বিশ্ব মঞ্চে সাফল্য বিবেচনায় ইউরোপের দল পর্তুগালকে সেরাদের তালিকায় স্থান কোনভাবেই দেওয়া যায় না। এখন পর্যন্ত দলটি ফুটবলের মহাযজ্ঞে খেলার সুযোগ পেয়েছে মাত্র সাতবার এবং সেরা সাফল্য ১৯৬৬ এবং ২০০৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। তবে সাম্প্রতিক সময় বিচারে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের পিছিয়ে রাখার কোন সুযোগ নেই। গত কয়েক বছর ধরেই ফুটবল বিশ্বের সেরা দেশগুলোর একটি হয়ে উঠেছে তাঁরা।
স্বাভাবিকভাবেই তাই কাতার বিশ্বকাপে পর্তুগালকে নিয়ে প্রত্যাশার কমতি নেই ভক্ত-সমর্থকদের। কিন্তু একঝাঁক তারকায় পরিপূর্ণ স্কোয়াডে কাদের শুরুর একাদশে জায়গা দিবেন কোচ সান্তোস- সেটিই এখন আলোচনার বিষয়। নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম ভারসাম্যপূর্ণ স্কোয়াড নিয়েই মধ্যপ্রাচ্যে উড়াল দেবে পর্তুগাল। সব পজিশনে একাধিক ভাল খেলোয়াড় থাকায় সেরা একাদশ বেছে নেয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং।
রক্ষণভাগ নিয়ে অবশ্য খুব একটা ভাবতে হবে না সান্তোসকে। অভিজ্ঞ পেপে এবং রুবেন দিয়াস সেন্টার ব্যাক হিসেবে সেরা পছন্দ, এছাড়া জোয়াও ক্যান্সেলো এবং রাফায়েল গুরেইরা থাকবে ফুলব্যাকের দায়িত্বে। কিন্তু মিডফিল্ড এবং আক্রমণ ভাগে কাদের দেখা যেতে পারে, সম্ভাব্য উত্তর এবার খুঁজে নেয়া যাক।
- সেন্টার মিডফিল্ডারঃ রুবেন নেভেস, জোয়াও মৌতিনহো, ম্যাথিয়ুস নুনেজ, জোয়াও পালিনহা, ডানিলো পেরেইরা, উইলিয়াম কারভালহো
মধ্যমাঠে এত এত সেরা খেলোয়াড় খুব কম দলেই রয়েছে। তাই মধুর সমস্যাতেই পড়তে হচ্ছে কোচ সান্তোসকে। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের পজিশনে অনেকদিন জোয়াও মৌতিনহোকে দেখা গেলেও বর্তমানে কোচের পছন্দ রুবেন নেভেসকে।
লং বল খেলার সামর্থ্য আর প্লে-মেকিংয়ে নিপুণতা এই ২৫ বছর বয়সী মিডফিল্ডারকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রেখেছে। এছাড়া উলভসের ম্যাথিয়ুস নুনেজ, ফুলহ্যামের পালিনহা, পিএসজির ভিতিনহা, ডানিলো পেরেইরা শুরুর একাদশে খেলার মত যথেষ্ট সক্ষমতা রাখেন। সবাইকে পেছনে ফেলে শেষমেশ কে সুযোগ পাবেন বিশ্বকাপের একাদশে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
- অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারঃ ব্রুনো ফার্নান্দেজ, বার্নান্দো সিলভা, রেনেতো সানচেজ, ভিতিনহা
পর্তুগালের কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয় নাম্বার টেন পজিশনে খেলা ফুটবলারকে। আর এই গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য পর্তুগালের রয়েছে ব্রুনো ফার্নান্দেজ এবং বার্নান্দো সিলভার মত অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার। এদের পাশাপাশি রেনেতো সানচেজের বল ক্যারি আর থ্রু-পাস মুগ্ধ করেছে ভক্ত-সমর্থকদের। আবার তরুণ ভিতিনহাও হতে পারেন সান্তোসের ট্রাম্প কার্ড। আপাতত পর্তুগালের মধ্য মাঠে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে নেভেস, ব্রুনো এবং ভিতিনহার নাম।
- রাইট উইঙ্গারঃ বার্নান্দো সিলভা, ওটাভিও
ভার্সেটাইল ফুটবলার বার্নান্দো সিলভাকে জাতীয় দলে মিডফিল্ডের পরিবর্তে উইংয়েও দেখা যেতে পারে। ম্যানসিটির এই তারকার ক্রিয়েটিভিটি, কাট ইন করার সামর্থ্য আর অভিজ্ঞতা ব্যবহার করতে পারলে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠবে পর্তুগিজ আক্রমণভাগ। তবে কোয়ালিফাইং রাউন্ডের প্লে-অফ ম্যাচে গোল এবং অ্যাসিস্ট করা ওটাভিও এই পজিশনে বার্নান্দোর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। গতিময় এই ফুটবলারের উপর আস্থাও আছে কোচ সান্তোসের। যদিও ইনজুরির কারণে দলের বাইরে থাকায় শুরুর একাদশে জায়গা পাওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে গিয়েছেন পোর্তোর এই উইঙ্গার।
- লেফট উইঙ্গারঃ জোয়াও ফেলিক্স, দিয়াগো জোতা, রাফায়েল লিও, গঞ্জালো গুইডেস
গতি, ড্রিবলিং আর হাই প্রেসিং – একজন উইঙ্গারের কাছে যতটুকু চাওয়ার থাকে ততটুকু দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে বেশ কয়েকজন পর্তুগিজ লেফট উইঙ্গার। এসি মিলানের রাফায়েল লিও এই পজিশনে সবচেয়ে সেরা পছন্দ, ক্লাবের হয়ে দারুণ খেলতে থাকা লিও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ধরে রেখেছেন ফর্ম। তবে এখন পর্যন্ত গোল করতে না পারা পিছিয়ে দিয়েছে তাকে।
অন্যদিকে লিভারপুলের ফরোয়ার্ড দিয়াগো জোতা পর্তুগালের জার্সি গায়ে ইতোমধ্যে নয় গোল করেছেন, তাই বিশ্বকাপেও তাঁর উপর ভরসা রাখাটা যথেষ্ট যৌক্তিক বটে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের জোয়াও ফেলিক্সের সাম্প্রতিক ফর্ম আশানুরূপ না হলেও কোচের গুড বুকে নাম আছে এই তরুণ ফুটবলারের। একই কথা বলা যায় উলভসের গঞ্জালো গুইডেসের ক্ষেত্রেও।
- স্ট্রাইকারঃ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, আন্দ্রে সিলভা, জোয়াও ফেলিক্স
দলের অধিনায়ক, দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা – ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর একাদশে জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে সংশয় থাকার কথা নয়। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না এই স্ট্রাইকারের। এখন পর্যন্ত লিগে গোলের খাতা-ই খুলতে পারেননি তিনি। অবশ্য রোনালদোর ব্যাকআপ হিসেবে স্কোয়াডে থাকা আন্দ্রে সিলভা নিজেও সেরা ছন্দের ধারেকাছে নেই।
যদিও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো প্রায় অটো চয়েজ, তবে দ্রুতই ফর্মে ফিরতে না পারলে হয়তো দলের স্বার্থে এই কিংবদন্তিকে বেঞ্চে রাখার কথা ভাবতেও পারেন কোচ সান্তোস। সেক্ষেত্রে ‘নাম্বার নাইন’ রোলে দেখা যেতে পারে জোয়াও ফেলিক্স কিংবা দিয়াগো জোতাকে।