‘ক্রিকেট’ শব্দটার আগে পেশাদার শব্দটা জুড়ে দিলেই কি সেটা একজন ক্রিকেটারের একমাত্র কিংবা প্রধান পেশা হয়ে যায়? বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই হয়তো হয়। ফাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ডালপালা গজানোয় সেটা বরং আরও বেশিই হয়। ক্রিকেট তাই এখন পৃথিবীর সহস্র ক্রিকেটারের প্রধান আয়ের উৎস।
তবে এর মাঝে বৈপরীত্যও আছে। সহযোগী অনেক দেশের ক্রিকেটারেরই আয়ের প্রধান উৎস ক্রিকেট নয়। এই যেমন হংকংয়ের কথাই ধরা যাক। বাছাইপর্বে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, সিঙ্গাপুরকে হারিয়ে তারা এশিয়া কাপে জায়গা করে নিল। মূলপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হারলেও ব্যাটিং ইনটেন্টে ওরা প্রশংসা কুড়িয়েছে বেশ।
কিন্তু, ওদের বেশিরভাগ ক্রিকেটারেরই নাকি প্রধান আয়ের উৎস ক্রিকেট না! কেউ প্রাইভেট পড়ায়, কোচিং করায়, কেউ ফুড ডেলিভারির কাজ করে, কেউ জুয়েলারির ব্যবসা করে, কেউবা আবার প্রশাসনিক চাকরি করে।
তবে, হংকংয়ের খেলোয়াড়দের ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন অসীম। কেমন সেটা বলা যেতেই পারে। এই দলের অন্যতম তিন ক্রিকেটার বাবর হায়াত, এহসান খান, ইয়াসিম মুর্তজা। তো তারা যখন এশিয়া কাপ খেলার উদ্দেশ্য বিমানে চেপেছে ঠিক তখনই তারা শুনলো তাদের সবার প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। নিজেদের প্রথম সন্তান, কিন্তু সন্তানকে দেখতে হলো ভিডিও কলের মাধ্যমে। কোথায় নবজাতকের ললাটে চুম্বন এঁকে দিবে, সেখানে তারা শত শত মাইল দূরে রয়েছে নতুন স্বপ্নের দ্বার উন্মোচনে।
হংকংয়ে কোনো ক্রিকেট খেলা হয় না প্রায় দুই বছর হল। করোনা মহামারির মধ্যে ছয়টা লকডাউনে সেখানে প্রায় এক বছর ট্রেনিং সেশনই বন্ধ ছিল। কিন্তু সে সময়ে নিজেদের কর্মস্থলে শত ব্যস্ততার পরেও হংকং ক্রিকেটাররা কন্ডিশনিং সেশন করতো জুমের মাধ্যমে। এমনও হয়েছে কোনো এক ক্রিকেটার গাড়ির গ্যারেজে কাজ করছেন কিন্তু তিনি ঠিকই ঐ সময়ে জুম মিটিংয়ে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সেশন করেছেন।
এশিয়া কাপ কোয়ালিফায়ারে হংকং এসেছিল শূণ্য আশা নিয়েই। কারণ একদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত আর কুয়েতের শক্তিশালী দল। অন্যদিকে নিজেদের সেরা দুই ক্রিকেটারের একজন মার্ক চাপম্যান নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন, আরেকজন সাবেক অধিনায়ক অংশুমান রাথ ভারতে চলে গিয়েছেন সেখানে ক্যারিয়ার তৈরি করার জন্য। তবে অদম্য মানসিকতা আর টিম পারফর্মেন্সে টানা তিন ম্যাচ জিতে ঠিকই এশিয়া কাপের মূলপর্বে জায়গা করে নেয় হংকং।
এত কিছুর পরেও ক্রিকেট তাদের রোজগার উপার্জন হতে পারেনি। সেই দায়টা তাদের বোর্ডেরই বেশি। পেশাদার ক্রিকেটার তুলে আনার পেছনে বিগত বছরগুলোতে হংকং ক্রিকেট বোর্ডের ভূমিকা ছিল খুবই সামান্য। তাই পেশাদার ক্রিকেটারদেরও বাছতে হয়েছে অন্য পথ।
হংকংয়ের বেশিরভাগ ক্রিকেটার ফুড ডেলিভারির কাজের সাথে যুক্ত। তিন, চারজন ক্রিকেটার এখন বিভিন্ন ক্লাবে ক্রিকেট কোচিং করায়। হংকংয়ের সহ অধিনায়ক কিঞ্চিত সাহ ব্যবসা করেন জুয়েলারির। ব্যাটসম্যান স্কট ম্যাককেকনির ইন্টারনেটের ব্যবসা রয়েছে। এ ছাড়া হংকংয়ের ওপেনিং বোলার আয়ুশ শুকলা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। আর কয়েকজন আছেন যারা প্রশাসনিক বিভিন্ন চাকরির সাথে যুক্ত।
হংকংয়ের খেলোয়াড়দের কাছে ক্রিকেট একটা পার্টটাইম পেশা। শত সীমাবদ্ধতায় ক্রিকেট টা তাদের প্রধান আয়ের উৎস হতে পারেনি। হয়তো হংকংয়ের রক্তেই মিশে আছে নির্দিষ্ট যেকোনো কাজের প্রতি অসীম নিবেদন আর শ্রম। নাহলে পার্ট টাইম ক্রিকেট খেলা একটা দল এশিয়ার সেরা ছয় টা দলের মধ্যে আসে কী করে?