ইতিহাস যাত্রার তরুণ কুশীলব

লোকে শেষটা বেশি মনে রাখে। সেটাই স্বাভাবিক। শেষের নায়করাই বেশি আলোচনার খোড়াক জোগাবে। তবে আমরা একটু সময়ের জন্য শুরুতে ফিরে যাই।

লোকে শেষটা বেশি মনে রাখে। সেটাই স্বাভাবিক। শেষের নায়করাই বেশি আলোচনার খোড়াক জোগাবে। তবে আমরা একটু সময়ের জন্য শুরুতে ফিরে যাই।

প্রথম দিন, প্রথম উইকেট। টস জিতে বোলিংয়ে নামার পর বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত ব্রেক থ্রু এনে দেন শরিফুল ইসলাম।

সেট কার উইকেট? বাংলাদেশের বিপক্ষে আগে ৪ টেস্ট খেলে যার ছিল ২ সেঞ্চুরি, ১৭৭ ও ১৬৮। আরও ছিল ৬৮ ও অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংস। কেন উইলিয়ামসন না থাকায় এই দলের অধিনায়কই শুধু নন, দলের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় ভরসাও। গোছানো ব্যাটসম্যান, লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন। সেই টম ল্যাথামের মহামূল্য উইকেট।

পরে পুরনো বলে রস টেইলের উইকেট। দ্বিতীয় নতুন বলে দারুণ সেট আপ করে রাচিন রবীন্দ্রর উইকেট। প্রথম ইনিংসে নিউ জিল্যান্ডকে ৪০০-৪৫০ করতে না দেওয়া ছিল টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের প্রথম ভিত। সেই ভিত্তি রচনা যারা করেছেন, তাদের অগ্রভাগে ছিলেন শরিফুল।

এটি তাঁর মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট। চোট কাটিয়ে দলে ফিরেছেন। এসব কারণেও বাড়তি পয়েন্ট পেতে পারেন। তবে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট তার উইকেট শিকার বা ফেরার টেস্ট বলেই নয়, তার স্কিল, মানসিকতা ও শরীরী ভাষার কারণে।

শরিফুল দ্রুত উন্নতি করছেন। শুভমেন্ট আদায় করতে শিখছেন। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বল ভেতরে আনাও টুকটাক শুরু করেছেন। কন্ট্রোল ক্রমে ভালো হচ্ছে। সবচেয়ে নজরকাড়া ব্যাপার, তার বোধ। উইকেট পড়তে পারা, ম্যাচ পরিস্থিতি পড়তে পারা, প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান পড়তে পারা এবং সেই অনুযায়ী তাৎক্ষনিক পরিকল্পনা বদলে বোলিং করা, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটে বিরল। মাথা খাটাতে পারেন। তার এই বয়সে তো আরও দারুণ ব্যাপার। এটা ধরে রাখতে পারলে ও ফিট থাকতে পারলে তিনি অনেক দূর যাবেন।

শরীরী ভাষায় বারুদ তার বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই দেখা গেছে। জাতীয় দলে তা আরও স্ফুলিঙ্গ ছড়াচ্ছে। বয়সের সঙ্গে শরীর ও পেশি আরও পোক্ত হলে, ভালো ডায়েট পেলে, মাঠের বাইরে ডিসিপ্লিনড হলে ও মাঠে ঘাম ঝরালে, তার গতিও বাড়ার সুযোগ আছে।

পরিশ্রম আর ফোকাস ঠিক থাকলে তিনি বড় সম্পদ হতে পারেন।

ভিত গড়ার আরেক কারিগর মাহমুদুল হাসান জয়। তার টেকনিক ও স্কিল নিয়ে সেদিনই ভিডিওতে বলেছি।

টেম্পারামেন্টের কথাও বলেছি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই নিউ জিল্যান্ডের মতো জায়গায় এমন পেস আক্রমণের সামনে প্রায় ৫ ঘণ্টা ব্যাট করেছেন, ২২৮ বল খেলেছেন, এটা অভাবনীয় একটা ব্যাপার। কিউই পেসারদের ক্লান্ত করে ছেড়েছেন তিনি, যা কাজে লেগেছে অন্যদের।

টেকনিক ও অন্যান্য কিছু নিয়ে কাজ করার সুযোগ সামনে আছে। টেম্পারামেন্ট সময়ের সঙ্গে আরও ভালো হওয়া উচিত। দুর্ভাগ্য, তার হাতে তিনটি সেলাই পড়েছে। তবে টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে তার ক্যারিয়ার সেলাই হয়ে যাক, এই আশা থাকবে।

তার ক্ষেত্রেও একই কথা, পরিশ্রম ও ফোকাস থাকলে, স্বস্তা কিছুতে মজে না গেলে, বড় সম্পদ হতে পারেন।

  • ভিত গড়ায় অনারেবল মেনশন

সাদমান ইসলাম প্রথম ইনিংসে ২২ রান করেছেন মাত্র। তবে ৫৫ বল উইকেটে ছিলেন, দারুণ সলিড শুরু করেছেন, জয়ের সঙ্গে ১৮ ওভার উইকেটে কাটিয়ে কিউই পেসারদের প্রথম ধাক্কা সামলে বল পুরনো করে অন্যদের জন্য কাজ সহজ করে দিয়েছেন। এই ছোট অবদানও আসলে বেশ বড়।

তার ব্যাটিং নিয়েও আসলে অনেক কাজ করার আছে। বিশেষ করে মুভিং বলে। তবে আপাতত, এই দলে তিনি সিনিয়র ওপেনার। পরের টেস্টে ভালো ইনিংস চাওয়া থাকবে তার কাছে।

এবং তাসকিন আহমেদ, যথারীতি তার বোলিং কতটা ভালো ছিল, তা ফুটে উঠছে না বোলিং ফিগারে। ৭৭ রানে উইকেট নেই, অথচ কী দারুণ বোলিংই না করেছেন! বিশেষ করে নতুন বলে। তিনিও জয়ের ভিত গড়ার নায়ক। অন্তত দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা পুরস্কার পেয়েছেন ৩টা উইকেটে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...