চার বছর আগের ডিসেম্বরের কোনো এক সন্ধ্যায় আইপিএল নিলামের টেবিলে ঝড় তুলেছিলেন ১৮ বছর বয়সী এক ব্যাটার। প্রভসিমরান সিং নামের পাঞ্জাবি সেই তরুণকে দলে ভেড়াতে পাঞ্জাব কিংসকে সেদিন গুণতে হয়েছ ৪.৮ কোটি ভারতীয় রুপি। কিন্তু, তারকাঠাসা পাঞ্জাবের টপ অর্ডারে খেলার সুযোগ কই! পুরো মৌসুমে মাঠে নামার সুযোগ পেলেন মোটে এক ম্যাচে। তবে চার বছর বাদে পছন্দের পজিশন ওপেনিংয়ে সুযোগ পেয়ে প্রভসিমরান সিং বুঝিয়ে দিচ্ছেন নিজের মূল্য।
গত চার মৌসুমে গুটিকয়েক ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন প্রভসিমরান সিং। ২০২০ মৌসুমে ৫৫ লাখ রুপির বিনিময়ে পুনরায় তাঁকে দলে ভেড়ায় পাঞ্জাব। সেবারে কয়েক ম্যাচে সুযোগ পেলেও আলাদা করে নিজেকে চেনাতে পারেননি, করতে পারেন সাকুল্যে ১৫ রান। ভাগ্যটা বদলায়নি পরের দুই মৌসুমেও, একাদশে ছিলেন মোটে তিন ম্যাচে।
কিন্তু ২০২৩ আইপিএলের আগে পাঞ্জাব কিংস ছেড়ে দেয় তাঁদের নিয়মিত ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে। পাশাপাশি জনি বেয়ারেস্টোর ইনজুরিটা যেন আশীর্বাদ হয়ে আসে ২২ বছর বয়সী প্রভসিমরানের জন্য। মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই কলকাতার বিপক্ষে ১২ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলে জানান দেন তাঁর উপর ভরসা করা যায়।
পরের ম্যাচে গুয়াহাটিতে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে দেখা মেলে পূর্ণ ছন্দের প্রভসিমরানের। কখনো ট্রেন্ট বোল্টকে কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন, আবার কখনো কেএম আসিফকে সীমানা ছাড়া করেছেন ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার দিয়ে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন কিংবা যুজবেন্দ্র চাহালের মতো বোলাররাও সেদিন রেহাই পাননি এই তরুণের তোপ থেকে। বোল্টের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে ২৮ বলে ফিফটিতে পৌঁছে প্রাভসিমরান যেন জানান দেন নিজের আবির্ভাবের।
আগাগোড়া ক্রিকেটীয় এক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন প্রাভসিমরান। তাঁর কাজিন আনমলপ্রীত সিং এবারের আইপিএলে খেলছেন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে। ইনিংসের শুরু থেকে আক্রমণাত্নক ব্যাটিং করতে পছন্দ করেন এই ব্যাটার। তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র কাট বা পুলের মতো আক্রমণাত্মক শট খেলার পরেই আমার ভালো লাগে।’
চার বছর বাদে অবশেষে দলে নিজের জায়গাটা প্রায় পাকাপোক্ত করতে পেরেছেন এই তরুণ। পাঞ্জাব কিংসের ব্যাটিং কোচ ওয়াসিম জাফর উচ্ছ্বসিত এই তরুণের সুযোগ কাজে লাগানোতে। তিনি বলেন, ‘এই মৌসুম বাদে সে কখনোই নিয়মিত রান করতে পারেনি। আমাদের টপ অর্ডারে আগে বেয়ারেস্টো, রাহুল, আগারওয়ালরা ছিল। ফলে সে তেমন একটা সুযোগ পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘সে দুর্দান্ত একজন ব্যাটসম্যান। তবে আপনি যত ভালো ক্রিকেটারই হন, দলে টিকে থাকতে হলে আপনাকে পারফর্ম করতে হবে। সে ভয়ডরহীন ব্যাটিং করতে জানে। তাঁর রানে ফেরা দলের জন্যও ভালো কেননা বেয়ারেস্টো এবারে নেই। টপ অর্ডারে তাঁর মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা কাউকেই দরকার ছিল আমাদের। তাঁর পারফরম্যান্সে আমি খুশি।’
ঘরোয়া ক্রিকেটেও গত মৌসুমে ধারাবাহিক ছিলেন প্রভসিমরান। সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি এবং রঞ্জি ট্রফিতে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান ছিল তাঁর। বিশেষ করে মুস্তাক আলী ট্রফিতে ৫৩.৫৫ গড় এবং ১৪১.৫৯ স্ট্রাইকরেটে ৩২০ রান করেন এই তরুণ। আইপিএলেও দুর্দান্ত শুরু করে তিনি জানিয়ে দিলেন তিনি সঠিক পথেই আছেন। তবে নিজেকে প্রমাণের এখনো বাকি প্রভসিমরানের, মৌসুমের বাকিটা সময় পারফর্ম করে তাঁকে জানান দিতে হবে ফুরিয়ে যেতে আসেননি তিনি।