‘সত্যি বলতে আমি নিজেকে কেবল বিগ হিটার হিসেবে দেখিনা। বরং আমি মনে করি আমি একজন শক্তিশালী ব্যাটসম্যান’ – গতকাল ম্যাচ শেষে নিজেকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার রোভম্যান পাওয়েল। সত্যি বলতে গতকাল পুরো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন তিনি। টি- টোয়েন্টি ঘরানায় প্রতিটি ওভার, প্রতিটি বল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একটি বাজে ওভার যে কিভাবে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে তা গতকাল আবারও একবার প্রমাণিত হল।
ষোলতম ওভারের আগ অবধি ওয়েস্ট ইন্ডিজের লাগাম টেনে ধরে রাখতে পেরেছিলেন বাংলাদেশি বোলাররা। তখন তিন উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থান ছিল ১১৯ রানের ঘরে। কিন্তু ১৬ তম ওভারটির দায়িত্ব দিয়ে সাকিব আল হাসানকে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু, সাকিবের ডেলিভারিগুলোকে রীতিমতো হেসেখেলে উড়িয়ে দিয়েছেন রোভম্যান পাওয়েল। এই এক ওভারেই ২৩ টি মূল্যবান রান তুলে নেন ক্যারিবিয়ানরা। যা একদিকে কাল হয়ে দাড়ায় বাংলাদেশ দলের জন্য, আর অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য তা সোনায় সোহাগা।
পাওয়েল নিজেও মানেন যে ১৬ তম ওভারটি ম্যাচের গতিপথকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করেছিল।ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ স্বীকার করেন, ‘পাওয়েল আজ অনবদ্য ছিল। সে আমাদের কাছ থেকে খেলাটা কেড়ে নিয়েছে।’
সাকিবের ওভারের পর তাসকিন ও শরিফুলের দুই ওভারেও ব্যাট হাতে সাইক্লোন জারি রাখলেন পাওয়েল–স্মিথ। তাসকিনের ওভারটি থেকে আসে ২১ রান আর শেষ ওভার করেতে আসা শরিফুল থেকে আসে ১৭। ফলে ২০ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাড়ায় ১৯৩। বাংলাদেশের পক্ষে এই রানের পাহাড় পাড়ি দেয়াটা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি তাই।
২৮ বলে ৬১ রান করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া পাওয়েল এর এমন শক্তিশালী পারফরমেন্স এর নেপথ্যের রহস্য তিনি নিজেই স্পষ্ট করলেন। তাঁর মতে, ‘আমি নিজেকে বড় হিটার হিসাবে দেখা বন্ধ করে দিয়েছি, বরং আমি নিজেকে ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখতে শুরু করেছি। এই আত্মবিশ্বাসের ফলে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আসে, আমি বুঝতে পারি কখন সিঙ্গেল নিতে হবে, কখন আক্রমণ করতে হবে। আমি মনে করি এটি এখন পর্যন্ত আমাকে ভালো ফল দিয়েছে।’
পলওয়েল আরও বলেন, ‘যেকোনো পেশাদার খেলায় বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং সেটি দক্ষতা এবং মানসিকতা উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে হতে হবে। আমি মনে করি আমি প্রতি বছরই উন্নতি করছি। আমি শেখা চালিয়ে যেতে চাই।’
পাওয়েল বলেছেন যে তারা জানেন যে, তাদের ভক্তরা আসন্ন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের থেকে আরও ভালো কিছুর অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক নিকোলাস পুরাণের অধীনে নবীণ ক্রিকেটারদের নিয়ে দল সাজিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রোভম্যান পাওয়েল বলেন, ‘সত্যি বলতে এটা দলের অভিভাবকদের পরিবর্তন। আমাদের কিংবদন্তি ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো এবং কাইরন পোলার্ড সরে গিয়ে আমাদের তরুণদের জায়গা করে দিয়েছেন। আমাদের এই বিশাল সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ক্যারিবিয়ান মানুষের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনতেই হতো।’
শক্তিশালী নবীনদের উপর ভরসা করেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বরাবরের মতো শক্তিশালী দল তৈরি করেছে। কিংবদন্তি গেইল, পোলার্ডের উত্তরসূরী হয়ে এবার মাঠে পাওয়েল-পুরাণদের রাজত্ব দেখবে বিশ্ব ক্রিকেট।