সাগরিকায় ঝড় ওঠে প্রায়শই। সাগর ঘেঁষা চট্টগ্রাম সেই প্রতিকূলতার সাক্ষী হয়েছে অনেকবার। তবে এবারের ঝড়টা আসলো বাইশ গজের ময়দানে। যে ঝড়ে রচিত হলো দারুণ এক সম্ভাবনার গল্প। হাসলো চট্টগ্রামের গ্যালারি, অবাক বিস্ময়ে ভাসলো পুরো বাংলাদেশ।
৬ ওভারে ৮১ রান! আইরিশ বোলারদের উপর আজ এমন আচমকা ঝড় বয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস আর রনি তালুকদার। যে তাণ্ডব প্রতিহত করার কোনোর পথই যেন খুঁজে পায়নি আইরিশরা।
এর আগে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ রান তুলেছিল। লিটন-রনির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এবার সেই রেকর্ডও ছাপিয়ে গেল বাংলাদেশ।
হ্যারি টেক্টরকে দিয়ে বোলিং শুরু করেছিলেন আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং। দুই ডানহাতি ব্যাটারের সামনে স্টার্লিং কেন একজন ডানহাতি অফস্পিনারকেই আনলেন তা অজানা। তবে আইরিশ অধিনায়কের সে সিদ্ধান্তে ছোটখাট একটা মাশুল ঠিকই দিতে হয় আয়ারল্যান্ডকে।
প্রথম ওভার থেকেই চড়াও হতে শুরু করলেন লিটন দাস। চতুর্থ বলে পেলেন প্রথম বাউন্ডারির দেখা। ডাউন দা উইকেটে এসে লং অন সোজা ছক্কা। ব্যাস, ঝড়ের আভাস সেখান থেকেই। প্রথম ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ১১ রান।
দ্বিতীয় ওভারে মার্ক অ্যাডায়ার এসেছিলেন প্রতিরোধ গড়তে। কিন্তু এবার পাল্টা আক্রমণের দায়িত্ব নিলেন রনি তালুকদার। অ্যাডায়ারের ওভারের দ্বিতীয় বলটা শর্ট লেন্থে পেয়ে মিডউইকেট বরাবর মারলেন ছক্কা। আর লিটন দাস সে ওভারেই স্কুপ করে তুলে নিলেন আরো একটা বাউন্ডারি। যদিও তাতে কিছুটা ভাগ্যের ছোঁয়া ছিল। তবে বাউন্ডারি লাইনে বল স্পর্শ করতে তেমন বিলম্ব ঘটেনি। আগের ওভারে ১১ রান তোলার পর এ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ১৪ রান। অর্থাৎ ২ ওভারে ২৫ রান।
এরপর গ্রাহাম হিউমের ওভারে কোনো ছক্কা আসেনি। ওয়ানডে সিরিজে আয়ারল্যান্ডের দারুণ বল করা এ বোলার তাঁর প্রথম ওভারে দেন মাত্র ৮ রান। আর তাতেই আগের দুই ওভারের ১২.৫০ রানরেট কমে নেমে গিয়েছে ১১ তে।
আর সেটিই যেন তাতিয়ে দিয়েছিল লিটনকে। পরের ওভারে বল করতে আসা ক্রেইগ ইয়াংয়ের উপর চড়াও হন। তাঁর এক ওভারেই নেন ১৮ রান। দুই চার আর এক ছক্কায় বাংলাদেশের ইনিংস ততক্ষণে ৪ ওভারেই পঞ্চাশ পাড়ি দিয়েছে। লিটনের পর ব্যাটহাতে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন রনি তালুকদারও।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে মার্ক অ্যাডারের টানা ৪ বলে মারেন ৪ বাউন্ডারি। আর তাতেই ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৮১ রান তোলে বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৩ সালে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে সর্বোচ্চ ৭৬ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। ১০ বছর বাদে সেই রেকর্ডটাই এবার বদলে যায় লিটন রনির সৌজন্যে।
শেষ পর্যন্ত লিটন-রনির জুটি ভাঙ্গে ৯১ রানে। ক্রেইগ ইয়াংয়ের বলে আউট হয়ে ফেরেন লিটন। আর তাতে ব্যক্তিগত ৪৭ রানেই থেমে যায় তাঁর ইনিংস। লিটন ফিফটি মিস করলেও এ দিন ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নিতে ভুল করেননি রনি তালুকদার। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন ২৪ বলে। শেষ পর্যন্ত ৩৮ বলে ৭ চার আর ৩ ছক্কায় সাজানো ৬৭ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন তিনি।
লিটন-রনির এমন ঝড়ো শুরুতে বাংলাদেশও পেরিয়েছে ২০০ রান। বৃষ্টির কারণে ২০ ওভারের কোটা শেষ না হলেও বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে জমা করে ২০৭ রান। মূলত এমন ইনিংসের পথটা তৈরি করে দিয়েছিল বাংলাদেশের দুই ওপেনারই। তাদের দুর্দান্ত শুরুতেই দুইশো পেরোনো স্কোরের স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’তে টাইগারদের ব্যাটিং দৈন্যদশার দুর্নাম বেশ কিছুদিন ধরেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সময় টেকনিক্যাল কন্সালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম সেই বদনাম ঘুচাতে চেয়েছিলেন। ব্যাটারদের কাছ থেকে আক্রমণাত্বক ইনটেন্ট চেয়েছিলেন। সেবার তেমন সফলতা না মিললেও ব্যাটাররা যেন নিজেদের আমুলে বদলে ফেলেছেন ইংল্যান্ড সিরিজ থেকেই। টি-টোয়েন্টিতে এ যেন এক নয়া বাংলাদেশ।
আক্রমণাত্মক এপ্রোচ, রানিং বিটউইন দ্য উইকেট, পাওয়ার হিটিং- সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটাররা এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা নিজেদের আয়ত্বে আনা শুরু করেছে। দারুণ এ শুরুর ধারাবাহিকতা থাকুক। এমন ধারাবাহিকতায় পাল্টে যাক বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল।