আর সবার মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসানের দিকে। তার বিশ্বাস ছিলো, সাকিব এরকম পারফরম্যান্স করেই ফিরবেন। সেই বিশ্বাস সত্যি হওয়ায় খুব খুশী তিনি।
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে অবশেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। শুধু কি ফিরেছেন। ব্যাটে বলে পারফরমেন্সে করে ম্যাচ সেরা হয়েই ফিরেছেন। প্রত্যাবর্তনে সাকিবের রাজসিক পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে ক্যারিয়ারের অনেক বড় ঝড় সামলে আসলেও সাকিব আছেন সেই আগের জায়গাতেই।
গতকাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেও সাকিব প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছিলেন আরো আগেই। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ দিয়ে ক্রিকেটে ফিরে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিলো খুবই সাদামাটা। টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে ৯ ম্যাচে ১২.২২ গড়ে করেছিলেন মাত্র ১১০ রান। যেখানে সর্বোচ্চ রান ছিলো ২৮। আর বল হাতে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। তাই সাকিবের পারফরম্যান্স নিয়ে সন্দেহ ছিলো অনেকের। তবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন জানিয়েছেন সাকিবের পারফরম্যান্স নিয়ে কখনোই সন্দেহ ছিলো না তাঁর।
এ প্রসঙ্গে পাপন বলেন, ‘সাকিব তো সবসময়ই আমাদের মেগা স্টার এটা নিয়ে কারো কোনোদিন সন্দেহ ছিল না। তবে আমি যেটা বলবো সে অসাধারণ বোলিং করেছে। অনেকের হয়তো সন্দেহ ছিল এতোদিন পর তার পারফরম্যান্সটা কেমন হবে। আমার এতো সন্দেহ ছিল না।’
বল হাতে সাকিব ছিলেন অসাধারণ। তাকে দেখে একবারের জন্যও মনে হয়নি প্রায় দেড় বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন তিনি। নিজের ট্রেড মার্ক ডেলিভারি আর্ম বলে যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেছেন তেমনি টানা এক জায়গাতে বল করে দিয়েছেন মাত্র ৮ রান। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারানোর ম্যাচে বল হাতে ৭.২ ওভারে ৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট।
বোলিংয়ে ভালো করলেও ব্যাট হাতে ধুকেছেন সাকিব। ব্যাট হাতে করেছেন ১৯ রান। ১৯ রান করতে সাকিবের বল খেলতে হয়েছে ৪৩ টি। বাউন্ডারি মেরেছিলেন মাত্র একটা। ব্যাটিংয়ে চেনা ছন্দে ছিলেন না সাকিব। পাপন জানিয়েছেন চেনা ছন্দে আসতে আরো একটু সময় লাগবে। তিনি বলেন, ‘ব্যাটিংয়ে আগের মতো ছন্দে ফিরে আসতে যে ফর্ম আমরা বিশ্বকাপে দেখেছি ওইটাই আমার দেখা সেরা ফর্ম। ওই ফর্মটা ফিরে আসতে একটু সময় লাগতেই পারে।’
শুধু সাকিব আল হাসানই নয়। অন্য ক্রিকেটাররাও দীর্ঘ দিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন। বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন সময় লাগবে সবারই। পাপন বলেন, ‘সাকিব ছাড়া আমাদের আর যারা স্টার আছে তাদেরও ব্যাটিংয়ের পারফরম্যান্স আহামরি কিছু বোঝা যায়নি, একটু সময় লাগবে। এ ছাড়া পিচটা আরও স্পোর্টিং হওয়ারই কথা ছিল। ওয়েদারটা এমন ছিল এবং এর সাথে বৃষ্টি হয়েছে। এই কুয়াশার কারণে সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে খেলা কঠিনই ছিল। আশা করি সামনের গুলো ভালো হবে।’
২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ স্বপ্নের মতো কাটিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে ২ টি সেঞ্চুরি ও ৫ টি হাফসেঞ্চুরিতে ৮৬.৮৭ গড়ে ৬০৬ রান করেছিলেন সাকিব। বিশ্বকাপে অতিমানবীয় এই পারফরমেন্স সাকিব করেছিলেন তিন নাম্বার পজিশনে ব্যাট করে। এছাড়া এই পজিশনে ২৩ ইনিংসে ৫৮.৮৫ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ও ১১ হাফসেঞ্চুরিতে ১১৭৭ রান করেছেন সাকিব।
এরপরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে তিন নাম্বারে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছে তাকে। নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন না পারফরম্যান্সের কারণে সাকিব জায়গা হারিয়েছেন। বিসিবি সভাপতি মনে করেন নাজমুল হোসেন শান্তকে জায়গা দিতেই সাকিবকে ৪ নম্বরে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এটা আমার পক্ষে বলা খুব কঠিন। সাকিবের তিন নম্বর পজিশন পারফরম্যান্সের কারণে আসেনি বলে আমার মনে হয় না। যদি কোনো কারণে কোচ এবং ক্যাপ্টেন ওরা বলতে পারবে ভালো। শুধু পারফরম্যান্সের কারণে ওর জায়গা পরিবর্তন হচ্ছে এটা আমি বিশ্বাস করি না। শুধু তার তো না মুশফিকের মতো ডিপেন্টেবল ব্যাটসম্যান তো আমাদের নেই চার নম্বরে। ওকেও তো বদল করেছে। আমার ধারণা শান্তকে নেয়ার জন্য বদল এসেছে।’