হেরাথের স্পিন ক্লাসে পার্ট টাইমারদের বিচরণ!

অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসার ডেনিস লিলি একবার বলেছিলেন, ‘ক্রিকেট ইজ নাইন্টি পারসেন্ট মেন্টাল, টেন পারসেন্ট স্কিল জাস্ট লাইক আদার স্পোর্টস অ্যান্ড লাইফ ইন জেনারেল।’

আশি দশকের এ পেসার একদম যথার্থই বলেছিলেন। সময়ের ব্যবধানে এটা প্রমাণিত যে, ক্রিকেট যতটা না মাঠের খেলা তার চেয়ে এখানকার মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টরগুলো অনেক কাজ করে। একেক কোচের একেক স্ট্র্যাটেজি।

চান্দিকা হাতুরুসিংহে যখন আবারো বাংলাদেশের দায়িত্বে আসলেন তখনই বোঝা গিয়েছিল ভিন্ন, সুক্ষ্ম অনেক ব্যাপারগুলোতে তিনি নজর দিবেন। হচ্ছেও তাই। ইংল্যান্ড সিরিজকে সামনে অনুশীলনে হঠাৎই চোখে পড়ল, স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথের ক্লাসে এক হয়েছেন রিয়াদ, আফিফ, শান্তরা। ব্যাট হাতে সামনের সিরিজে যাদের কাঁধে রয়েছে গুরুদায়িত্ব, সেই তারাই কবজি ঘুরিয়ে নেটে স্পিন বোলিংটা রপ্ত করে নিলেন।

এদের মধ্যে, রিয়াদকে একটা সময় পর্যন্ত অলরাউন্ডার হিসেবেই বিবেচনা করা হত। তাঁর ক্যারিয়ারের দুর্দান্ত শুরুটা কিন্তু ব্যাট দিয়ে নয়, হয়েছিল বোলিং দিয়ে। অভিষেক টেস্টেই নিয়েছিলেন দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট। কিন্তু এরপর ক্যারিয়ারে যত সময় গড়িয়েছে রিয়াদ ব্যাট হাতে সম্মুখপানের যোদ্ধা হয়েছেন। মাঝখানে তাঁর বোলিংটা অনিয়মিত হয়ে পড়ে।

এমন কি আফিফ হোসেন ধ্রুব বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রথম লাইম লাইটে এসেছিলেন বোলিং দিয়ে। বিপিএলের অভিষেকটাই রাঙিয়েছিলেন ৫ উইকেট প্রাপ্তিতে। তবে বাংলাদেশ দলে তাঁর আগমন একদম পুরোদস্তুর ব্যাটার হিসেবে। সময়ের ব্যবধানে তিনি হয়ে উঠেছেন দলের মিডল অর্ডারের অন্যতম ভরসা।

অন্যদিকে, নাজমুল হোসেন শান্ত, এই মুহূর্তে টপ অর্ডারের অন্যতম কাণ্ডারী। তবে কাজ চালানোর মতো বোলিংটা তিনি করতে পারেন। বিপিএলেও টুকটাক বোলিং করেছেন। শুধু যে নিয়ম মেনে হাত ঘুরিয়েছেন, ব্যাপারটা এমনও না। কবজি ঘুরিয়ে উইকেটও পেয়েছেন।

তা রঙ্গনা হেরাথের এই ব্যাটারদের সাথে আলাদা করে স্পিন নিয়ে কাজ করার কারণ কি? কারণটা অতি সাধারণ। দুর্দান্ত পার্টটাইমার স্পিনার হিসেবে গড়ে তোলা। কিছুটা অনুশীলনের মাঝে রাখা, যাতে করে ম্যাচ পরিস্থিতিতে অধিনায়ক অনেক গুলো অপশন পান। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বোলিং ইউনিটে যে কোনো বোলারের একটা বাজে দিন যেতেই পারে। কিন্তু তাঁর রিপ্লেসমেন্টও একাদশে থাকা প্রয়োজন। আর এই সময় গুলোতেই পার্ট টাইমাররা হয়ে ওঠেন সর্বেসবা, দু:সময়ের যোদ্ধা।

শুধু নির্দিষ্ট বোলারের ব্যর্থতার দিনেই যে একজন পার্ট টাইমার ভূমিকা রাখতে পারেন, তা নয়। প্রতিপক্ষ ব্যাটার, কিংবা একটা জুটিকে কোনোভাবেই পরাস্ত করা যাচ্ছে না, এই মুহূর্ত সামনে আসলে অধিনায়ক পার্টটাইমার বোলার দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে পারেন।

কারণ স্বাভাবিকভাবেই পার্ট টাইমারদের নিয়ে প্রতিপক্ষের অ্যানালিস্টরা অ্যানালাইসিস কম করে থাকেন। করেন না বললেই চলে। সে ক্ষেত্রে পার্ট টাইমারদের সম্পর্কে খুব একটা জানাশোনা থাকে না ব্যাটারদের। আর এমন সময়েই মিলতে পারে সফলতা। কিংবা ম্যাচের টার্নিং পয়েন্টও আসতে পারে পার্ট টাইমারদের সৌজন্যে।

মূলত সে সব উদ্দেশ্যেই হাতুরুসিংহের এমন রণকৌশল। যা পূরণে কাজ করছেন স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ। তাঁর স্পিন ক্লাসে দীক্ষা নিতে দেখা যায় শান্ত, আফিফদের। অবশ্য হেরাথের সাথে পার্টটাইমার স্পিনারদের এমন দৃশ্য এটাই প্রথম নয়। এর আগেও বহুবার শিষ্যদের এমন সেশন নিয়েছেন তিনি। এখন হেরাথের এমন টোটকা ম্যাচে কাজে দিলেই হল।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link