গত কয়েকবছরে ভারতীয় ক্রিকেট দেখেছে অসাধারণ সব তরুণ ক্রিকেটারদের আর্বিভাব। রাহুল দ্রাবিডের ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমি কিংবা আইপিএলের বদৌলতে তরুণ ক্রিকেটাররা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিপক্ব। ফলে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে ভারতীয় জাতীয় দলের নির্বাচকরা পড়েছেন মধুর সমস্যায়।
বিশেষ করে চার নম্বর পজিশনে আছেন বেশ কয়েকজন দাবিদার। আসুন দেখে নেয়া যাক চার নম্বরে কারা হতে পারেন বিরাট কোহলির দলের ট্রাম্পকার্ড।
- সুরিয়াকুমার যাদব
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচনা ছড়িয়ে ভারতীয় জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া ব্যাটসম্যান হলেন সুরিয়াকুমার যাদব। বিগত কয়েক মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেট, এ দল কিংবা আইপিএল সবখানেই রান করেছেন দেদারসে। ঘরোয়ার ফর্মটা ধরে রেখেছেন জাতীয় দলেও।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই হাঁকিয়েছিলেন ছক্কা। এখনো পর্যন্ত চার টি টোয়েন্টি খেলে দুই ফিফটিতে তার সংগ্রহ ১৩৯ রান। সম্প্রতি টেস্ট দলেও ডাক পাওয়া সুরিয়াই এবারের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চার নম্বরে ভারতের প্রথম পছন্দ।
- শ্রেয়াস আইয়ার
মাসছয়েক আগেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে চার নম্বরে ভারতের প্রথম পছন্দ ছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। নিয়মিত রান করায় তার পজিশন নিয়ে প্রশ্ন তোলারও কোনো অবকাশ ছিল না। কিন্তু কাঁধের ইনজুরি এবং সূর্যকুমার যাদবের উত্থান দলে তার জায়গাকে ফেলে দিয়েছে হুমকির মাঝে। অথচ ভারতীয় ক্রিকেটে তার উত্থান ধূমকেতুর মতো।
তাঁর মাঝে সবাই দেখেছিল ভবিষ্যত বিরাট কোহলির ছায়া। সেই আস্থার প্রতিদানও তিনি দিয়েছেন রান করে। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টি টোয়েন্টিতে অভিষেক আইয়ারের। ভারতের হয়ে এখনো পর্যন্ত ২৯ টি টোয়েন্টি খেলে তিন ফিফটিতে তার সংগ্রহ ৫৫০ রান। পাশাপাশি তার ১৩৩ স্ট্রাইকরেটও যথেষ্ট ঈর্ষণীয়। এখন দেখার বিষয় বিশ্বকাপে সুরিয়াকে পেছনে ফেলে আইয়ারের উপর ভরসা রাখেন কিনা ভারতের নির্বাচকরা।
- ইশান কিষাণ
বন্ধু ঋষাভ পান্তের যখন অভিষেক হয় জাতীয় দলে তখনো জাতীয় দলের আশেপাশেই ছিলেন না ইশান কিষাণ। অথচ বয়সভিত্তিক দলে তাকে মহেন্দ্র সিং ধোনির উত্তরসূরি হিসেবেই বিবেচনা করছিল সবাই। এরপরই বদলে যাওয়া, গেইল-ডি ভিলিয়ার্স-রোহিত শর্মাদের পেছনে ফেলে ২০২০ আইপিএলে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন ছোটখাটো গড়নের ইশান কিষাণ।
আকারে ছোটখাটো হলেও ব্যাট সুইং কিংবা পেশিশক্তির জোর দুই দিকেই অনন্য কিষাণ। জাতীয় দলে কিছুটা দেরিতে অভিষেক হলেও প্রথম ম্যাচেই আলো ছড়িয়েছেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার যিনি ওডিয়াই এবং টি টোয়েন্টি উভয় অভিষেক ম্যাচেই ফিফটি করেন। ডানহাতি সব ভারতীয় টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের ভীড়ে বাঁহাতি কিষাণ হতে যোগ করতে পারেন বৈচিত্র্য। এছাড়া উইকেটের পেছনেও দাঁড়াতে পারেন এই মুম্বাইয়ের এই ব্যাটসম্যান।
- মানিশ পান্ডে
প্রায় এক দশক আগে সাড়া জাগিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট অঙ্গনে আবির্ভাব মানিশ পান্ডের। আইপিএলে প্রথম ভারতীয় হিসেবে সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। আইপিএল ফাইনালে অনবদ্য ৯১ কিংবা মেলবোর্নে অবিস্মরণীয় ১০৫ রানের জয় এনে দেয়া ইনিংস পান্ডেকে মনে রাখবার যথেষ্ট কারণ আছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। ২০১৫ সালে অভিষেকের পর দারুণ খেলে জাতীয় দলে একপ্রকার নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছিলেন তিনি।
কিন্তু, ফর্মহীনতা আর ইনজুরির কারণে দল থেকে বাদ পড়ার পর আর পুরনো ছন্দে ফিরতে পারেননি। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা সফরেও আশাজাগানো পারফরমেন্স দেখাতে পারেননি। তিন ম্যাচেই দারুণ শুরু করলেও ইনিংস বিড় করতে পারেননি, আউট হয়ে ফিরেছেন দৃষ্টিকটুভাবে। ত্রিশোর্ধ মানিশ তাই জাতীয় দলে ডাক পাবার দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে আছেন বাকিদের চেয়ে।
- সাঞ্জু স্যামসন
গত এক দশকের মাঝে ভারতের সবচেয়ে দুর্ভাগা ক্রিকেটারের নাম সঞ্জু স্যামসন। বলা হয়ে থাকে বড্ড ভুল সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটে আগমন কেরালার এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দেয়া এই ক্ল্যাসিকাল ব্যাটসম্যান জাতীয় দলে কখনোই পর্যাপ্ত সুযোগ পাননি।
এক কিংবা দুই ম্যাচ ব্যর্থ হলেই দল থেকে বাদ পড়েছেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ১০ ম্যাচে ১১৭ রান তাই বাজেভাবে চোখে লাগছে সবার। বলাই বাহুল্য অঘটন না ঘটলে এবারের বিশ্বকাপগামী দলের অংশ হচ্ছেন না সাঞ্জু স্যামসন।