যখন পুলিশ ছিলেন

আমি একবার একজনকে ওরকম সাড়ে তিনটায় হাজতে ঢুকিয়েছিলাম। কাগজপত্রের কাজ শেষ করেছিলাম ৫টায়। এরপর বিছানায় গিয়ে একটু ঘুমানোর পর আড়াই ঘন্টার মধ্যেই উঠে পড়তে হয়েছিলো। এরপর গাড়ি চালিয়ে ক্রিকেট ক্লাবে গেলাম, সেখানে সন্ধ্যা ৬টা অবধি খেললাম।

বন্ড মানেই হাতে পিস্তল, মুখে সিগার, সামনে নারী এবং লক্ষ্যে অভিযান।

না, জিরো জিরো সেভেনের সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। একটু এদিক ওদিক করে নিলে জেমস বন্ড কেবল নয়, দুনিয়ায় এমন রোমাঞ্চ তৈরী করা আরেক জন বন্ডও আছেন-শেন বন্ড।

এক সময়ের দ্রুততম বোলার শেন বন্ড।

ক্রিকেটে বন্ড কী করেছেন, কী করতে পারতেন, সে নিয়ে অনেক আলাপ হয়েছে। আজ বরং তার পুলিশ থেকে ক্রিকেটার হওয়ার গল্পটা করা যাক।

বন্ড ছোটবেলা থেকেই ক্রাইস্টচার্চের নানা প্রান্তে ক্রিকেট খেলে বেড়াতেন। কিন্তু যখন প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু করেন, কল্পনাই করতে পারেননি যে, এটাকেই জীবিকা করে নিতে পারবেন। কারণ, ক্রিকেটে সে সময় টাকা ছিলো না। ফলে ক্রিকেট খেলাকে প্রায় শিকেয় তুলেই ২৪ বছর বয়সে ক্রাইস্টচার্চ পুলিশে যোগ দিলেন সত্যিকারের বন্ড হতে। এর তিন বছর আগে তার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট অভিষেক হয়েছিলো। সে সময় একটা চার দিনের ম্যাচের জন্য ৮০০ মার্কিন ডলারের মতো পেতেন। আর ক্যান্টারবুরির সাথে প্রথম চুক্তি ছিল ২,০০০ ডলারের।

এটা দিয়ে চলা সত্যিই খুব কঠিন ছিল। ফলে এক গ্রীষ্মে পুলিশকর্মী হতে ক্রিকেট থেকে বের হয়ে গেলেন বন্ড। তবে সমস্যা হলো, খুব দ্রুতই বন্ড বুঝে ফেললেন, খেলাটাকে খুব মিস করছেন। ফলে পরের শীতেই একটা পরিকল্পনা করে ফেললেন, পুলিশের কাজের সাথে ক্রিকেটটাকে মিশিয়ে ফেললেন।

আমার সারা বছরের সরকারী ছুটির বদলে বছরে একবারে ছয় থেকে সাত সপ্তাহ ছুটি নেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেললেন। অ-মৌসুমের এই সব ছুটি জমিয়ে ফেলতে শুরু করলেন এবং গ্রীষ্মে এসে ক্রিকেট খেলতে শুরু করলেন।

বন্ড ক্রাইস্টচার্চ মধ্যাঞ্চলের একজন কনস্টেবল ছিলেন।

শুক্রবার ও শনিবার সন্ধ্যার কাজের শিফট শুরু হতো ৭টায় এবং শেষ হতো গিয়ে ভোর ৪টায়। ভোর ৪টাও এমন কোনও বড় ব্যাপার নয়। আপনি যদি সাড়ে তিনটায় কাউকে হাজতে ঢোকান, সব প্রক্রিয়া শেষ করতে এবং কাগজের কাজ শেষ করতে আপনাকে চারটারও অনেক পরে বের হতে হবে।

বন্ড এই সময়ের কথা বলতে গিয়ে বলছিলেন, ‘আমার মনে আছে, আমি একবার একজনকে ওরকম সাড়ে তিনটায় হাজতে ঢুকিয়েছিলাম। কাগজপত্রের কাজ শেষ করেছিলাম ৫টায়। এরপর বিছানায় গিয়ে একটু ঘুমানোর পর আড়াই ঘন্টার মধ্যেই উঠে পড়তে হয়েছিলো। এরপর গাড়ি চালিয়ে ক্রিকেট ক্লাবে গেলাম, সেখানে সন্ধ্যা ৬টা অবধি খেললাম। তারপর গোসলের জন্য শাওয়ারে ঝাঁপিয়ে পড়লাম, এরপর আমার পরের শিফটের কাজের জন্য পুলিশ স্টেশনে ছুটলাম। মাঝরাত অবধি ছোটাছুটি করতে হলো, একেবারে যেন বিধ্বস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম। ওই শিফটে আমি বেশ কয়েকটা রেড বুল শেষ করে ফেলেছিলাম।’

বন্ড বলছিলেন, এরকম রাতের শিফটে ডিউটি করে খেলতে গিয়ে মাঠে একটু ঘুমানোর সুযোগ পাওয়ার জন্য রীতিমতো প্রার্থনা করতেন, ‘এরকম যেদিন দেরি করে কাজ শেষ হতো, মাথা নিচু করে মাঠে যেতাম। আশা করতাম, আমাদের অধিনায়ক টসে জিতবে এবং ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেবে। অথবা প্রতিপক্ষ অধিনায়ক আমাদের ব্যাটে পাঠাবে। যাতে আমি আর খানিকটা সময় ড্রেসিংরুমে একটু ঝিমিয়ে নিতে পারি। এটা খুব চ্যালেঞ্জিং একটা সময় ছিল। কিন্তু জীবন তো এরকমই।’

এর কিছুদিনের মধ্যেই বন্ডকে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের সিরিজের জন্য নির্বাচন করা হলো। আর কিছুদিন পর তিনি নিজেকে অস্ট্রেলিয়ায় নিউজিল্যান্ড দলের হয়ে অভিষেকের জন্য আবিষ্কার করলেন। প্রতি টেস্টের জন্য ৩ হাজার ডলারের মতো পাওয়া শুরু করলেন। আর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ওই সফরের শেষে তাকে ১৫ হাজার ডলারের একটা চুক্তি প্রস্তাব করলো। বন্ড হতভম্ব হয়ে গেলেন। ক্রিকেট খেলেও এতো টাকা পাওয়া সম্ভব, ‘জিসাস, দারুণ তো! আমি এখন খেলার জন্য, আর জিমে যাওয়ার জন্য কিছু টাকাও পাচ্ছি।’

এখান থেকেই আসলে বন্ড সিদ্ধান্ত নিলেন পুলিশের চাকরিটা ছেড়ে দেবেন।

এরপর যেমনটা হওয়ার কথা ছিলো, জীবনটা অবশ্য তেমন রূপকথার মত হয়নি। ইনজুরি এসে বারবার থমকে দিয়েছে বন্ডকে। শেষ পর্যন্ত আইসিএলে গেছেন। বন্ড অবশ্য বারবারই দাবি করেন, তিনি টাকার লোভে আইসিএলে যাননি। নতুন এক ধরণের ক্রিকেটের টানে গিয়েছিলেন। তবে এটা সত্যি যে, ওখানেই শেষ হয়ে যায় তার ক্যারিয়ারের স্বপ্নটা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...