পেস স্বর্গে পেস বিপ্লব

তখন ডুসেন ও বাভুমা আস্তে আস্তে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ভিত্তি গড়ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা আবার ম্যাচে ফিরে আসছিল। সেই সময়েই দ্বিতোয় স্পেল করার জন্য শরিফুল ইসলামকে নিয়ে এলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। শরিফুলও কাজটা করে দিলেন। একেবারে গা ঘেঁষা বাউন্সারটা আলতো করে বাভুমার ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়লো মুশফিকুর রহিমে গ্লাভসে।

আবারো ম্যাচের লাগাম টেনে ধরলো বাংলাদেশ। একইরকম ভূমিকা রেখেছেন আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ। বাভুমা ফিরে যাওয়ার পর ডুসেন ও মিলার আবার জুটি গড়েছিলেন। আবারো একটা ভয় তৈরি হয়েছিল বাংলাদশ শিবিরে। এবার ত্রানকর্তা হয়ে আসলেন আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ। ভয়ংকর হয়ে উঠা ভ্যান ডার ডুসেনকে ফেরালেন তিনি। আবারো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে।

সবমিলিয়ে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন আপের নাভিশ্বাস তুলেছেন এই দুই পেসার। দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট পেস বান্ধব হলেও ব্যাটারদের জন্য ছিল বেশ ভালো পিচ। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সেই পিচকে কাজে লাগিয়েছেন। তাই প্রোটিয়া পেসাররা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি।

তবে বাংলাদেশের পেসাররা রীতিমত একটা বিপ্লব করলেন সেঞ্চুরিয়নের বাইশ গজে। পিচে খানিকটা বাড়তি পেস ছিল। আর সেটাকে একেবারে ষোল আনা ব্যবহার করেছেন শরিফুল ইসলাম। ওদিকে বল হাতে গতির ঝড় তুলেছেন তাসকিন।

তাসকিন নিজের ফিরে আসার গল্পটাকে প্রতিদিনই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। যত দিন যাচ্ছে তাসকিন যেন আরো বেশি প্রকট হয়ে উঠছেন। লাইন, লেন্থ আর গতির দারুণ এক কম্বিনেশন। আজ তাসকিন গড়ে প্রায় ১৪০ কিমি গতিতে বোলিং করেছেন। এই ম্যাচে গড়ে সবচেয়ে বেশি গতিতে বোলিং করেছেন তিনিই। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কাগিসো রাবাদা বোলিং করেছেন ১৩৫ কিমি গতিতে।

এছাড়া ইনিংসের নবম ওভারে টানা দুই উইকেট নিয়েই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। ওভারের প্রথম বলেই তুলে নেন প্রোটিয়া ওপেনার কাইল ভেরিনের উইকেট। এরপর একই ওভারের চতুর্থ বলে নেন এইডেন মার্করামের উইকেট। সব মিলিয়ে প্রথম দশ ওভার তাসকিন আর শরিফুল দেখিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে কী করে পেস বোলিং করতে হয়। সব মিলিয়ে তাসকিন ১০ ওভার বল করে খরচ করেছেন মাত্র ৩৬ রান। ডুসেন সহ তুলে নিয়েছেন তিন উইকেট।

অন্যদিকে শরিফুল ইসলামও তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। এই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেই অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দারুণ সময় কাটিয়েছিলেন। এবার সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটেও নিজেকে চেনালেন শরিফুল। গতি দিয়ে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করেছেন, যখনই দলের প্রয়োজন হয়েছে উইকেট এনে দিয়েছেন।

এই দুইজনের সাথে মুস্তাফিজ সেরা দিনটি হয়তো পার করেননি। তবে তাসকিন ও শরিফুলকে যথেষ্ট সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করেছেন। ইকোনমিক্যাল বোলিং করে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ তৈরি করেছেন।

সবমিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিং কন্ডিশনে বাংলাদেশের পেসাররা একটা পেস বিপ্লব করে ফেলেছেন। যদিও বাংলাদেশের পেসাররা এমন উইকেটে খেলার সুযোগ খুব একটা পাননা। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই অভ্যস্ততা নিয়ে একটা সমস্যা হয়। যেমন এর আগেও এমন কন্ডিশনে গিয়ে বাংলাদেশের পেসাররা সেটার ব্যবহার করতে পারেননি। তবে এবার তাসকিন, শরিফুলরা সেটা করে দেখিয়েছেন।

 

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link