেল হলেন এর বিপরীত মেরুর বাসিন্দা, জমাট টেকনিক এবং মাটিতে বল রেখে শট মারাতেই তিনি অত্যন্ত দক্ষ।

টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকেই শতরান হাঁকানো ব্লান্ডেল নিউজিল্যান্ড টেস্ট দলে মূলত: ওপেনারের ভূমিকা পালন করেন টম ল্যাথামের সাথে। ওয়াটলিং এর বদলি হিসাবে প্রথম জাতীয় দলে সুযোগ পেলেও উইকেটকিপারের দায়িত্ব সিনিয়র ওয়াটলিং এর হাতেই আবার ছেড়ে দিয়ে কিউইদের ওপেনিং এ জমাটি ডিফেন্স নিয়ে হাজির হয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটে ইতিমধ্যেই ৪০-এর মত গড় রেখে দুটো সেঞ্চুরি করা ব্লান্ডেল। নিউজিল্যান্ডের ওপেনিংয়ের সমস্যা মেটাতে ব্লান্ডেল তাই অন্যতম ভরসার মুখ এটা বলাই যায়।

  • ডেভন কনওয়ে

দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কনওয়েকে কিউই ক্রিকেটের ‘নেক্সট বিগ থিং’ বলা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্ধর্ষ সব পারফরমেন্স কনওয়েকে জাতীয় দলে সুযোগ করে দিয়েছে ২০২০-্এ শেষ লগ্নে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজে দারুন ব্যাটিং করে তাঁর প্রতিভার সাক্ষর রাখা কনওয়ে ঘরোয়া প্লাঙ্কেট শিল্ডে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে গতবছর হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ড এর ঘরোয়া ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই অর্থাৎ প্লাঙ্কেট শিল্ড, ফোর্ড ট্রফি ও সুপার স্মাশে গত মরসুমে সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন কনওয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটে চমৎকার সাফল্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও কতোটা ধরে রাখতে পারেন কনওয়ে সেটাই এখন দেখার।

  • লকি ফার্গুসন

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সমস্ত ফরম্যাটেই নিউজিল্যান্ড এর ফাস্ট বোলিং ব্রিগেড অন্যতম সেরা। সাউদি বোল্ট, হেনরি, ওয়েগনারদের সাথে যদি আরো কিছুটা অতিরিক্ত পেস যুক্ত হয় ক্ষতি কি? সেই অতিরিক্ত পেসের জন্য কিউয়ি ফাস্ট বোলিং ব্রিগেডের সেরা মুখ এখন লকি ফার্গুসনই। নিয়মিত ১৪৫-১৫০ কিমি গতিতে বল করা ফার্গুসনের ঝাঁঝালো বোলিং সময়ে সময়ে মনে করায় কিংবদন্তী শেন বন্ডকেও।

তীব্র গতিতে বল হাতে ছুটে আসা ফার্গুসন কিন্তু গতির হেরফের করে ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাতেও ওস্তাদ, তার সাথে টো ক্রাশিং ইয়র্কার বা স্লোয়ার বাউন্সারের মত অস্ত্র আরো ধারালো করে তুলেছে ৩৭টা একদিনের ম্যাচে ৬৯ উইকেট ও ১১ টি-টোয়েন্টিতে ২১ উইকেট পাওয়া লকি ফার্গুসনকে। চোট আঘাতকে দূরে সরিয়ে রেখে লকির এরকম দুরন্ত ফাস্ট বোলিং চলতে থাকলে কিউইদের বোলিং ব্রিগেড ভবিষ্যতে সুরক্ষিত হাতেই থাকবে।

  • কাইল জেমিসন

হ্যাডলির দেশতো বরাবরই দারুন দারুন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জন্ম দিয়ে এসেছে, সেই তালিকায় বর্তমানের নবীনতম সংযোজন ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা কাইল জেমিসন। জেকব ওরামের পরে কিন্তু সেভাবে কোনো ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডারই নিয়মিত সমস্ত ফরম্যাটে ফুল ফোটাতে পারেননি, সেই জায়গাটা পূরণ করার করার জন্য কিউয়ি ক্রিকেট সার্কিটে ‘কিল্লা’ নামে পরিচিত জেমিসনকেই কিন্তু বাজি ধরা হচ্ছে।

ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি সুপার স্মাশে রেকর্ড বোলিং ফিগার (৭ রানে ৬ উইকেট) এর পরে জাতীয় দলের জন্য শিকে ছেঁড়ে জেমিসনের। প্রথমে সুযোগ আসে কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে, আর মাঠে নেমেই বাজিমাত। ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে ব্যাটে বলে চমৎকার পারফরমেন্স এনে দেয় ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি। এরপর সুযোগ এসে যায় সাদা বলের ক্রিকেটেও। ২০২০তে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ না হলেও আগামীদিনের তারকা হওয়ার সব মশলাই মজুত জেমিসনের মধ্যে।

এছাড়া ডানহাতি ওপেনিং ব্যাটসম্যান উইল ইয়ং, বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মার্ক চাপম্যান, যিনি হংকং এর হয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন, বাঁহাতি স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার রচীন রবীন্দ্র কিংবা পেস বোলিং অলরাউন্ডার স্কট কুগলেইনরাও আগামী দিনে কিউয়ি ক্রিকেটে সোনা ফলানোর জন্য তৈরী হচ্ছেন। হ্যাডলির দেশে এই নবীনবরণের মঞ্চে উইলিয়ামসনদের উত্তরসূরীরা বিশ্বক্রিকেটকে আরো চমক দেওয়ারই অপেক্ষায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link