উইকেটের পিছনে মুশফিকুর রহিমের সামর্থ্য ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে নিয়মিতই। দীর্ঘ দিন হলো দায়িত্ব পালন করলেও উইকেটের পেছনে তাঁর গ্লাভস জোড়া এখনও আস্থা অর্জন করতে পারেনি সেই ভাবে। শেষ কয়েক বছর হলো গ্লাভস হাতে মুশফিকের ভূমিকা নিয়ে জোরালো আলোচনা সমালোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত তা ঢাকা পড়ে গেছে তাঁর ব্যাটিং কার্যকরিতায়।
গত বিশ্বকাপে কেন উইলিয়ামসনকে রান আউট করার সহজ সুযোগ পেয়েও কিপিংয়ের মৌলিক ভুলে তা মিস করেছিলেন মুশফিক। ঐ ম্যাচ হারের পর থেকেই তাঁর কিপিং নিয়ে সমালোচনার পালে হাওয়া লেগেছে দ্বিগুণ গতিতে। গতকাল সেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জেমি নিশামের সহজ ক্যাচ ছাড়ার পর কিপিং নিয়ে প্রশ্নটা উঠেছে আবারো।
মুশফিকের ব্যাট বাংলাদেশ দলকে অজস্রবার নির্ভরতা দিলেও উইকেটের পেছনে প্রচুর ভুল করে সহজ ক্যাচ, সহজ স্টাম্পিং মিস করে ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা নস্ট করে সমালোচনার জেরে মুশফিকের কিপিং আতশি কাঁচের নিচে বারবার আসলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচের পর ম্যাচ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনিই।
পরিসংখ্যান হয়তো মুশফিকের পাশে দাঁড়িয়ে বলবে দেশের সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষক তিনি। তবে পরিসংখ্যান অনেক সময়ই মাঠের পরিস্থিতি বোঝাতে পারেনা। মূলত উইকেটের পেছনে নানা বিতর্কের কারণে বোর্ডও অনেক বার চেয়েছে গ্লাভস ছেড়ে শুধু ব্যাটিংয়েই মনযোগ দিক মুশফিক।
বোর্ডের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন পরিস্তিতিতে কোচ, অধিনায়ক বা সংশ্লিষ্টরাও মুশফিকুর রহিমের উইকেটকিপিং নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু প্রবল সমালোচনা হলেও তাঁর কাছ থেকে কিপিং গ্লাভস কেড়ে নিতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। অনেক সময় দলের ব্যালান্সের স্বার্থে বা সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে মূল্যায়ন করতে গিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট আপোস করেছে মুশফিকের সাথে।
মুশফিকের বিকল্প হিসাবে নুরুল হাসান সোহান ও লিটন দাসকেই ভাবা হয় এখন। এই দুজনের ভিতর উইকেটকিপার হিসাবে সোহান এগিয়ে থাকলেও ব্যাটসম্যান হিসাবে এগিয়ে রয়েছেন লিটন দাস। দুজনের কেউই কমপ্লিট প্যাকেজ নয়। মূলত মুশফিকের বিকল্প হিসেবে ‘একের ভেতর দুই’ খুঁজতে গিয়েই মুশফিকুর রহিমকে ম্যাচের পর ম্যাচ উইকেটের পিছনে রাখছে সংশ্লিষ্টরা।
বোর্ড সব সময় চেয়েছে মুশফিকের বিকল্পকে হতে হবে চিতার মতো ক্ষিপ্র উইকেটরক্ষক এবং ব্যাটসম্যান হিসাবে হতে হবে নির্ভরতা ও আস্থার প্রতীক। আর এই দুইয়ের সমীকরণ মেলাতে গিয়েই মুশফিকের কাছে থেকে জাতীয় দলের উইকেট কিপারের জায়গাটা এখনো দখল করতে পারেনি কেউ।
