মাকে তিনি হারান একেবারেই অল্প বয়সে। বাবা তিন মেয়ে আর দুই ছেলের দেখভাল করতে করতে এতটাই হাঁপিয়ে উঠেছিলেন যে, তার প্রভাব পড়েছিল তাঁর ব্যবসায়।
গল্পটা প্রিয়াম গার্গের। তিনি ওই সময়টায় ক্রিকেটের বিরাট কোনো ভক্ত নয়। তবে, ভারতের আরো অসংখ্য শিশুর মত তারও জীবনের লক্ষ্যটা পাল্টে যায় ২০১১ বিশ্বকাপ উৎসবের পর।
অথচ, বিশ্বকাপটা দেখতে যথেষ্ট ঝক্কি পোহাতে হয় প্রিয়ামকে। বাবার আর্থিক অবস্থা তখন খুবই সঙিন। বাড়িতে টিভি নেই। বাড়ির বাইরে একটা পানের দোকানে কোনোক্রমে খেলা দেখা যেত।
বাবা নরেশ তখন ঘরে ঘরে গিয়ে দুধ বিক্রি করেন। কখনো পত্রিকার হকারের কাজ করেন, কিংবা ছোট্ট ভ্যানে স্কুল ফেরত শিশুদের বাড়ি পৌঁছে দেন। এমন বাবার কাছে প্রিয়ামের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন কখনোই পাত্তা পায়নি।
তাঁর মাথায় তখন আসে সঞ্জয় রাস্তোগি’র ছায়া। মিরাটের এই ক্রিকেট কোচই স্বপ্নটা আরো ভাল করে গেঁথে দিয়েছিলেন প্রিয়ামের বুকে।
এই রাস্তোগি আবার হলেন ভারতীয় পেসার ভূবনেশ্বর কুমারের কোচ। একবার ভূবি মিরাটের ভিক্টোরিয়া পার্কে রাস্তোগি’র সাথে অনুশীলন করছিলেন। রাস্তোগি তাকে ১৫ বছর বয়সী প্রিয়ামের বিরুদ্ধে বোলিং করতে বললেন। ভূবি ততদিনে জাতীয় দলের পরিচিত মুখ, বিশ্বখ্যাত ব্যাটসম্যানরাও তাঁকে সামলে খেলেন।
ভূবির সামনে পিচ্চি প্রিয়াম একটা ভুতুড়ে কাজ করলেন। তিনি ক্রিজের দুই তিন গজ বাইরে গার্ড নিলেন। রাস্তোগি তাকে থামিয়ে আবারো গার্ড নিতে বললেন, আর এবারো প্রিয়াম একই কাজ করলেন।
ঘটনা কি? রাস্তোগি একটু ক্ষেপেই গেলেন। প্রিয়মের সহজ জবাব, ‘বলটা স্যুইং করবে, আমি ক্রিজের বাইরে দাঁড়াচ্ছি যাতে স্যুইংটাকে এড়াতে পারি!’
মনে আছে তো, ওই সময় প্রিয়ামের বয়স মাত্র ১৫!
এমন তীক্ষ্ণ ক্রিকেটমনস্ক কিশোরের পায়ের নিচে ইতিহাস থমকে দাঁড়াবে – সেটাই স্বাভাবিক। ঘরোয়া ক্রিকেটে সুনাম কুড়ানোর পরও ২০১৮ সালের যুব বিশ্বকাপে খেলা হয়নি দুর্ভাগ্যজনক এক ইনজুরির কারণে। যদিও, দু’বছর বাদে তাঁর নেতৃত্বেই ছোটদের বিশ্বকাপ খেলে ভারত। ফাইনালে হারে আকবর আলীর বাংলাদেশের বিপক্ষে।
এরপরের বছর সেই প্রিয়মের জায়গা হয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)। সেখানে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ দলে তাঁর সতীর্থ কে জানেন? সেদিনের নেটের প্রতিপক্ষ ভূবনেশ্বর কুমার। আর সেই মঞ্চে হেসেখেলেই ২৬ বলে ৫১ করতে পারেন প্রিয়াম গার্গ। ভবিষ্যতের তারকারা এভাবেই তৈরি হন!