হাসিমুখে দিও বিদায়…

ফুটবলের নতুন মৌসুম শুরুর এখনও এক মাস হয়নি। দলের প্রয়োজনীয় অদল বদল সেরে দলগুলো কেবল নিজেদের গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে। অথচ ট্রান্সফার শেষ হবার সপ্তাহ খানেকের মাঝেই কোচ ‘স্যাক’ করতে শুরু করেছে দলগুলো। যার তালিকায় সর্বশেষ নাম টমাস টুখেল। চেয়ার হারানোর শংকা চোখ রাঙানি দিচ্ছে গত মে মাসেই নতুন চুক্তি করা ইয়ুর্গেন ক্লপকেও, নতুন মৌসুমে লিভারপুল যে পা হড়কাচ্ছে বারবার।

কোচের চাকরিটাই এমন। যে কোনো সময় চাকরি চলে যেতে পারে। এমন ঝুঁকি- শংকা নিয়ে প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকতে হয় ফুটবল কোচদের। দল একটু খারাপ খেললে প্রথমেই খড়গ নেমে আসে কোচের উপর। এই দেখুন না চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোর পর এক মৌসুম যেতে না যেতেই চাকরি খোয়াতে হলো টমাস টুখেলকে। অথচ অনেকটা দল পেয়ে সম্পূর্ণ গুছিয়ে ওঠার জন্য এক সপ্তাহও সময় পাননি এই জার্মান। স্কট পার্কার, সিনিসা মিহালজোভিচ, ডমিনিকো টেডেস্কোও চাকরি হারিয়েছেন এক সপ্তাহের মাঝেই।

খুব একটা স্বস্তিতে নেই লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপও। মার্সিসাইডের দলটার দায়িত্ব যখন পান, তখন দলটা ভুগছিলো প্রবলভাবে। সেখান থেকে ফিরিয়ে জিতিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রায় তিন দশক পর সমর্থকদের দিয়েছেন লিগ জেতার স্বাদ। কিন্তু ফুটবল সমর্থকদের স্মৃতি খুবই দুর্বল, একটু ব্যর্থতাতেই তারা ভুলে যেতে পারে অতীত সাফল্যের কথা। বোর্নমাউথের বিপক্ষে ৯-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে জয়ও তাই মন ভরাতে পারেনি ভক্ত-সমর্থকদের। নাপোলির বিপক্ষে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর তাই সমর্থকদের একাংশ আঙুল তুলছে ক্লপের দিকেই।

অথচ এই মৌসুমে একবারের জন্যও নিজের পছন্দের একাদশ খেলাতে পারেননি ক্লপ। ইনজুরি কিংবা নিষেধাজ্ঞার কারণে তাকে বেশিরভাগ সময়েই মাঠে নামাতে হয় বেঞ্চের খেলোয়াড়দের। জর্ডান হেন্ডারসন, নাবি কেইতা, থিয়াগো আলকান্তারা, ইব্রাহিমা কোনাটে, ডিয়েগো জোটা, অক্সালেড-চেম্বারলেইনরা ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে চলে গিয়েছেন একদম মৌসুমের শুরুতেই।

বাধ্য হয়েই ক্লপকে মাঠে নামাতে হয়েছে অপেক্ষাকৃত নতুনদের। নাপোলির বিপক্ষে তো লিভারপুলের মাঝমাঠ সামলেছেন আঠারো বছরের দুই তরুণ – হার্ভে এলিয়ট আর ফাবিও কারভালহো। এর মাঝেই দ্বিতীয়জন সদ্যই যোগ দিয়েছেন দলে। প্রথম একাদশের এতজন ফুটবলার বাইরে থাকলে মাঠের খেলার তার প্রভাব পড়তে বাধ্য।

এ মৌসুমে এখনো পর্যন্ত ২ জয় আর ৩ ড্রয়ের পাশাপাশি এক হারে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার সাত নম্বরে আছে লিভারপুল। পয়েন্ট তালিকা থেকেই স্পষ্ট দলটি ভুগছে ধারাবাহিকতায়। বোর্নমাউথকে গোলবন্যায় ভাসালেও এক ম্যাচ পরেই গোলশূন্য ড্র করেছে এভারটনের বিপক্ষে। পয়েন্ট হারিয়েছে ফুলহাম-ক্রিস্টাল প্যালেসের মতো নিচের সারির দলগুলোর বিপক্ষে।

এছাড়া ডারউইন নুনেজের তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা ক্লপের কপালের চিন্তার ভাঁজ কেবলই বাড়িয়েছে। এ মৌসুমেই ৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তাকে দলে এনেছেন ক্লপ, মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই গোল করে সেই আস্থার প্রতিদানও দিয়েছিলেন দারুণভাবে। কিন্তু অহেতুক লালকার্ড হজম করে দলকে ঠেলেছেন খাঁদের কিনারায়। তবে ক্লপের সবচেয়ে বড় চিন্তা বোধহয় দলের দুই সেরা তারকা ভ্যান ডাইক আর মোহাম্মদ সালাহকে নিয়ে।

এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা ফুটবলার সালাহ গত কয়েক মৌসুম জুড়ে গোল করাটাকে রীতিমতো ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলেছেন। দুই মৌসুমে জিতেছেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরষ্কার। অথচ এই মৌসুমে এখনো পর্যন্ত বিবর্ণ এই মিসরীয় তারকা, ছয় ম্যাচ জালের দেখা পেয়েছেন মাত্র দুবার। মাঠের খেলাতেও কোথাও যেন ছন্দটা হারিয়ে ফেলেছেন এই তারকা।

অন্যদিকে, ভ্যান ডাইকের অবস্থাও অনেকটা সালাহর মতো, ডিফেন্সে তার পার্টনার ইব্রাহিমা কোনাটে ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে থাকবেন বেশ কয়েক মাস। অথচ তার নতুন পার্টনার জো গোমেজের সাথে ঠিকভাবে মেলবদ্ধন গড়ে তুলতেই পারছেন না এই ডাচ ডিফেন্ডার, ফলশ্রুতিতে প্রতি ম্যাচেই লিভারপুল হজম করছে হাস্যকর সব গোল। যত দ্রুত এই দুই তারকা ফর্মে ফিরবেন, ততই মঙ্গল লিভারপুল এবং ক্লপের জন্য।

ক্লপের জন্য আশার ব্যাপার হল এখনও বোর্ড এবং সমর্থকরা আশাবাদী দল নিয়ে। কিন্তু সাফল্য ছাড়া এই সমর্থন মাথার উপর বেশিদিন থাকবে না সেটা ভালো করেই জানেন এই জার্মান। ক্লপের লিভারপুল অধ্যায় আরো দীর্ঘায়িত হয় কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো মিলবে এই মাসের শেষেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link