বাইশ গজের কাছাকাছি জায়গায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়েরা। মাঠে এলেন রস টেইলর। নিজের হেলমেটটা খুলে প্রতিপক্ষের সম্ভাষণ গ্রহণ করলেন তিনি। এই দৃশ্যে চোখ জুড়ায়নি এমন ক্রিকেট ভক্ত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রস টেইলরের বিদায় বেলায় তাঁকে সম্মান জানিয়ে এমন দৃশ্যের মঞ্চায়ন করেছিলেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা।
টেইলর দীর্ঘদিন ধরে খেলেছেন ক্রিকেট। কিংবদন্তি হিসেবেই তিনি সমাদৃত। তাঁকে অভিবাদন জানানোই স্বাভাবিক। দৈর্ঘ্য় বিচারে তাঁর ক্যারিয়ারটা বেশ বড়ই বলা চলে। পনেরো বছর ধরে তিনি খেলেছেন ক্রিকেট। তবে এমন বহু ব্ল্যাকক্যাপ খেলোয়াড়রা রয়েছেন যারা সময়ের আগেই বিদায় নিয়েছিলেন ক্রিকেট থেকে। এই তালিকায় রয়েছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালামও।
- গ্রেগ লাভরিজ
লেগ স্পিনারদের বেশ একটা দাপট চলছে বিশ্ব ক্রিকেটে। সেই দাপটের অংশ হতে পারতেন গ্রেগ লাভরিজ। কিংবা দিতে পারতেন নেতৃত্ব। মাত্র বিশ বছর বয়সেই তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন জাতীয় দলে। ব্যাটিং করার সময় হাতের চোটে কারণে তাঁর আর বল করা হয়নি।
এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশকিছুদিন ক্রিকেট খেলেন। পরিশেষে মাত্র ২০ বছর বয়সেই ক্রিকেটকে বিদায় জানান। জীবনের একটা পর্যায়ে নিউজিল্যান্ডে সেরা ধনীও হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তবে তা ক্রিকেট খেলে নয়।
- রবি হার্ট
২০০২-০৩ এমন সময়ে নিউজিল্যান্ড দলের প্রথম চয়েজ উইকেট কিপার ব্যাটার ছিলেন রবি হার্ট। তিনি সেই সময়ে দলের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। ১১টি টেস্ট ম্যাচ খেলার পাশপাশি দুইটি ওয়ানডে ম্যাচেও ব্ল্যাকক্যাপসদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন হার্ট। সেই সময়ে প্রায় ১৬.২ গড়ে রান করছিলেন ২৬০।
ভালই যাচ্ছিলো তাঁর ক্যারিয়ার। তবে মাত্র ২৯ বছর বয়সেই ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টেনে নেন রবি হার্ট। ভিন্ন এক পেশায় যুক্ত হয়ে যান তিনি। উকিল হিসেবে বেশ কিছু ফার্মের সাথে যুক্ত থাকেন। পরবর্তীতে নিজেই একটি কন্সালটেন্সি ফার্ম খুলে বসেন রবি হার্ট।
- কোরি অ্যান্ডারসন
বেশ সম্ভাবনা জাগিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ করেছিলেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার কোরি অ্যান্ডারসন। প্রতিস্রুতির প্রতিফলনও ঘটাচ্ছিলেন তিনি। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার আগে খারাপ একটা সময়ের মধ্য দিয়ে জাচ্ছিলেন অ্যান্ডারসন। ইনজুরি যেন তাঁকে আষ্টেপৃষ্টে ধরেছিলো।
এর সাথে উভয় সংকট হিসেবে উদয় হয় অফ ফর্মের। অগ্যতা তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে বাধ্য হন। মাত্র ৩০ বছর বয়সেই তিনি নিজের ব্যাটটা তুলে রাখেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্যভিত্তিক একটি টি-টোয়েন্টি লিগের সাথে যুক্ত হন। ধারণা করা হয় অদূর ভবিষ্যতে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্য জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেটে দেখা যেতে পারে।
- শেন বন্ড
বর্তমানের নিউজিল্যান্ডে বোলিং আক্রমণকে তাঁদের ইতিহাস সেরা বোলিং আক্রমণ হিসেবেই গণ্য করা হয় বিশ্ব ক্রিকেট থেকে শুরু করে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট অঙ্গনে। তবে দূর্দান্ত সব পেসারদের আগমন যে আর আগে ঘটেনি দেশটির ক্রিকেটে তা কিন্তু নয়। শেন বন্ড সেই সকল দূর্দান্ত পেস বোলারদের একজন।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তাঁর নামে পাশে রয়েছে ২০০ এর বেশি উইকেট। কিন্তু ক্যারিয়ারের বহুবার হানা দিয়েছে ইনজুরি। ক্লান্তশ্রান্ত বন্ড শেষমেশ মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই খেলোয়াড়ী জীবনকে বিদায় জানান। পরবর্তীতে তিনি ক্রিকেট কোচিং এর সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন।
- ব্রেন্ডন ম্যাককালাম
মারকুটে ব্যাটার হিসেবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ সমাদৃত ছিলেন নিউজিল্যান্ডের উইকেট কিপার ব্যাটার ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই তিনি সবধরণের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন। ভক্তদের অভিমত হয়ত আরো কিছুদিন খেলে যেতে পারতেন তিনি। ২০১৫ তে দলকে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি। ঠিক তাঁর বছর খানেক বাদেই আন্তর্জাতিক জার্সিটা সাজিয়ে রেখে দেন ম্যাককালাম। ফর্মে তুঙ্গে এবং বয়স খুব বেশি না হওয়ার পর তাঁর এমন অবসর হতভম্ব করেছিল বিশ্বক্রিকেটকে।