রবির আলোয় বিরাজ

‘ব্যাটসম্যান’ রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ আছে। তিনি নাকি কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেলেই সেঞ্চুরি করেন। সেই দূর্নামটা খুব অমূলকও নয়, কারণ, ক্যারিয়ারের প্রথম চারটি টেস্ট সেঞ্চুরিই তিনি করেছেন ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে।

তবে, সেটা এখন অতীত। অবশেষে দ্বিতীয় কোনো দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে অপবাদ ঘুঁচালেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। চেন্নাইয়ে চলমান টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। এর আগে কখনই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যতীত অন্য কোনো দলের বিপক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরি করতে পারেন নি তিনি। এই সেঞ্চুরির আগে বলা হত দুর্বল কোনো প্রতিপক্ষ ছাড়া সেঞ্চুরি করতে পারেন না অশ্বিন। তবে, খুব আরামসেই নিন্দুকের মুখে কুলুপ আটতে পেরেছেন তিনি।

অশ্বিনকে কখনই অলরাউন্ডার হিসেবে বেশি একটা বিবেচনা করা হত না। এর আগে শুধু মাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত দূর্বল প্রতিপক্ষ পেলে সেঞ্চুরি করেন তিনি এই অপবাদ নিয়ে ঘুরছিলেন অশ্বিন। আজকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ দিলেন।

তবে, তাঁর বোলিং সামর্থ্য নিয়েই কখনই কোনো প্রশ্ন ছিলো না। আজকে অশ্বিন তাঁর অলরাউন্ডার পরিচয়ের পুর্ণ প্রকাশ ঘটালেন। এই ম্যাচে প্রথম ইংনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন আর দ্বিতীয় ইনিংসে করেলন সেঞ্চুরি। এর আগেও দুইবার এই কীর্তি গড়েন। আর প্রত্যেকবারই প্রতিপক্ষ ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

এবার অশ্বিনের শিকার স্বাগতিক ইংল্যান্ড। তাঁর চেয়ে বেশি বার এই কীর্তি গড়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম। তিনি ১০২ টেস্টে ৫ বার এই কীর্তি গড়েন বোথাম। আর এই বোথামকে মনে করা হয় ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসার।

চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত দ্বিতীয় দিন শেষ করে ২ উইকেটে ৫৪ রান করে। তৃতীয় দিনের শুরুতেই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন আগের দিনে দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা এবং চেতেশ্বর পূজারা। উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দুই ব্যাটসম্যান ঋষভ পান্ত এবং অজিঙ্কা রাহানে।

মাত্র ৮৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত।এরপর ক্রিজে এসে কোহলির সাথে মাত্র ২০ রানের একটি জুটি গড়ে ফিরে যান অক্ষর প্যাটেল। ১০৬ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর হাল ধরেন কোহলি এবং অশ্বিন। গড়ে তোলেন ৯৬ রানের জুটি। অধিনায়ক কোহলি ফিরে যাবার পর কুলদ্বীপ যাদব এবং ইশান্ত শর্মার সাথে গড়ে তোলেন যথাক্রমে ৮ এবং ২৭ রানের জুটি।

২৩৭ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। যখন ইশান্ত শর্মা ফিরে যান তখন অশ্বিন অপরাজিত ছিলেন মাত্র ৭৭ রানে। ইশান্ত শর্মার পর উইকেটে আসেন মোহাম্মদ সিরাজ। মোহাম্মদ সিরাজের সাথে অশ্বিন গড়েন ৫৫ বলে ৪৯ রানের জুটি। পাশাপাশি তুলে নেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হবার আগে ব্যাট হাতে করেন ১০৬ রান। ইনিংসে ছিল ১৪ টি চার ও একটি ছক্কা।

বোঝাই যাচ্ছে, সেঞ্চুরি করার পথে সম্ভাব্য সব প্রতিকূলতাকেই জয় করেছেন অশ্বিন। জীবন পেয়েছেন কয়েকবারই। তবে, তাতে তাঁর আত্মবিশ্বাস ভাঙেনি। বরং তিনি আরো বেশি প্রবল হয়ে উঠেছেন। তাই, তো রবির আলোয় আবারো উদ্ভাসিত হতে পেরেছে ভারত।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link