পোর্তোর জার্সিটা ভাঁজ করে বাক্সে রাখলেন, এরপর পর্তুগালের জার্সিটাও রাখলেন সেখানে; সবশেষে বুট জোড়া – পেপে কি বোঝাতে চাইলেন ততক্ষণে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে কোটি ভক্তর কাছে। ততক্ষণে সবাই বুঝে ফেলেছে দুই দশক আগ থেকে আগ্রাসনের প্রতীক হয়ে ওঠা মানুষটা এবার ইতি টানছেন। প্রবল আগ্রাসনে প্রতিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া মানুষটা ক্লান্ত হয়ে বিশ্রামের পথ বেছে নিয়েছেন।
বয়সটা চল্লিশ পেরিয়ে গিয়েছে অনেক আগেই, তবু কি দুরন্তপনা চালিয়ে গিয়েছিলেন মাঠে। সবশেষ ইউরোতেও পর্তুগালের গুরুত্বপূর্ণ একজন ছিলেন এই কিংবদন্তি। কিন্তু অবশেষে থামতেই হলো তাঁকে; বয়সটাকে স্রেফ একটা সংখ্যা বানিয়ে ফেলার পর ঠিকই ফুলস্টপ এঁকে দিলেন।
২০০১ সালে মারিতিমো ক্লাবের হয়ে পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরুটা করেছিলেন এই ডিফেন্ডার; বছর তিনেক পর পোর্তোতে জায়গা পান। ২০০৭ সালে রিয়াল মাদ্রিদের নজর পড়ে তাঁর উপর; এরপর প্রায় এক দশক লস ব্ল্যাঙ্কোসদের হয়ে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু প্রহরী হয়ে ছিলেন তিনি। সেই অধ্যায় শেষে বেসিকটাস হয়ে আবারো পোর্তো।
মাঝের ২৩ বছরে কি না জিতেছেন পেপে; তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তিনবার লা লিগা, চারবার পর্তুগিজ চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা আছে তাঁর দখলে। সবমিলিয়ে ৩৪টি ট্রফি জিতেছেন, অর্থাৎ ২৬ ম্যাচ পর পর একবার করে উদযাপনের সুযোগ পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালে পর্তুগালের বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছিলেন তিনি, অথচ সে সময় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ছিলেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে।
তবে অর্জনের চেয়ে এই রিয়াল তারকা বেশি আলোচিত অস্পৃশ্য মেন্টালিটির জন্য। রক্ষণভাগে কোন ফরোয়ার্ড বল নিয় ঢুকলেই ছিঁড়ে খাবেন এমন আগ্রাসন ছিল তাঁর মাঝে; তাই তো লাথি মেরে লিওনেল মেসির পা ভাঙ্গতে দুইবার ভাবেননি তিনি; লাফিয়ে ফ্রাঙ্ক রিবেরির মাথা সমান বুট তুলতেও কষ্ট হয়নি।
এই হিংস্র মানসিকতার জন্য বিতর্কের মুখোমুখিও হতে হয়েছে পর্তুগিজ সেনাপতিকে। রেফারির ছোট্ট নোটবুকে বারবার নাম উঠেছে তাঁরা। কারও মতে, আবার তিনি ফুটবল মাঠে ফুটবলের চেয়ে বেশি মারামারি চান। তবে সব বিতর্ক ছাপিয়ে এই তারকা যে থেকে যাবেন ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে সেটা অন্তত নিশ্চিত; যতবারই বয়সের ভারে নুইয়ে পড়বে কেউ ততবারই অনুপ্রেরণা হয়ে আসবেন তিনি।