পেস বোলিংয়ের ভবিষ্যত দেখছেন ওটিস গিবসন

বাংলার ক্রিকেটে ভালো মানের পেসার পাওয়ার আক্ষেপ বহুদিনের। স্পিন নির্ভর উপমহাদেশীয় কন্ডিশনে পেসারদের প্রমাণ করার সুযোগই বা কতখানি। তবুও দেশের ক্রিকেটের এই দুর্দিনে নিজেদের প্রতিভার দাগ রেখেছে পেসাররা। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজে দলের ভরাডুবির পরেও পেসারদের পারফর্মেন্স মন জয় করেছে সবার। পেসারদের এই সাফল্যের পিছনে বড় অবদান রাখা ওটিস গিবসন ও খুশি শিষ্যদের দেখে।

নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকেই অসাধারণ বোলিং করছেন তাসকিন আহমেদ। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে নিজের ফিটনেসের সর্বোচ্চ পরীক্ষা দিয়েছেন এই পেসার। পালেকেল্লের শুকনো পিচেও লাইন-লেন্থ ও গতি দিয়ে হাপিয়ে তুলেছিলেন প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের। সবমিলিয়ে এ যেনো নতুন এক তাসকিনকে দেখছে ক্রিকেট বিশ্ব।

তাসকিনকে নিয়ে বাংলাদেশের বোলিং কোচ ওটিস গিবসন ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘তাসকিন ভীষণ পরিশ্রম করেছে। ওর রান আপ নিয়েও আমরা কিছুটা কাজ করেছি যা ওকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। সে এক ইনিংসে প্রায় ৩০ ওভার বল করেছে তবুও নিয়মিত ১৪০ স্পিডে বল করে গেছে এবং ভালো জায়গায় বল করেছে। আমি মনে করি আগামী ১২ মাস তাঁর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু এভাবেই কাজ করে যেতে হবে।’

ওদিকে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের শরিফুল ইসলামেরও অভিষেক হয়েছে জাতীয় দলে। তরুন এই পেসার তাঁর আগ্রাসী বোলিং দিয়ে ইতিমধ্যেই নজরে চলে এসেছেন। শরিফুলকে আগলে রাখতে পারলে হয়তো এই বাঁহাতি পেসার হতে পারেন দেশের ক্রিকেটের বড় সম্পদ।

ওটিস গিবসন বলেন, ‘তাঁর মত লম্বা এবং বাঁহাতি পেসার যেকোন দলের জন্য বড় সম্পদ। তবে সে এখনো অনেক তরুণ এবং খুব দ্রুত উন্নতি করছে। সে বল স্যুইং জরাতে শুরু করেছে এবং হাইট ব্যবহার করে বাউন্স আদায় করে নিচ্ছে। আমার মনে হয় শরিফুলের আমাদের পেস বোলিং এর ভবিষ্যত।’

আরেক বাঁহাতি ও দেশের সেরা পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ঝড় তুলেছেন আইপিএলে। বোলিং এ নিয়ে এসেছেন নানা বৈচিত্র। বিশেষ করে তাঁর স্লোয়ার কাটারে হিমশিম খাচ্ছে নামী দামী সব ব্যাটসম্যানরা। মুস্তাফিজ প্রসঙ্গে ক্যারিবিয়ান কোচ ওটিস গিবসন বলেন, ‘আমি আইপিএলে ওর বোলিং খুব একটা দেখিনি তবে আমাদের সাথে যখন ছিল তখন থেকেই বেশ ভালো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিল ওর বোলিং এ। বিশেষ করে নতুন বলে ওর স্যুইং নিয়ে আমরা কাজ করেছি। বাংলাদেশের হয়ে যখন খেলবা তাকেই নতুন বলে বল করতে হবে। কেননা সে আমাদের সেরা বোলার। আর আইপিএলে ভালো করাটাও খুব ভালো খবর। এতে ওর আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে।’

এছাড়াও হাসান মাহমুদ, এবাদত হোসেন ও আবু জায়েদ রাহিরা ভালো বোলিং করছেন। ফলে ভালো একটা পেস বোলিং গ্রুপ তৈরি হয়েছে। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে বা দেশে যখন টেস্ট খেলা হয় তখন পেসারদের খুব একটা সুযোগ দেয়া হয়না। তবে দেশের বাইরে গেলে পেসারদের অনেক বোলিং করতে হয়। এতে করে পেসাররা তাদের সর্বোচ্চটা দিতে পারেন না।

তাছাড়া বিদেশের মাটিতে পেসারদের অতিরিক্ত ব্যবহারও তাদের শরীরের ওপর চাপ ফেলে। তাই ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দেশের মাটিতে পেসারদের আরো সুযোগ দেয়া জরুরি। তাছাড়া আমাদে হাতে এখন সেরা যেই ৫-৬ জন পেসার আছে তাঁদেরকে ফরম্যাট অনুযায়ী ভাগ করতে হবে। এই সময়ে একজন পেসারের জন্য সব ফরম্যাট খেলা সত্যিই কঠিন। ফলে যে যেই ফরম্যাটে বেশি উপযোগী তাঁকে সেই ফরম্যাটেই খেলানো উচিত। সবমিলিয়ে কাঠামোগত এই সমস্যা গুলো দূর করা গেলে আমাদের পেস বোলিং লাইন আপ দিন দিন আরো সমৃদ্ধই হবে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link