এক দীর্ঘশ্বাসের প্রতিশব্দ রোকন

আর্ন্তজাতিক ম্যাচে বলার মতো কোনো সাফল্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশে বিদেশি কোনো কোচ এলেই তাঁর প্রথম পছন্দ হয়ে যান এই রোকন। আসলে পছন্দ না হয়ে উপায়ও ছিলো না। রোকন সাধারণ একজন ব্যাটসম্যান ছিলেন না। স্টাইল, সুন্দর ব্যাটিং আর আভিজাত্য দিয়ে মন কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। বলা যায়, বাংলাদেশের এক অন্তত প্রেমের নাম এই রোকন। সেই সাথে অনন্ত এক আক্ষেপের নামও বটে।

একসময় বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় রহস্য ছিলেন আল শাহরিয়ার রোকন।

আর্ন্তজাতিক ম্যাচে বলার মতো কোনো সাফল্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশে বিদেশি কোনো কোচ এলেই তার প্রথম পছন্দ হয়ে যান এই রোকন। আসলে পছন্দ না হয়ে উপায়ও ছিলো না। রোকন সাধারণ একজন ব্যাটসম্যান ছিলেন না। স্টাইল, সুন্দর ব্যাটিং আর আভিজাত্য দিয়ে মন কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। বলা যায়, বাংলাদেশের এক অন্তত প্রেমের নাম এই রোকন। সেই সাথে অনন্ত এক আক্ষেপের নামও বটে।

রোকনের নিজেকে চেনানোর শুরু সেই ১৯৯৭ সাল থেকে।

বাংলাদেশ তখনো টেস্ট স্ট্যাটাস পায়নি, ১৯৯৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন আল শাহরিয়ার রোকন। ওটাই ছিল প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি কোন ক্রিকেটারের করা সেঞ্চুরি।

আল শাহরিয়ার রোকন ছিলেন অভিষেক টেস্ট ম্যাচের বাংলাদেশ দলেও। যদিও ঐ ম্যাচে ১২ আর ৬ রানের দুই ইনিংসে মনে রাখার মতো তেমন কিছুই করতে পারেননি। অভিষেক টেস্ট ইনিংসের মতো তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও দীর্ঘ হয়নি তেমন।

তুমুল প্রতিভা নিয়ে এসেও বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি বিশ্ব ক্রিকেটে এমন উদাহরণ আছে ভুরি ভুরি। আল শাহরিয়ার রোকন সেই অনেকেরই একজন। ব্যক্তিজীবনে ‘কেয়ার-ফ্রি’ মানসিকতার অধিকারী আল শাহরিয়ারের জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজধানী শহর ঢাকায়। ১৯৯৯ সালের ১৬ মার্চ পাকিস্তানের বিপক্ষে একদিনের ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে আল শাহরিয়ারের।

১৫ টি সাদা পোশাকের ম্যাচ আর ২৯ টি একদিনের ক্রিকেট খেলা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিনি ব্যাট হাতে রান করেছিলেন যথাক্রমে ৬৮৩ ও ৩৭৪। ৯০ দশকের বাংলাদেশ ক্রিকেটে মোহাম্মদ আশরাফুলের মতো তাকেও মনে করা হতো অত্যন্ত প্রতিভাবান একজন ক্রিকেটার। ‘প্রতিভাবান’ এই বিবেচনায় ব্যাটে রানখরা থাকার পরও নির্বাচকেরা তাকে সুযোগ দিয়ে গেছেন। কিন্তু প্রতিভার বিচারে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তার সামর্থ্যের প্রমাণ তিনি রাখতে পারেননি কখনোই।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিষ্প্রভ থাকলেও এই প্রতিভাবান ক্রিকেটার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে গেছেন দাপটের সঙ্গে, রেখেছেন প্রতিভার সাক্ষর। ৬৮ টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলা শাহরিয়ার রোকনের ব্যাটে এসেছে ৩৫৯৬ রান। ঐ সময়ের বাংলাদেশ ক্রিকেট বিবেচনায় যাকে মন্দ বলা চলেনা।

প্রতিভাবান হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটিং-অর্ডার নিয়ে তাকে ভুগতে হয়েছিল বেশ। ব্যাটিংয়ে তার সেরা অবস্থান নিয়েও ছিল বেশ ধুম্রজাল। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেললেও, অনেকের মতো তিনি কার্যকরী ছিলেন মিডল অর্ডারেও। দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রেকর্ড গড়ার অংশীদারও ছিলেন তিনি।

টানা ফর্মহীনতার পর আর ফর্মে ফেরা হয়নি। ২০০৩ বিশ্বকাপ ও বিশ্বকাপ পরবর্তী অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ব্যর্থতার পরপরই যে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লেন, আর ফেরা হয়নি লাল সবুজের জার্সি গায়ে। মাঝখানে ঘরোয়া ক্রিকেটটা খেলে গেছেন আরো কয়েক বছর। এরপর পরিবার নিয়ে পাড়ি জমান তাসমান সাগরের ওপারে নিউজিল্যান্ডে। স্থানীয় ক্লাব হ্যাভলক নর্থের হয়ে খেলেছিলেন। বর্তমানে আছেন দলটির প্রশিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে।

রোকন হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে আর নেই। কিন্তু এখনও নব্বইয়ের দর্শকদের চোখে লেগে আছেন রোকন। এখনও চোক বুজলে সেই কাভার ড্রাইভ ভেসে আসে। সাথে ভেসে আসে একটা দীর্ঘশ্বাস।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...