চারিদিকে কোভিড আতঙ্ক। শঙ্কা নিয়ে দিন গুনছিলো পুরো পৃথিবী। বিশ্ব ফুটবল স্থবির ছিল বেশ কয়েকদিন৷ স্থবিরতা কাটিয়ে মাঠে ফুটবল ফেরাটা যেন আশীর্বাদ প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) দলের। ইতিহাসে প্রথমবার টমাস টুখেলের দিকনির্দেশনায় পর্তুগালে গেল ২৩ আগস্ট ২০২০ এ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলতে যায় ফ্রান্সের দলটি। কিন্তু ম্যাচের ৫৯ মিনিটে বায়ার্ন খেলোয়াড় কিংকসলে কোমানের হেডারে শিরোপা যেন অধরাই থেকে যায় দলটির৷ টুখেল তবু জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ পরের সিজনেই, কিন্তু পিএসজি পারেনি সেমির গণ্ডি পেরোতে।
এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোতে ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছে প্যারিসের ক্লাবটি। দলে ভিড়িছে সেরাদের সেরা লিওনেল মেসিকে৷ তার সাথে রিয়াল থেকে ফ্রি-তে সার্জিও রামোস। লিভারপুলের গিনি উইনালডামকে কোন রকম খরচা পাতি ছাড়াই যুক্ত করেছেন নিজেদের শিবিরে৷ ইউরোপ জয়ী গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডোন্নারুমা কে এনেছেন নাভাসের সতীর্থ হিসেবে। ডর্টমুন্ড তরুণ রাইটব্যাক আসরাফ হাকিমি স্টার পার্ফরমারকে পড়িয়েছে গাঢ় নীল জার্সিটা।
কাগজে-কলমে সবচেয়ে সফল এবং ইতিহাসে বিরল এমন এক ট্রান্সফার উইন্ডো নিজেদের করে নিয়েছেন নাসের আল খিলাফি এর দল প্যারিস-সেইন্ট জার্মেইন।
মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে এমন এক ফরোয়ার্ড লাইন নিয়ে যেকোন প্রতিপক্ষকে অনায়াসেই কুপকাত করা সম্ভব। গতি, ফুটবল শৈলী, অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে এক বিধ্বংসী আক্রমণ ভাগ। আর ইকার্দি, ডি মারিয়া মুখিয়ে থাকবেন সুযোগের সদ্ব্যবহারের আশায়। এমন এক আক্রমণ ভাগ ইউরোপীয় অনেক দলেরই হয়ত স্বপ্ন।
অন্যদিকে পারেদেস, হেরেইরা, ভেরাত্তি, দ্রাক্সলারদের সাথে নতুন সংযোজন গিনি উইনালডাম পরিপূর্ণ ও শক্তিশালী করেছে পিএসজির মধ্যমাঠকে। গেলো দুই সিজিনে প্রিমিয়ার লিগের ৭৬ ম্যাচের মধ্যে ৭৫ ম্যাচই খেলেছেন লিভারপুলে থাকা ডাচ এই ফুটবলার। তাঁর কাছ থেকে এমন দীর্ঘমেয়াদি সার্ভিস এবং অভিজ্ঞতার প্রসার টাই হয়ত এই মৌসুমে চাইবেন কোচ পচেত্তিনো।
অন্যদিকে রামোসের সংযুক্তি পিএসজির রক্ষণভাগ করেছে আটসাট। চার চারটি চ্যাম্পিয়নস লীগ ও পাঁচটি লালীগার পাশাপাশি একটি বিশ্বকাপ রয়েছে এই ডিফেন্ডারের ঝুলিতে। অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার, দারূণ আক্রমনাত্মক মনোভাব, শারীরিক সক্ষমতা এবং গোল করবারও দক্ষতার মিশেলে রামোস যেন এক কমপ্লিট প্যাকেজ পিএসজির জন্যে। তার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রক্ষণটা সামলে যাবেন মারকুইনহোস। ডিফেন্সে এবং ওভারল্যাপিং দুটোতেই কার্যকরী ও দক্ষ তরুণ আশরাফ হাকিমির উপর প্যারিসের ক্লাবটির প্রত্যাশা থাকবে নিশ্চয়ই।
গোলবারে আগে থেকেই ছিলেন কোস্টারিকার অসাধারণ গোলকিপার কেইলর নাভাস। রিয়ালের হ্যাট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ নাভাসের পাশাপাশি এবার পিএসজি দলে ভিড়িয়েছেন ইতালির ইউরোপ জয়ী গোলরক্ষক ডোন্নারুমাকে। যার অসাধরণ পার্ফরমেন্সের বদলৌতেই শিরোপা ইংল্যান্ডের হোম থেকে নিয়ে যায় ইতালির রোমে।
এমন বাঘা-বাঘা সব খেলোয়াড়দেরকে দলে ভেড়ানোর পেছনে কারণ একটাই এবং তা স্পষ্ট, চ্যাম্পিয়নস লীগ জেতা। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ শিরোপা কিংবা সম্মানের বিচারে সর্বশ্রেষ্ঠের তকমাটা একবার হলেও নিজেদের করে নিতে চায় পচেত্তিনো, নাসের আল খালেফি।
নামে ভারি হলেই যে দল জিতে যাবে শিরোপা এমনটা কিন্তু নয়। কোন শিরোপা জিততে হলে দরকার একাগ্রতা, মানসিক দৃঢ়তা, সঠিক পরিচর্যা, পর্যন্ত অনুশীলন আর সঠিক দিকনির্দেশনা সর্বোপরি এক দল হয়ে খেলা।
একগ্রতা, মানসিক দৃঢ়তা রয়েছে পিএসজির খেলোয়াড়দের মধ্যে। পরিচর্যায় কমতি রাখবেন না খালেফি তা চোখ বন্ধ করে যে কেও বলে দিতে পারেন। পচেত্তিনোর মতো কোচ নিশ্চয়ই ভুল পথ দেখাবেন না। তবে প্রশ্ন থেকে যায় সঠিক অনুশীলনে।
ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের লিস্টে স্থান পায়নি ফ্রান্সের লিগ ওয়ান। এমন একটি লিগে বছরের অধিকাংশ সময় খেলে ইউরোপীয় জায়েন্টদের বিপক্ষে খেলে শিরোপা জেতাটা ঠিক কতটা কঠিন তা বিচার করা মুশকিল। তার উপর পিএসজির খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছে টেম্পারমেন্ট সমস্যা। বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতা কম থাকায় বাড়েবাড়েই হোঁচট খেতে হয়েছে প্যারিস-সেইন্ট জার্মেইকে।
তবে মেসি, রামোস, উইনালডমদের অভিজ্ঞতা এই টেম্পারমেন্ট লস সমস্যাটার সমাধান হতে পারে। কিন্তু নতুন এই পাঁচ খেলোয়াড় নিসঃন্দেহে খেলতে চলেছেন শুরুর একাদশে। দলের রসায়নে ঘাটতি দেখা দিবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র উপায় বেশি বেশি ম্যাচ খেলানো। সেখানেও থেকে যায় ইনজুরির শঙ্কা।
এই মৌসুমে কাগজে-কলমে, নামের ভাড়ে ইউরোপের অন্যতম সেরা দল পিএসজি। তবে আসল কাজটা মাঠেই করতে হবে। খেলাটা যে হবে সেই ১২০*৯০ মিটার আয়তাকার সবুজ গালিচায়। অপেক্ষার পালা শেষ হয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে কতদূর এগিয়ে যেতে পারে পিএসজি সময়ই তা বলে দেবে৷