পর্তুগালের শিরোপা রক্ষার লড়াই

কথায় আছে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। পর্তুগালের সামনে চ্যালেঞ্জটা অনেকটা সেরকমই। শিরোপা জেতার পথটা তাদের জন্য সহজ ছিল না। কিন্তু এই পথটা তাদের জন্য বেশ কঠিন। টানা দ্বিতীয়বারের মতন ইউরো শিরোপা জিতে ইতিহাসে নাম লেখানোর সুযোগ আছে অধিনায়ক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। সে লক্ষ্য কী পূরণ করতে পারবেন রোনালদো বাহিনী?

গোলরক্ষক

রুই পাট্রিসিও (উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স), অ্যান্থনি লোপেস (অলিম্পিক লিওঁ), রুই সিলভা (গ্রানাদা)

ডিফেন্ডার

রুবেন দিয়াজ (ম্যানচেস্টার সিটি), হোসে ফন্ত (লিল), পেপে (এফসি পোর্তো) জোয়াও ক্যানসেলো (ম্যানচেস্টার সিটি), নেলসন সেমেদো (উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স) রাফায়েল গেরেইরো (বরুসিয়া ডর্টমুন্ড), নুনো মেন্দেস (স্পোর্তিং লিসবন)

মিডফিল্ডার

উইলিয়াম কারভালহো (রিয়াল বেতিস), দানিলো পেরেইরা (পিএসজি), জোয়াও পালহিনিয়া (স্পোর্তিং লিসবন), রেনাতো সানচেস (লিঁল) ব্রুনো ফার্নান্দেস (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), পেদ্রো গনকালভেস (স্পোর্তিং লিসবন) বের্নার্দো সিলভা (ম্যানচেস্টার সিটি), রাফা সিলভা (বেনফিকা)

ফরোয়ার্ড

গনসালো গেদেস (ভ্যালেন্সিয়া), জোয়াও ফেলিক্স (আতলেতিকো মাদ্রিদ), ডিয়াগো জোটা (লিভারপুল) ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (জুভেন্টাস), আন্দ্রে সিলভা (আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট),

কোচ: ফার্নান্দো সান্তোস

অধিনায়ক: ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো

 

  • শক্তিমত্তা

এবারে পর্তুগালের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের স্কোয়াড। পর্তুগালের জার্সিতে রোনালদোকে সবসময়ই আক্ষেপ করতে হয়েছে ভালো সতীর্থ পাননি বলে। টুর্নামেন্টে রোনালদো নিজের মতন খেলে গিয়েছেন, অন্যদিকে সতীর্থদের ভুলে ম্যাচ, সেই সাথে টুর্নামেন্টও জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। কিন্তু এবার সেই অভিযোগ করার সুযোগ নেই রোনালদোর। এই মৌসুমে পর্তুগালের জার্সিতে অসাধারণ এক দল পেয়েছেন রোনালদো।

সামনে রোনালদোর সতীর্থ হিসেবে আছেন ডিয়েগো জোটা আর জোয়াও ফেলিক্স। দু’জনেই কাটীয়েছেন অসাধারণ এক মৌসুম। পেছন থেকে বল বানিয়ে দেওয়ার জন্য রয়েছেন ম্যানচেস্টারা ইউনাইটেডের ব্রুনো ফার্নান্দেস ও ম্যানচেস্টার সিটির বার্নার্ডো সিলভা।

দুজনে পুরো মৌসুম দুই চিরশত্রুর হয়ে খেললেও পর্তুগালের জার্সিতে দুজনেই জুটি ভয়ঙ্কর। সেই সাথে ডিফেন্সিভ মিডে রুবেন নেভেস। ইংলিশ লিগ কাঁপানো মিডফিল্ডার সকলেই পর্তুগালের পতাকাতলে।

শুধু যে মূল একাদশই আছে তাদের, তা বললে কিন্তু ভুল হবে। তাদের ব্যাকআপ হিসেবেও তৈরি আছে তারকারা। ১৭ বছর পর স্পোর্টিং সিপিকে শিরোপা জেতানো পেদ্রো গনকালভেস ও রাফা সিলভার মতো তারকারা আছে বেঞ্চে।

