তাঁদের পথের কাঁটাও ছিল মানসিক অবসাদ!

সাম্প্রতিক সময়ে এই সমস্যাগুলি প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে করে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে খেলা ছেড়ে দেয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেও দেখা গেছে।

কয়েক দশক ধরে বিশ্ব ক্রিকেট একটি নতুন দৃষ্টান্তের সাক্ষী হচ্ছে বিশেষকরে সীমিত ওভারের ক্রিকেট। বর্তমানে মাঠের তীব্র চাপের পাশাপাশি ঠাসা ভ্রমণসূচির কঠিন চাপও সামলাতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। ফলে কিছু খেলোয়াড়কে গৃহকাতরতার পাশাপাশি মানসিক অবসাদ পেয়ে বসছে। বিগত বছরগুলাতে এসবের সাথে আরও কিছু নির্দিষ্ট ট্যাবু যুক্ত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এই সমস্যাগুলি প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে করে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে খেলা ছেড়ে দেয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেও দেখা গেছে।

চলুন এমন পাঁচজন ক্রিকেটারের সাথে আজ পরিচিত হওয়া যাক যারা মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে বাধ্য হয়েছেন। কাকতালীয় ভাবে পাঁচজন ক্রিকেটারই ইংল্যান্ডের।

  • মার্কাস ট্রেসকোথিক

মানসিক অবসাদ ও বিষন্নতার জন্য ইংল্যান্ডের একসময়কার বিধ্বংসী ওপেনার মার্কাস ট্রেসকোথিকের ক্যারিয়ার ছোট হয়ে যায়। ট্রেসকোথিক ও নিক নাইট মিলে ‘থ্রি লায়ন’দের জন্য একটি শক্তিশালী ওপেনিং জুটি গড়ে তোলেন।

২০০৬ সালে ক্যারিয়ারের সেরা সময়টায় ৩০ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ভারত সফর থেকে দেশে ফিরে আসেন। পরের বছর মানসিক বিষন্নতার জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাবার ঘোষণা দেন তিনি।

  • ডেভিড বেয়ারস্টো

২৫ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ডেভিড বেয়ারস্টো মারাত্মক মানসিক অবসাদে আক্রান্ত ছিলেন। মূলত স্ত্রী জ্যানেটের অসুস্থতায় তাঁর মানসিক অবসাদের সূচনা ঘটে। তখন তিনি বেশ আর্থিক সংকটে ছিলেন। এমন অবস্থায় মাতাল হয়ে গাড়ি চালানোর দায়ে আর্থিক জরিমানার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। ১৯৯৮ সালের ৫ জানুয়ারি নিজগৃহে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন তিনি। তাঁর ছেলে হলেন ইংলিশ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টো।

  • জোনাথন ট্রট

তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ের জন্য তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের পরম নির্ভরযোগ্য একজন ব্যাটসম্যান। যদিও ২০১৩ সালের অ্যাশেজে মিশেল জনসনের ক্রমাগত বাউন্সারের সামনে সতীর্থদের মত তিনিও মুখ থুবড়ে পড়েন। বাউন্সারে বিপর্যস্ত ট্রট চাপজনিত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সিরিজের মাঝখানেই দেশে ফিরে আসেন।

তখন দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ-সংক্রান্ত অসুস্থতায় ভোগায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে যান তিনি। তারপর দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে ২০১৫ সালে উইন্ডিজ সফরের দলে পুনরায় ফিরলেও বাজে পারফরম্যান্স করায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর  সিদ্ধান্ত নেন ট্রট।

  • অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ

ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার মানসিক স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সমস্যা নিয়েও খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন। ২০০৫ সালের অ্যাশেজের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন ফ্লিনটফ। তিন বিভাগেই অবদান রেখে দলকে অ্যাশেজ জেতাতে সাহায্য করেন তিনি। যদিও তাদের অ্যাশেজ জেতার গৌরব খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ ২০০৬-০৭ এ ফিরতি অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ধবলধোলাই হয় ইংল্যান্ড।

ওই সিরিজটি ফ্লিনটফের ওপর এতটাই বাজে প্রভাব ফেলে যে তিনি মদ্যপানের আশ্রয় নেন। বিষন্নতায় ভুগে ২০০৭ বিশ্বকাপের সময়ও অতিরিক্ত মদ্যপান করেন ফ্লিনটফ। তারপর মদ্যপান করতে করতে ক্রমেই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং ২০১০ সালে ক্যারিয়ারের ইতি টানতে বাধ্য হন তিনি।

  • সারা টেলর

ঘরের মাঠে ২০১৭ নারী বিশ্বকাপ জেতা এই ইংরেজ ক্রিকেটারও মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগেছিলেন। উইকেটের পেছনে দ্রুতগতির গ্রাভওয়ার্কের জন্য বিখ্যাত সারা টেলরের মোট ডিসমিসাল সংখ্যা ২৩২! তাছাড়া নারীদের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের মধ্যেও অন্যতম তিনি। তবে সবাইকে হতবাক করে ২০১৯ সালে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন টেলর। মূলত মানসিক অবসাদ থেকে শরীরকে মুক্তি দিতেই খেলা ছেড়ে দেন তিনি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...