প্রথম পর্বের শেষটা ক্যামেরুনের বিপক্ষে হার দিয়ে হলেও নকআউট পর্বে পুরনো রূপে ফিরেছে ব্রাজিল। দক্ষিণ কোরিয়াকে রীতিমতো ছেলেখেলা করে ৪-১ গোলে হারিয়ে শেষ আটের টিকিট কেটেছে সেলেসাওরা। সব শংকা পেরিয়ে এদিন অ্যাংকেলের চোট সারিয়ে মাঠে ফিরেছেন নেইমার। ম্যাচশেষে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার জানিয়েছিলেন চোটে পড়ার সময়ের ভয় এবং শংকার কথা।
এক সাক্ষাৎকারে নেইমার জানান সার্বিয়ার বিপক্ষে চোটে পড়ার পর সারারাত ঘুমাতে পারেননি। বিশ্বকাপে আর মাঠে নামতে না পারার শংকা তাঁকে ঘিরে ধরেছিল। পরিবারের সদস্যদের ভাষ্যমতে সেদিন সারারাত কেঁদেছিলেন নেইমার।
নেইমার বলেন, ‘সত্যি বলতে ইনজুরি নিয়ে আমার মনে ভীষণ ভয় ছিল। আমি বেশ ভালো একটা ক্লাব মৌসুম কাটিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলাম, প্রথম ম্যাচটাও ভালো কেটেছিলো। কিন্তু এরকম সময়ে অ্যাংকেলের ইনজুরি মোটেই ভালো কিছু ছিল না। আমার পরিবারের লোকেরা জানে আমি সারারাত কেঁদেছিলাম, ভাগ্যিস শেষপর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ঘটেছে। আমার পরিশ্রমের প্রতিদান পেয়েছি বলতে পারেন। যেদিন ফিজিওথেরাপিস্টের সেশন থাকতো, সেদিনই কেবল এগারোটায় বিছানা ছাড়তাম। অন্যান্য দিলগুলোতে ভোর পাঁচটায় আমি ঘুম থেকে উঠে যেতাম। সকল পরিশ্রম সার্থক হবে যদি আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আমি যখন ইনজুরিতে পড়ি তখন হাজারো চিন্তা মাথায় জেঁকে বসেছিল। আমি নিজের উপর বিশ্বাস হারাতে শুরু করেছিলাম। তবে আমার সতীর্থ, কোচিং স্টাফ এবং পরিবারের সদস্যরা সবসময় সমর্থন জুগিয়েছে। আমাকে ইতিবাচক ভাবতে সাহায্য করেছে। আমি প্রতিদিন হাজারো উদ্দীপনামূলক মেসেজ পেয়েছি। সবাইকে ধন্যবাদ যারা আমার জন্য প্রার্থনা করেছেন, আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নেই আমার। এখন আমি জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে যাবো। আমি কাতারে একটা মিশন নিয়েই এসেছিল।’
বিশ্বকাপ এবং নেইমার যেন একে অন্যের প্রতিচ্ছবি। কোনো বিশ্বকাপেই পুরোপুরি ফিট হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করতে পারেননি। ২০১৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টারে হুয়ান জুনিগার ভয়াভ ট্যাকলে ক্যারিয়ারটাই শেষ হয়ে যেতে বসেছিল। ২০১৮ বিশ্বকাপেও পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না। ফলাফলস্বরূপ বেলজিয়ামের কাছে হেরে শেষ আট থেকেই বিদায় নেয় ব্রাজিল। এবারের বিশ্বকাপেও পুরনো স্মৃতি ফিরে এসেছিল সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে চোট পাবার পর।
গ্রুপপর্বের দুই ম্যাচেই তাঁর অভাব বোধ করেছে ব্রাজিল, ক্যামেরুনের বিপক্ষে তো হেরেই বসে সেলেসাওরা। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ফিরেছেন নেইমার, ছন্দে ফিরেছে ব্রাজিলও। প্রথমার্ধেই কোরিয়ার জালে চারবার বল পাঠিয়ে ম্যাচের চিত্রনাট্য গড়ে দিয়েছেন নেইমার-ভিনিসিয়াসরা।
১৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে কোরিয়ান গোলরক্ষক সেয়ুং জিউ কিমকে পরাস্ত করে এবারের বিশ্বকাপে গোলের খাতা খোলেন নেইমার। এ নিয়ে তিনটি ভিন্ন বিশ্বকাপে মাঠে নেমে সাত গোল হয়ে গেল ব্রাজিলিয়ান এই সুপারস্টারের। ব্রাজিলের হয়ে বাকি তিনটি গোল করেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র, লুকাস পাকুয়েতা এবং রিচার্লিসন।
কোয়ার্টার ফাইনালে গতবারের রানার্সআপ লুকা মদরিচের ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। ক্রোয়েশিয়াকে শেষ আটে উঠতে অবশ্য গলদঘর্ম পোহাতে রয়েছে, নির্ধারিত সময়ে জাপানের সাথে ১-১ সমতায় ম্যাচ শেষ করে ক্রোয়াটরা। এরপর টাইব্রেকারে গোলরক্ষক লিভকোভিচের বীরত্বে শেষ আটের টিকিট কাটে তাঁরা।
তবে সেমিতে উঠার লড়াইতে ব্রাজিলের বিপক্ষে মরণকামড় দিতে চাইবে ক্রোয়াটরা। মূলত লড়াইটা হবে ব্রাজিলের আক্রমণভাগ বনাম ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণের। নেইমার-রিচার্লিসনদের সামলাতে মুখিয়ে থাকবেন তর্কসাপেক্ষে টুর্নামেন্টের সেরা ডিফেন্ডার গভারদিওল এবং দ্বিতীয় রাউন্ডফে তিনটি পেনাল্টি ঠেকানো লিভাকোভিচ। সবমিলিয়ে এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে জমজমাট এক লড়াইয়ের অপেক্ষায় থাকবেন ফুটবলপ্রেমীরা।