শুধু তাই নয় লিলের হয়ে লিগজয়ী রেনাতো সানচেস, পিএসজির দানিলো বেঞ্চ গরম করবেন তাদের সাথে। প্রয়োজন পড়লে কোচের ডাকে সদা প্রস্তুত তারা। আক্রমণেও ব্যাকআপ হিসেবে আছেন জার্মান লিগের দ্বিতীয় সেরা গোলস্কোরার আন্দ্রে সিলভা।

ডিফেন্সে তো পেপে, ফন্তের মতন তারকারা আছে ১০ বছরের উপরে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছেন রুবেন ডিয়াজ। তার আগমন পুরোপুরি বদলে দিয়েছে পেপ গার্দিওলার মৌসুম। ডিফেন্সে এত তারকা যে কাকে রেখে কাকে খেলাবেন তা নিয়েই চিন্তার বলিরেখা ফার্নান্দো সান্তোসের কপালে।

কোচের কথা না বললেই নয়। ফার্নান্দো সান্তোস পর্তুগালের কোচ হয়ে আছেন ২০১৪ সাল থেকে। সেই থেকে মাত্র ৪টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হেরেছেন তিনি। জিতিয়েছেন পর্তুগালকে ইউরো শিরোপা। তার ক্ষুরধার মস্তিষ্কই এতদিন ছিল পর্তুগালের গেমচেঞ্জার। এবারেও তা নিশ্চয় পরিবর্তন হবে না।

  • দুর্বলতা

এতক্ষণ ধরে শক্তিমত্তা নিয়ে আলোচনা করার পর দূর্বলতা বের করতে গেলে আতশী কাচ নিয়েই বসতে হয়। সত্যি বলতে এই দলের দূর্বলতা বলতে গেলে একটাই জায়গা, সেটা হলো ডিফেন্ডারদের বয়স। রুবেন ডিয়াজ নিজেকে সিটির জার্সিতে প্রমাণ করলেও এই দলের সাথে কতটা মানাতে পারবেন সে নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। যে কারণে সান্তোস ভরসা রাখতে পারেন নিজের ওল্ডগার্ড পেপে আর ফন্তের উপর।

পেপে ফন্তে এই মৌসুমেও দূর্দান্ত খেলেছেন নিজেদের দলের হয়ে। কিন্তু বয়সটা তাদের ছাড়িয়েছেন ৩৫ এর কোটা। ফ্রান্সের দূর্দান্ত অ্যাটকিং লাইনআপের সামনে এই ডিফেন্স একটা ভুল করলেই মাশুল দিতে হবে তাদের। যেহেতু ফার্নান্দো সান্তোস ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলান, তাই ভয়টা একটু বেশিই।

  • সম্ভাব্য একাদশ:

দলের মূল একাদশ অনেকটা এরকমই থাকবে। কিন্তু প্রয়োজনমতো পেপের জায়গায় আসতে পারেন ফন্ত। রুবেন ডিয়াজ বড় কোন ভুল না করলে তার জায়গাটা পাকাপোক্তই। আর ডিফেন্সিভ মিডে দানিলো-নেভেসের জায়গায় ব্যাক-আপ হিসেবে আছেন অভিজ্ঞ মুতিনহো ও তরুণ রেনাতো সানচেজ।

প্রতিপক্ষ ও ম্যাচ: (বাংলাদেশ সময়)

হাঙ্গেরি, ১৫ জুন, রাত ১০টা

জার্মানি, ১৯ জুন, রাত ১০টা

ফ্রান্স, ২৪ জুন, রাত ১টা

বি: দ্র: রাত ১২টার পর পরবর্তী দিন ধরা হয়েছে।

টানা দ্বিতীয়বারের মতন ইউরো শিরোপা জেতার সুযোগ রোনালদো। সেই সাথে নিজের নামের পাশে আরেকটি আন্তর্জাতিক শিরোপ। মৌসুমটা খুব একটা ভালো যায়নি। এবছর ইউরোতে ইতিহাস গড়তে পারলে ব্যালন ডি’অরের দৌড়েও অনেকদূর এগিয়ে যাবেন রোনালদো। সবমিলিয়ে পর্তুগালের গোল্ডেন জেনারেশনকে সাথে নিয়ে এই সূবর্ণ সুযোগ হেলায় নিশ্চয় হারাবেন না রোনালদো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link