নাসিমের ব্যাটে আরও একবার ভষ্ম আফগান জয়

ব্যাটিংয়ে নাসিম শাহ, বোলিংয়ে ফজলহক ফারুকী জয়ের জন্য প্রয়োজন এগারো রান – গত বছর এশিয়া কাপে এমনই এক শ্বাসরুদ্ধকর মুহুর্ত দেখেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। এবার পাকিস্তান আফগানিস্তান সিরিজেও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটলো; আর মানকাড বিতর্ক ছাপিয়ে আরো একবার নায়ক হলেন নাসিম শাহ।

বিধ্বস্ত, লজ্জিত – পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যদচ হারার পর আফগানিস্তানের মনের অবস্থা বোঝার জন্য এই শব্দগুলোও যথেষ্ট নয়। অথচ দিন দুয়েক পরেই হতাশার বৃত্ত বেরিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়লো আফগানরা। তবে এক বল হাত রেখে পাকিস্তান ঠিকই টপকে দিয়েছে ৩০১ রানের টার্গেট।

পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে কখনো এগিয়ে ছিল পাকিস্তান, আবার কখনো চালকের আসনে দেখা গিয়েছিল আফগানিস্তানকে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য এগারো রান প্রয়োজন ছিল, তখন ছন্দে থাকা শাদাব খানকে মানকাড আউট করে আফগানিস্তানকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন ফজলহক ফারুকী। কিন্তু গত এশিয়া কাপের মত এবারও নাসিম শাহয়ের বাঁধা টপকাতে পারেননি; বাগে পেয়েও তাই পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদ পায়নি মুজিব, নবিরা।

আগের ম্যাচে মাত্র ৫৯ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল আফগানিস্তান; আজ যেন সেই লজ্জার শোধ নিতেই মাঠে নেমেছিল রহমানউল্লাহ গুরবাজরা। শুরু থেকেই তাই পাকিস্তানি বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে দুই আফগান ওপেনার। ৩৯.৫ ওভার খেলে ২২৭ রান তোলে এই জুটি।

ব্যক্তিগত ৮০ রানের মাথায় ইব্রাহিম জাদরান আউট হলেও অবিচল ছিলেন সঙ্গী রহমানউল্লাহ গুরবাজ। শেষপর্যন্ত ১৫১ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংস খেলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। এই ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভারে ৩০০ রান সংগ্রহ করে রশিদ খানরা।

আগের ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার করা হারিস রউফ এ ম্যাচে কিছুই করতে পারেননি। অবশ্য আফগান ওপেনারদের দিনে পুরো পাক বোলিং আক্রমনকেই নখদন্তহীন মনে হয়েছে; যদিও ডেথ ওভারে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আফগানিস্তান নাগালের বাইরে যেতে পারেনি।

জবাবে দারুণ শুরু করে পাকিস্তানও। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ফখর জামান আর ইমাম উল হকের ব্যাটের ছড়ে দলীয় পঞ্চাশ পেরোয় দলটি; এরপর ফখর আউট হলে হাল ধরেন অধিনায়ক বাবর আজম। দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে জয়ের দিকে এগুতে থাকে পাকিস্তান।

তবে ৩১তম ওভারে ফজলহক ফারুকীর বল খেলতে গিয়ে আউট হন বাবর আজম, তাতেই ভাঙে ১১৮ রানের পার্টনারশিপ। এরপরও চেষ্টা করে গিয়েছেন ইমাম, কিন্তু ব্যক্তিগত ৯১ রানের মাথায় তিনি আউট হলে ধ্বস নামে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে। ১৭০/১ থেকে কিছু ওভারের ব্যবধানে ২১১/৬ এ পরিণত হয় দলটির স্কোর।

তবু হাল ছাড়েননি শাদাব খান, প্রথমে ইফতেখার আহমেদ এবং পরে লোয়ার অর্ডারকে নিয়েই এগিয়েছেন। আবদুর রহমানের করা ৪৯তম ওভারে ১৬ রান করে দলকে তীরের কাছে নিয়ে আসেন তিনি। শেষ ওভারে নন-স্ট্রাইকে থাকায় তাড়াহুড়ো করে সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন এই লেগি; কিন্তু বুদ্ধিমান ফারুকী বল না করেই তাঁকে মানকাডিং করে।

যদিও জয়ের হাসি হেসেছে পাকিস্তানই, টান টান উত্তেজনার ম্যাচে এক উইকেটের জয় নিশ্চিতভাবেই এশিয়া কাপে নাসিম শাহয়ের দুই ছয়কে মনে করিয়ে দিবে।

নেভিল কার্ডাসের ক্রিকেটে আগে থেকে কিছু অনুমান করাটা বেশ কঠিন। সেই কঠিন কাজটা রীতিমতো দুঃসাধ্যের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে পাকিস্তান। ইমরান খানের অধীনে বিশ্বকাপ জয়, সরফরাজের অধীনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয় কিংবা আফগানিস্তানের বিপক্ষে পর পর দুইটি স্নায়ুক্ষয়ী জয় – সবকিছু পাকিস্তানের আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে উঠার গল্পের এক একটি সাক্ষী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link