টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা তো তিনি ভুলে যেতেই চাইবেন। মিডল অর্ডারে তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশ দলের যে ভরসা ছিল তা একেবারেই মেটাতে পারেননি। তবে ইয়াসির আলী রাব্বির সক্ষমতা টিম ম্যানেজম্যান্টের কাছে স্পষ্ট। রান না পেলেও তাই টানা ম্যাচ খেলানো হয়েছে রাব্বিকে। অথচ ভারতের বিপক্ষে সিরিজের আগে তাঁর রানে ফেরাটা জরুরী ছিল। রাব্বিও যথাসময়েই রানে ফিরলেন।
মূলত ওয়ানডে ফরম্যাটেই তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছেন। টেস্ট ক্রিকেটেও ছোট ছোট কিছু ইনিংস খেলে বার্তা দিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও তাই রাব্বির উপর ভরসা রাখা হয়। বাংলাদেশ দলের বিশ্বাস ইয়াসির আলী রাব্বি অল ফরম্যাট ক্রিকেটার। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য ছেলেটাকে একটু সময় দেয়া প্রয়োজন শুধু।
তবুও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রাব্বির এমন টানা ব্যর্থতা একটা দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছিল। তারপর সামনের মাসেই ভারতের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ সিরিজ। ওয়ানডে কিংবা টেস্ট দুই ফরম্যাটেই রাব্বির সেরা ছন্দটা চায় টিম ম্যানেজম্যান্ট।
অথচ রাব্বির সাম্প্রতিক ফর্ম বলছিল ভিন্ন কথা। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চার ম্যাচ খেলেও কোন ম্যাচেই দুই অংকের স্কোরই করতে পারেননি। চার ইনিংসে তাঁর সংগ্রহ মোট ৫ রান। এর আগে নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজেও প্রায় একই হাল ইয়াসির আলী রাব্বির। ফলে জনমনে একটা প্রশ্ন এসেছিল। রাব্বিকে নিয়ে এই যে এত আলোচনা, এত ভরসা, এত স্বপ্ন সবই কী বৃথা?
ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে আগে রাব্বির চেনা ছন্দে ফেরার একটা সুযোগ ছিল। সেটা হল বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের এবারের আসর। বড় বড় নাম নিয়ে গড় ইস্ট জোনের শক্ত ব্যাটিং লাইন আপে ঠাই হল তারও। তবে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল হাসান জয়, আফিফ হোসেনদের নিয়ে গড়া ব্যাটিং লাইন আপে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়ালো চট্টগ্রামের এই ছেলেটাই।
সকাল নয়টায় কুয়াশা মাথায় নিয়েই ব্যাট করতে নামে তামিম ইকবালের দল। শুরুর কঠিন সময়ে ইস্ট জোন একেবারেই ছন্নছাড়া। কুয়াশা যেন জেঁকে বসেছিল তামিম, ইমরুলদের। তবে বেলা গড়াতেই রোদ উঠতে শুরু করলো। আর ইস্ট জোনের জন্য সেই রোদের নাম ইয়াসির আলী রাব্বি।
তামিম, মুশফিকরা যখন পারলেন না তখন নিজের উপর ভরসা রাখলেন রাব্বি। সকল প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সময়টুকু নিলেন। কন্ডিশন, উইকেট, প্রতিপক্ষের বোলার সবকিছুই ভালোভাবে পরখ করে নিলেন। এবং শেষবেলায় তাঁর ব্যাটে শুধু একটা শব্দ, আক্রমণ।
টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পরেও দিনশেষে তাই চওড়া হাসি ইস্ট জোনের। ইয়াসির আলী রাব্বি ৭৩ বল খেলে করেছেন ৮০ রান। ব্যাটিং করেছেন প্রায় ১১০ স্ট্রাইক রেটে। ইস্ট জোনের দেয়া ২৫৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে সেন্ট্রাল জোন গুটিয়ে গিয়েছে ১৪০ রানেই। বড় জয়েই শুরু হল ইস্ট জোনের যাত্রা।
তবে তারচেয়ে বড় স্বস্তি বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের জন্য, বড় স্বস্তি বাংলাদেশ দলের জন্যও। সাভারের বিকেএসপির কঠিন উইকেটেও রানে ফিরেছে রাব্বি। ভারত সিরিজের পরিকল্পনাতে রাব্বিকে যে ভীষণ প্রয়োজন। নিজ শহরের ছেলে রাব্বির এমন ফিরে আসাতে তামিম একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস তো ছাড়তেই পারেন।