মিসহিট হওয়া সুইপ শট, নাকি আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলা লফটেড স্ট্রেইট ড্রাইভ? লিটন দাসের ঠিক কোন শটটা দেখতে চান আপনি। নিশ্চয়ই দ্বিতীয়টা। আত্মবিশ্বাসী লিটনের প্রতিটা শটই তো দৃষ্টিনন্দন, প্রতিটা শটই যেন এক একটি শিল্পকর্ম।
কিন্তু, বছরজুড়েই লিটন দাসের প্রতিচ্ছবি হয়ে আছে মিসহিট হওয়া সুইপ শট। এতেই যত চিন্তার উদ্রেক হয়। প্রশ্ন জাগে। সেই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় হেডকোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহেকে।
একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান তুলে ধরি। ২০২২ সালে লিটন দাস ১৩টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে তিনি রান করেছেন প্রায় ৫২ গড়ে। আর বছর ঘুরতেই সেই গড় গিয়ে ঠেকেছে ১২ ম্যাচে ৩০ এর ঘরে। এতটা ছন্দপতন রীতিমত অপ্রত্যাশিত।
তবে, লিটনের এমন ছন্দপতন দুশ্চিন্তা বাড়ায়, যখন সামনে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মত বড় আসর। কপালে চিন্তার ভাজটা আরও ঘণিভূত হয় যখন তামিম ইকবালের মত অভিজ্ঞ ব্যাটার হয়ে পড়েন অনিশ্চিত।
এমন একটা সময়ে বাংলাদেশ দলের ওপেনিংয়ের দায়িত্বটা স্বভাবজাতভাবেই গিয়ে পড়ে লিটনের কাঁধে। কিন্তু লিটনের দুলতে থাকা আত্মবিশ্বাস তো আর তাকে বলিষ্ঠ কাঁধ হতে দেয় না। যদিও লিটন এসবে ভ্রুক্ষেপ করেন না। তাঁর কাছে ২৫-৩০ গড় খারাপ না।
তিনি অকপটে সংবাদ সম্মেলনে সে কথাই বলেছেন। ২৫-২৬ গড় নেহায়েত খারাপ নয়। কিন্তু লিটনের যথেষ্ট ক্যালিবার রয়েছে। তাঁর উপর প্রত্যাশাও স্বাভাবিকভাবেই থাকছে বেশি।
তিনি বড় বড় সব ইনিংস খেলবেন। চোখ জুড়ানো সব শটের পসরা সাজিয়ে বসবেন। সেটাই তো হবার কথা। কিন্তু জাতীয় দল থেকে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট, কোথাও সেই লিটনের দেখা মিলছে না। তিনি বড্ড মলিন হয়েই ধরা দিচ্ছেন বারেবারে।
এসব নিয়ে অবশ্য খুব একটা চিন্তিত নন হেডকোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহে। তিনি বলেন, ‘আমি লিটনের ফর্ম নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই এই মুহূর্তে। সে কানাডা ও শ্রীলঙ্কায় কিছু প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশ নিয়েছে, যা ছিল টি-টোয়েন্টি। তবে সে বেশ জোরেসোরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
প্রস্তুতিতে বেশ মনোযোগ দিচ্ছেন লিটন, সেটা সত্য। কেননা দলের আনুষ্ঠানিক অনুশীলন শেষ হয়ে গেলেও লিটন নিজের অনুশীলন চালিয়ে গেছেন। শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগের দিনও ব্যাটিং অনুশীলন করতে দেখা গেছে লিটনকে। সেখানে দূর্দান্ত কিছু শটও খেলেছেন তিনি।
এই শটগুলো তিনি প্রায়শই খেলেন। সমস্যাটা অবশ্য অন্য জায়গায়। দারুণ খেলা এই শটগুলোর স্থায়িত্ব বেজায় অল্প। যখনই মনে হয় লিটন বড় কোন ইনিংসের দিকে ছুটছেন, ঠিক তখনও লিটন প্যাভিলনের পথে হাটা শুরু করেন।
লিটন অবশ্য নিজের এই খারাপ সময়ে নিয়ে একদমই যে মাথা ঘামাননা, তা কিন্তু নয়। তিনি বরং আফসোস করেন। কারণ তিনি জানেন এই স্বল্প রানেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা নয় তার। এই নিয়ে চান্দিকা বলেন, ‘সে মনে করে সে আরও ভাল করতে পারত। আমরাও বিশ্বাস করি সে যা উপস্থাপন করছে তার থেকেও বেশি কিছু করার সক্ষমতা রয়েছে তার।’
এই অভিমতের দ্বিমত নিশ্চয়ই নেই কারোর। সবাই কেবল এখব অপেক্ষায় লিটনের ফর্মে ফেরার।
লিটন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার স্রেফ প্রয়োজন একটুখানি আত্মবিশ্বাস আর এক চিলতে ভাগ্যের সহয়তা। ব্যাস, তাতেই নিশ্চয়ই আবারও স্বরুপে আবির্ভূত হবেন লিটন। প্রেসবক্স, কমেন্ট্রিবক্স ছাপিয়ে সবাই তখন বলে উঠবে, বাহ! কি দারুণ!