কিন্তু এটাতে কোন সন্দেহ নেই ভবিষৎয়ের নুরুল হাসান সোহান বা লিটন দাসের ভিতর থেকেই কেউ দলে স্থায়ী হবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই অপেক্ষাটা কতদিন? মুশফিক যার কাছে থেকে গ্লাভস কেড়ে নিয়েছিলেন সেই খালেদ মাসুদ পাইলট খেলা ৭১-কে জানিয়েছেন অপেক্ষা না করে এখনই মুশফিককে শুধু ব্যাটসম্যান হিসাবে খেলিয়ে উইকেটের পিছনে দলের সেরা অপশনকে দাঁড় করানো উচিত।
তিনি বলেন, ‘মুশফিক তো ব্যাটসম্যান হিসাবে অনেক ভালো। যেটা হয়েছে আমার মনে হয় ম্যানেজমেন্টে যারা আছেন নির্বাচক, কোচ, অধিনায়ক তাদেরই সিদ্বান্ত নেওয়া উচিত কে কিপিং করবে। আমার মনে হয় যারা টিমের কাছে থেকে কাজ করছে তাদেরই উচিত ভালো টিম বানানো, প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্ট শক্তিশালী বানানো। কোন জায়গাতে কাকে ব্যবহার করা উচিত সেটা তাদের দায়িত্ব। শুধু ব্যাটসম্যান মুশফিক খেললে আমার মনে হয় ভালো।’
তিনি আরো বলেন, ‘সোহান তো বাংলাদেশের সেরা উইকেটরক্ষক। কিন্তু নির্বাচকদের রাডারে তো সোহান নেই। আমার মনে হয় টিমের ভিতর যে সেরা তাকে দিয়েই উইকেটকিপিং করানো উচিত। আমি কাউকে ছোট করছি না। মুশফিকের অনেক কন্ট্রিবিউশন আছে কিপার হিসাবে। কিন্তু টিমে সেরা কে? এখন টিমে যদি সেরা একজন ওপেনার থাকে তাহলে তাকে দিয়ে ওপেন করাতে হবে। টিমে যদি জেনুইন ভালো পেসার থাকে। তাকে দিয়ে তো নতুন বলে পেস বলই করাবেন। আমার মনে হয় উইকেটকিপিং ও সেরাকে দিয়েই করানো উচিত। এখন টিমে লিটন দাস আছে। লিটনের অ্যাবিলিটি ভালো, ইয়াং।’
মুশফিকুর রহিম অনেক সময়ই অযুহাত হিসাবে দাঁড় করিয়েছেন উইকেটকিপিং করলে তাঁর কাছে ব্যাটিং করা সহজ হয়। কিন্তু জাতীয় দলের সাবেক সফল উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান খালেদ মাসুদ পাইলট জানিয়েছে এগুলো মুশফিক ইমোশনাল হয়ে বলে; ম্যানেজমেন্টের উচিত মুশফিককে বোঝানো।
পাইলট বলেন, ‘আমার মনে হয় না। এটা টিম ম্যানেজমেন্টের তাকে বোঝানো উচিত যে আমরা তোমাকে ব্যাটসম্যান হিসাবে চাচ্ছি। আমার মনে হয় যে যুক্তিটা সেটা ইমোশনাল ভাবে বলে, তার মাথার ভিতর ওটা কাজ করে। ম্যানেজমেন্টকে বোঝাতে হবে যে আমরা সব জায়গাতে টিমের সেরাকে ব্যবহার করতে চাই। তোমার কাছে থেকে ব্যাটিংয়ে রান চাই। সে অনেক কন্ট্রিবিউশন করেছে বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু যেহেতু অপশন আছে, ওখানে লিটন দাসকে দিলে ভালো হয়।’
উদাহরণ দিয়ে পাইলট আরো বলেন, ‘এখন সাকিব ব্যাটিং বোলিং দুটোই করে। সে যদি বোলিং খারাপ করে তাহলে তাকে বলা যেতেই পারে যে আর তোমাকে উপরে বোলিং করাবো না, তোমাকে ব্যাটসম্যান হিসাবে চিন্তা করতেছি। যে যেটা ভালো পারে তাকে সেখানেই ব্যবহার করা উচিত। এখন তামিম দলের সেরা ব্যাটসম্যান, তামিম যদি বলে আমি বোলিং ছাড়া ব্যাটিং করবো না, আপনি কি তাকে দিয়ে বোলিং করাবেন।’