ম্যাচ এবং পিচের পরিস্থিতি অনুযায়ী বোলার পরিবর্তনের ঘটনা তো নতুন না। সচারচরই ঘটে। পেসারে পরিবর্তে অন্য কোন স্পিনার আসেন বোলিং এ কিংবা একেবারে উল্টো ঘটনাটাও ঘটে। কিন্তু একজন পেসারকে সাধারণত আমরা দেখিনা হুট করে স্পিনার বনে যেতে। অথবা তাঁর বিপরীত চিত্রের সাথেও আমরা খুব একটা বেশি পরিচিত নই।
তবে এমন অদ্ভুত ঘটনার বেশকিছু উদাহরণ কিন্তু ক্রিকেটের ইতিহাস ঘাটলেই পাওয়া যাবে। আলোচনার বিষয়বস্তু সেই সকল খেলোয়াড়েরা, যারা কিনা তাঁদের ক্যারিয়ারে দুই ধরণের বোলিং-ই করেছেন কোন না কোন সময়ে।
- ওলি রবিনসন (ইংল্যান্ড)
সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ যদি টেনে আনা হয় তবে ওলি রবিনসনের ঘটনাটাই প্রথমে আসে। ২০২১ সালেই অভিষেক হওয়া ওলি রবিনসন মূলত একজন পেস বোলার। আট টেস্ট ম্যাচ থেকে ঝুলিতে পুরেছেন ৩৭ উইকেট। তবে চলমান অ্যাশেজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট তিনি অফ-স্পিনকে বেছে নিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসের ৩৪তম ওভারটিতে তিনি স্পিন বল করেছিলেন।
- শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
পুরোদস্তুর একজন ব্যাটার হিসেবেই সুখ্যাতি অর্জন করা শচীন টেন্ডুলকার দলের প্রয়োজনে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে লেগ স্পিন বোলিং করতেন। ওয়ানডেতে তাঁর রানের পাহাড়ের পেছন থেকে মাঝেসাঝেই উঁকি দেয় বল হাতে নেওয়া ১৫৪টি উইকেট। তাছাড়া নিজের ক্যারিয়ারে তিনি পেস বোলিংও করেছিলেন কালেভদ্রে। তবে তাঁর নাকি ইচ্ছেও ছিলো পেস বোলার হবার কিন্তু তা আর হওয়া হয়ে ওঠেনি।
- অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস (অস্ট্রেলিয়া)
নিকট অতীতে আন্ড্রু সাইমন্ডসকে প্রায়শই দেখা যেতো স্পিন এবং পেস বোলিং এর মাঝে অদল-বদল করতে। আসলে তিনি দলের প্রয়োজন মাফিক বল করবার ধরণের বদল আনতেন। বেশ কার্যকরী বোলার ছিলেন সাইমন্ডস। অলরাউন্ডার হিসেবেই দলে খেলেছেন এবং দলের জয়ের বারংবার অবদান রেখেছেন তিনি। ওয়ানডেতে তাঁর উইকেট রয়েছে ১৬৫টি।
- সোহেল তানভির (পাকিস্তান)
ভিন্নধর্মী পেস বোলিং অ্যাকশন দিয়েই মূলত বেশ আলোচিত হয়েছিলেন পাকিস্তানের বা-হাতি পেসার সোহেল তানভির। খুব কার্যকরী বোলার সোহেল তানভির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্পিনার হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছিলেন। ভারতের বিপক্ষে ২০০৭ সালে কোলকাতা টেস্টে তিনি একবার স্পিন বোলিং করেছিলেন। তবে খুব নিয়মিত তাঁকে বোলিং এর ধরণে পরিবর্তন আনতে দেখা যায়নি।
- মনোজ প্রভাকর (ভারত)
ভারত দলের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন অলরাউন্ডার মনোজ প্রভাকর। তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে মূলত ছিলেন একজন মিডিয়াম পেস বোলার। তবে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি নিজের স্বভাবচারিত বোলিং ধরণ পরিবর্তন করে বনে গিয়েছিলেন একজন স্পিনার। তবে সচারচর তাঁকে স্পিন বোলিং করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
- নাসির হোসেন (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ জাতীয় দলের এক সময়কার নিয়মিত মুখ নাসির হোসেন তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন অবধি একজন স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেই বহুল সমাদৃত। কিন্তু ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলোম্বো টেস্টের প্রথম ইনিংসের নব্বইতম ওভারে মিডিয়াম পেস বোলার হিসেবে এক নতুন নাসির হোসেনকে আবিষ্কার করে সবাই।
- কপিল দেব (ভারত)
ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কপিল দেব ছিলেন একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার। ভারতের অন্যতম সেরা পেস বোলারদের একজন হিসেবেই তাঁকে গণ্য করা হয়। নিজের ক্যারিয়ারে কেবলমাত্র একটি বার তাও আবার একটি বলের জন্যে কপিল দেব বনে গিয়েছিলেন স্পিন বোলার। ১৯৮৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ওয়ানডে ম্যাচে জয় যখন সুনিশ্চিত তখন তিনি এমন কান্ড করেন।
- বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)
বেন স্টোকস যে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার তা নিশ্চয়ই কারো অজানা নয়। তবে এখন অবধি তাঁর ক্যারিয়ারে একবার তিনি পেসার থেকে রুপান্তরিত হয়ে গিয়েছিলেন স্পিনার। পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচে যখন উইকেটের দেখা পাচ্ছিলো না ইংল্যান্ড তখন একজন স্পিনার হয়ে দলের পরিস্থিতি পরিবর্তনের প্রচেষ্টায় তিনি স্পিন বোলিং করেন।
- রোহিত শর্মা (ভারত)
নিজের ক্যারিয়ারে শুরুতে সচারচরই রোহিত শর্মা অফ স্পিন বোলিং করতেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে। এমনকি আইপিএলে তাঁর একটি হ্যাট্রিকও রয়েছেন। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনজুরি জনিত কারণে যখন নবদ্বীপ সাইনি মাঠ ছেড়ে চলে যান তখন রোহিত শর্মাকে সাইনির রেখে যাওয়ার ওভারটি সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি সবাই খানিক তাক লাগিয়ে মিডিয়াম পেস বোলিং করেন।