বিষয়টা এক রকম ঠিকঠাক হয়েই ছিল। অপেক্ষা ছিল কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার। এবার সেটাও হয়ে গেল। বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) নতুন কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড়ের নাম ঘোষণা করে। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষেই তিনি দায়িত্ব নেবেন। বিসিসিআইয়ের ক্রিকেট অ্যাডভাইজরি কমিটির সিদ্ধান্তেই দায়িত্ব পেলেন দ্রাবিড়।
বিশ্বকাপ শেষেই ভারত সফরে আসবে নিউজিলান্ড দল। সিরিজ শুরু হবে আসছে ১৭ নভেম্বর। আর সেটাই জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দ্রাবিড়ের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। তবে, এর আগেও বিশ্বকাপের আগে শ্রীলঙ্কা সফরে দ্বিতীয় শ্রেণির একটা ভারতীয় দল নিয়ে কোচ হিসেবে কাজ করেন ‘দ্য গ্রেট ওয়াল’ খ্যাত দ্রাবিড়। তবে, এবারই প্রথমবারের মত পূর্ণ মেয়াদে পেলেন দায়িত্ব।
জানিয়ে রাখা ভাল, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংস যখন মুখোমুখি হয় দুবাইতে, তখন দ্রাবিড়ের সাথে বৈঠকে বসেন সৌরভ ও জয় শাহ। সেখানেই নাকি দ্রাবিড়কে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে কথা পাকাপাকি হয়। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই কোচ হিসেবে নিজের লম্বা ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন রবি শাস্ত্রী।
রাহুল দ্রাবিড়কে কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেন স্বয়ং বিসিসিআই সভাপতি ও দ্রাবিড়ের সাবেক সতীর্থ সৌরভ গাঙ্গুুলি। তিনি বিসিসিআইয়ের এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বিসিসিআই ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলের নতুন কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে স্বাগত জানাচ্ছে। দারুণ বর্ণীল এক ক্রিকেট ক্যারিয়ার রাহুলের, নি:সন্দেহে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা গ্রেটদের একজন রাহুল। তাঁকে কোচের দায়িত্ব দিতে পারাটা আমাদের জন্য বিরাট সম্মানের ব্যাপার। আশা করি, ভারতীয় ক্রিকেট দলকে সে নতুন উঁচ্চতায় নিয়ে যাবে।’
দায়িত্ব নেওয়ার প্রাক্কালে রাহুল দ্রাবিড় বলেন, ‘ভারতীয় জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারা আমার জন্য বিরাট সম্মানের ব্যাপার। আমি এই কাজটা করতে মুখিয়ে আছি। রবি শাস্ত্রীর অধীনে দল দুর্দান্ত করেছে। আশা করি দলের সাথে কাজ করে সেই ধারাবাহিকতাই আমি সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবো।’
এর আগে বেশ কয়েক বার জাতীয় দলের কোচ হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন দ্রাবিড়। ২০১৬ সালে দ্রাবিড়কে প্রথম বারের মত জাতীয় দলের কোচ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন দ্রাবিড়। দ্রাবিড় নাকচ করে দেওয়ার পর কোচ হন অনিল কুম্বলে। এক বছর পর কুম্বলে কোচিং ছেড়ে দিলে আবারো দ্রাবিড়কে প্রস্তাব দেয় বিসিসিআই।কিন্তু সেই বারও প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন দ্রাবিড়। তখনই কোচ হন শাস্ত্রী। এবারও শাস্ত্রীর বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর বিসিসিআই প্রথমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে অনিল কুম্বলেকে। কুম্বলে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে বল যায় দ্রাবিড়ের কোর্টে।
ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী শাস্ত্রী ৮.৫ কোটি রুপি বেতন পেতেন, দ্রাবিড় বেতন পাবের তার চেয়েও। ধারণা করা হচ্ছে ১০ কোটি রুপি বেতন দেওয়া হবে তাঁকে।
ভারতের হয়ে ১৬৪ টি টেস্ট খেলেন দ্রাবিড়। এই ১৬৪ টেস্টের ২৮৬ ইনিংসে ৫২.৩১ গড়ে ১৩২৮৮ রান সংগ্রহ করেন দ্রাবিড়। টেস্টে ৬৩ টি হাফ সেঞ্চুরির সাথে ৩৬ টি সেঞ্চুরি করেন তিনি। আর ৩৪৪ ওয়ানডে খেলে ৩৯.১৭ গড়ে দ্রাবিড় সংগ্রহ করেন ১০৮৮৯ রান। ৮৩ টি হাফ সেঞ্চুরির সাথে ১২ টি সেঞ্চুরি করেন তিনি।
এখন রাহুল এনসিএ ছেড়ে দিলে তাঁর জায়গায় আসবেন কে? – সেটা নিয়ে ভাবছে বিসিসিআই। টাইমস অব ইন্ডিয়া এই দৌঁড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রেখেছে ভিভিএস লক্ষ্মণকে। লক্ষ্মন এই মুহুর্তে আইপিএলের দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের মেন্টরের দায়িত্বে আছেন। তবে, এনসিএর দায়িত্ব নিলে আইপিএল তো বটেই টেলিভিশন ধারাভাষ্য কলাম লেখার মায়াও ছাড়তে হবে ‘দ্য ভেরি ভেরি স্পেশাল’কে।