বাংলাদেশের বিপক্ষে ওডিয়াইতে সিরিজ হেরে খানিকটা চাপে আছে ভারত। চট্টগ্রামে শুরু হতে যাওয়া টেস্টে তাই নিজেদের পুরনো রূপে ফিরতে চাইবে ভারত। তাছাড়া পাঁচ মাস বাদে ভারতের প্রথম টেস্ট এটি, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকতে এই টেস্টে জয়ের বিকল্প নেই তাঁদের। কিন্তু ইনজুরি সমস্যা আর ফর্মহীনতায় একাদশ সাজাতে বেগ পোহাতে হচ্ছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের।
আইপিএলের সুবাদে সাদা বলের ক্রিকেটে পাইপলাইনে ক্রিকেটারের অভাব নেই ভারতের। চাইলেই দুই কিংবা তিনটা মানসম্মত ভারত দল দাঁড় করানো সম্ভব। কিন্তু লাল বলের ক্রিকেটে পরিস্থিতিটা ভিন্ন। বোলিং কিংবা ব্যাটিং দুই ক্ষেত্রেই সিনিয়দের ছাপিয়ে যাবার মতো পারফর্ম করতে পারেননি তরুণ ক্রিকেটাররা।
আগেই জানা গিয়েছিল দ্বিতীয় ওডিয়াইতে পাওয়া চোটের কারণে প্রথম টেস্ট খেলবেন না অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তাঁর অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব করবেন লোকেশ রাহুল। ইনিংস উদ্বোধন করতে নামার কথাও তাঁর। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে রাহুলের সাথে জুটি বাঁধবেন কে?
দলে রাহুল ছাড়াও স্পেশালিস্ট ওপেনার রয়েছেন দুজন – শুভমান গিল এবং অভিমন্যু ঈশ্বরণ। এখনো পর্যন্ত ১১ টেস্ট খেলে গিলের ৩০ গড়ে সংগ্রহ ৫৭৯ রান। যদিও শেষ ১৪ ইনিংসে ফিফটি পেয়েছেন মোটে একটি। অন্যদিকে জাতীয় দলে এখনো অভিষেক হয়নি অভিমন্যু ঈশ্বরণের। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা এ দল – গত মৌসুমে সবখানেই রান করেছেন নিয়মিতই। বাংলাদেশ এ দলের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজেও খেলেছেন ১৫৭ এবং ১৪১ রানের ইনিংস। এছাড়া ৭৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে রান করেছেন ৪৫.৩৬ গড়ে। তবে অভিজ্ঞতার বিচারে হয়তো তাঁর থেকে খানিকটা এগিয়ে থাকবেন গিল।
মিডল অর্ডার নিয়ে অবশ্য ভারতের দুশ্চিন্তাটা কম। দল থেকে বাদ পড়লেও পুনরায় ফিরেছেন অভিজ্ঞ চেতেশ্বর পূজারা। কাউন্টিতে দারুণ এক মৌসুম কাটানোর পুরষ্কারই পেলেন এই বর্ষীয়ান ব্যাটার। এছাড়া শেষ ওডিয়াইতে সেঞ্চুরি করে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিরাট কোহলি। পাঁচ নম্বর পজিশনে নামার কথা ফর্মে থাকা শ্রেয়াস আইয়ারের। অন্যদিকে উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলবেন রিশাভ পান্থ। সাম্প্রতিক সময়ে ফর্ম ভালো না হলেও বাংলাদেশ সিরিজেই সম্ভবত শেষ সুযোগটা পাচ্ছেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান।
চট্টগ্রাম টেস্টে স্পিনার হিসেবে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের জায়গাটা নিশ্চিত। কিন্তু তাঁর সাথের দ্বিতীয় স্পিনারের জায়গাটা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে সাম্প্রতিক ফর্ম আর ব্যাটিং দক্ষতার বিচারে আক্সার প্যাটেলের সুযোগ পাবার কথা। ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়া রবীন্দ্র জাদেজার সাথে তাঁর খেলার ধরণটাই মেলে সবচেয়ে ভালো।
তাছাড়া লাল বলের ক্রিকেটে তাঁর রেকর্ডও মন্দ নয়, ১২.৪৩ গড়ে শিকার করেছেন ৩৯ উইকেট। তাছাড়া ব্যাটিং দক্ষতায়ও তরুণ সৌরভ কুমার কিংবা চায়নাম্যান কুলদীপের চাইতে যোজন যোজন এগিয়ে তিনি। তবে ভারত তিন স্পিনার খেলাতে চাইলে নিজের বৈচিত্র্যের সুবাদে একাদশে জায়গা পেতে পারেন কুলদীপ।
তবে ভারত সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় থাকবে নিজেদের পেস আক্রমণ নিয়ে। দলের মূল দুই পেসার – জাসপ্রিত বুমরাহ এবং মোহাম্মদ শামি চোটের কারণে দলের বাইরে। স্কোয়াডে থাকা পাঁচ পেসার – উমেশ যাদব, শার্দুল ঠাকুর, নবদ্বীপ সাইনি, মোহাম্মদ সিরাজ এবং জয়দেব উনাদকাট কেউই নিজেদের সেরা ছন্দে নেই অনেকদিন ধরেই। অভিজ্ঞতার বিচারে হয়তো উমেশ এবং সিরাজ একাদশে থাকবেন। অন্যদিকে তৃতীয় পেসার খেলালে ব্যাটিং দক্ষতার সুবাদে বাকিদের চাইতে খানিকটা এগিয়েই থাকবেন শার্দুল।
কিন্তু অভিজ্ঞ উমেশ যাদবের ফর্মহীনতা নিশ্চিতভাবেই চিন্তার ভাঁজ ফেলবে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের কপালে। যদিও বাংলাদেশ এ দলের বিপক্ষে এক ইনিংসে চার উইকেট শিকার করে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজই হয়তো উমেশের শেষ সুযোগ। অন্যদিকে একদম শেষ মূহুর্তে ডাক পাওয়া জয়দেব উনাদকাট নিজের সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টেস্ট খেলেছিলেন এক যুগ পূর্বে। প্রথম টেস্টে তাই তাঁকে একাদশে না দেখার সম্ভাবনাই বেশি।