পাকিস্তানের নান্দনিক রানমেশিন

হতদরিদ্র খ্রিষ্টান পরিবারে জন্ম ইয়োহানার। পরিবার চালানোর জন্য এবং নিজের ধ‍্যান-জ্ঞান ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দর্জির দোকানে কাজ করতে শুরু করলেন। শুরুটা হলো টেনিস বল দিয়ে, নাম ছড়িয়ে পড়তো লাগলো চারিদিকে। যোগ দিলেন নিজের শহরের অন‍্যতম সেরা ক্লাব গোল্ডেন জিমখানায়। যদিও ধর্মের একটা ব‍্যাপার পিছু ছাড়লো না। একদিন সুযোগ পেয়ে গেলেন ক্লাবের হয়ে, শতরান করে দুহাতে সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন তিনি।

পাকিস্তান! হ‍্যাঁ সেই পাকিস্তান, যারা জন্মলগ্ন হতেই ভারতের জাতীয় শত্রু বিভিন্ন কারণে। কিন্তু, হয়তো বুকে হাত রেখে একজন ভারতীয়ও বলতে পারবে না পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা তাদের বিস্মিত করেনি কিংবা তাদের পছন্দের একজন হয়ে উঠতে পারেনি। প্রতিভার আকাল এদেশে কোনোদিন ছিল না বলেই শুনেছি। কালে কালে এমন ক্রিকেটারদের উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি, বলে শেষ করা যাবেনা।

আমাদের মতো যারা মধ‍্য ২০০০ দশক হতে ক্রিকেট দেখা শুরু করেছে তখনও পাকিস্তানের ক্রিকেটে প্রতিভার ছড়াছড়ি। তো, কারা ছিল সেই দলে।? ক‍্যারিয়ারের শেষের দিকে থাকা শচীন টেন্ডুলকরের সাথে যার প্রতিভার তুলনা করা হতো সেই মহান ইনজামাম উল হক, বিশ্বের সেই সময় অন‍্যতম সেরা পেসার ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’ তথা শোয়েব আখতার, পাকিস্তানের আধুনিক ক্রিকেটের অন‍্যতম সেরা দুই অলরাউন্ডার তথা আব্দুল রজ্জাক ও শহীদ আফ্রিদি, পাকিস্তানের ক্রিকেটের ইতিহাসে অন‍্যতম সেরা লেগি দানিশ কানেরিয়া কিংবা ভারতের বিরুদ্ধে সারাজীবন অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে আসা ইউনুস খান।

কিন্তু, তাঁদের মধ্যে একজন ধীরস্থির স্বভাবের খ্রিষ্টান প্রায় গোটা বিশ্বের প্রিয় উঠেছিল। যাকে দেখলেই তখন সেই সময়ের ভারতের অন‍্যতম সেরা টেস্ট ক্রিকেটার ভেরি ভেরি স্পেশাল খ্যাত ভিভিএস লক্ষ্মণের কথা মনে হত। দীর্ঘক্ষন ব‍্যাটিং করে বড় বড় ইনিংস খেলাকে নিজের অনুগত করে তুলেছিলেন, নান্দনিক ব্যাটিংয়ের ধারক ও বাহক – সেই অসাধারণ উজ্জ্বল নক্ষত্র ইউসুফ ইয়োহানা আকা মোহাম্মদ ইউসুফের সাফল্য অর্জনের গল্পই হোক আজ।

হতদরিদ্র খ্রিষ্টান পরিবারে জন্ম ইয়োহানার। পরিবার চালানোর জন্য এবং নিজের ধ‍্যান-জ্ঞান ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দর্জির দোকানে কাজ করতে শুরু করলেন। শুরুটা হলো টেনিস বল দিয়ে, নাম ছড়িয়ে পড়তো লাগলো চারিদিকে। যোগ দিলেন নিজের শহরের অন‍্যতম সেরা ক্লাব গোল্ডেন জিমখানায়। যদিও ধর্মের একটা ব‍্যাপার পিছু ছাড়লো না। একদিন সুযোগ পেয়ে গেলেন ক্লাবের হয়ে, শতরান করে দুহাতে সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন তিনি।

আর পেছনে ফিরে তাকাতে হলো না। ধর্মের বেড়াজাল পেরিয়ে পর্যায়ক্রমে পাকিস্তানের বিভিন্ন ঘরোয়া লিগে খেলার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। সেখানেও অসাধারণ সাফল্য পেয়ে একদিন সুযোগ পেয়ে গেলেন জাতীয় দলেও।

জাতীয় দলে অভিষেকের পর হতেই ধারাবাহিকার বিমূর্ত প্রতিক হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০৩-০৪ সালের পর হতে ব‍্যাটিং ফর্মের চূঁড়ায় অবস্থান করতে থাকেন তিনি। ক্ষুরধার ব‍্যাটিং মস্তিষ্ক, স্পিনারদের বিরুদ্ধে অসাধারণ পায়ের কাজ ,টেম্পারপেন্ট, স্কিল তাঁকে অন‍্যদের থেকে বহু গুণ এগিয়ে রেখেছিল। ২০০৬ সালে টেস্টে ১৭৮৮ রান করেন যা এখনো পর্যন্ত টেস্টে এক ক্রিকেটীয় বছরে সবচেয়ে বেশি রান হিসেবে অক্ষত রয়েছে।

যার ফল স্বরূপ ২০০৭ সালে আইসিসির সেরা টেস্ট ক্রিকেটার ও ‘উইজডেন ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার’ হন। তার ক‍্যারিয়ারে ৯০ টি টেস্টে ২৪ টি শতরান ও ৩৩ টি অর্ধশতরান সহ-৫২ এর বেশি গড় সহ ৭৫৩০ রান করেছেন। অন‍্যদিকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও পিছিয়ে থাকেননি। ২৮৭ টি ওডিআই ম্যাচে ১৫ টি শতরান ও ৬৪ টি অর্ধশতরান সহ ৯৭১৭ রান করেছেন। নিষিদ্ধ টি-টোয়েন্টি আসর ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল) গিয়েছিলেন, ফিরেও এসেছিলেন।

এর সঙ্গে স্লিপ ফিল্ডার হিসেবেও অসাধারণ ছিলেন। কিন্তু, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) শেষের দিকে তার সাথে ভালো ব‍্যাবহার করেননি, না হলে আজ হয়তো ১০০-এর বেশি টেস্ট কিংবা দশ হাজারের বেশি ওডিআই রান আমরা দেখতে পেতাম। যদিও পরে তাঁকে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ফিরিয়ে আনবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন।

যাই হোক, এতো কিছুতেই মোহাম্মদ ভাবমূর্তির কোনো রূপ ক্ষুন্ন হয়নি। পিসিবির সাথে সম্পর্কের অধপতন হয়েছিল, সেটা কেটেও গিয়েছে। পাকিস্তান দলের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পালন করছেন দক্ষ হাতে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...