চোখের প্রশান্তিদায়ক এক লড়াই ছিল ট্রেন্ট ব্রিজে। অ্যালান ডোনাল্ড তাঁর সেরাটা দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তা বুঝে মাইকেল আথারটন অ্যালানের সব প্রচেষ্টা যেন এক জোঁকের মতো করে শুষে নিচ্ছিলেন।
অ্যালান দারুণ গতিতে বল করে যাচ্ছিলেন। আমার কাছে তাঁর ছুটে যাওয়া এবং ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজের কাছে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা তখন বিপাকে যখন অ্যালান এলেন দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে। সেটা ছিল আমার দেখা অ্যালানের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলিং স্পেল। আমরা তাঁকে ‘ওয়াইট লাইটনিং’ বা ‘সাদা বিদ্যুৎ’ বলে ডাকতাম এবং সেদিন তিনি সত্যিকার অর্থেই আলোর গতিতে বল করেছিলেন।
সে অ্যাথারটনকে আউট করার জন্য সব রকমের পন্থা অবলম্বন করেছিল। সেটা আমার দেখা সেরাদের সেরা বোলিং পারফর্মেন্স। অ্যালানের সেই দ্রুত দৌড়ের গতি এবং আথারটনের পালটা লড়াই করে যাওয়া, বেশ ক’বার আঘাত পাওয়ার পরও। এসবকিছু আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না।
অ্যালান যখন সেই বিখ্যাত স্পেলটি করতে এলো আমি তখন সাজঘরে ছিলাম। সেটা দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ইংল্যান্ডে আমার প্রথম ট্যুর ছিল। মাখায়া এনটিনি এবং আমাকে সেবার টেস্ট দলে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সবার সাধনাই থাকে তাঁর ক্যারিয়ারে অন্তত একটি হলেও টেস্ট ম্যাচে অংশ নেওয়া। আমি মনে করি আমি ভুল সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে এসেছিলাম নয়ত আমি আরো বেশ কিছু টেস্ট ম্যাচে অংশ নিতে পারতাম।
আমি সবসময় অ্যালানকে অনুসরণ করার চেষ্টা করতাম। কারণ আমাদের দুইজনের ছিলাম একই গোত্রের। তাছাড়া আমরা একই টেকনিকাল স্কুলে পড়াশোনা করেছি। আমি যখন দক্ষিণ আফ্রিকা দলে সুযোগ পাই, তখন থেকেই অ্যালান আমাকে তাঁর ছায়ায় রেখেছিলেন। সে সবসময় একজন বড় ভাইয়ের মতো আমাকে উপদেশ দিতেন, আমার কি করা উচিৎ কি করা উচিৎ না এসব কিছু। সত্যিকার অর্থে সে আমার রোল মডেল ছিল। আমি সবসময় তাঁর আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম উপদেশ, বোলিং টোটকা পাবার আশায়। এমনকি ইংল্যান্ডে থাকা অবস্থায় আমার ক্রিকেট কিটব্যাগ গোছাতেও তিনি আমাকে সহয়তা করেছিলেন।
এখনও তাঁর মতো কিংবদন্তির সাথে দেখা হওয়া, তাঁর সাথে আলাপ করতে পারাটা আমার কাছে স্বর্ণের মতো মূল্যবান মনে হয়। শেষ তাঁর সাথে আমার দেখা হয়েছিল দুই বছর আগে কেপ টাউনে।
একজন সাবেক ফাস্ট বোলার হিসেবে আমার কাছে অ্যালেনের সেই ক্ষিপ্র গতিতে ছুঁটে গিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে বল ছোঁড়ার চাইতে কোন কিছুই শ্রেষ্ঠ মনে হয় না। তাছাড়া অ্যাথারটনের বিপক্ষে করা অ্যালানের সেই স্পেলটা একজন ক্রিকেট ভক্তের চোখের ক্ষুধা মেটানোর অমৃত সুধা। দু’জন খেলোয়াড় একজন আরেকজনের বিপক্ষে লড়াই করছে কিন্তু কেউ এক চুল পরিমাণ পিছু হটতে নারাজ।
__________________
১৯৯৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার অ্যালান ডোনাল্ডের করা এক আগুন ঝড়ানো বোলিং স্পেলের স্মৃতি রোমন্থন করে তারই সতীর্থ ন্যান্টি হ্যাওয়ার্ড ‘দ্য ক্রিকেট মান্থলি’-কে এই কথাগুলো বলেন।
ইংল্যান্ড ব্যাটার মাইকেল অ্যাথারটনের বিপক্ষে অ্যালান ডোনাল্ডের করা সেই বিদ্যুৎ গতির বোলিং এবং ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে তা মোকাবেলা করা অ্যাথারটন সাহসী লড়াই নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। অনন্য সেই দ্বৈরথ টিকে আছে ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায়।