দ্রাবিড়ে শাস্ত্রীয় স্বপ্ন

কোচ হিসেবে ভারতের হয়ে যাত্রাটা শেষ রবি শাস্ত্রীর। ২০১৭ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর চার বছর ভারতকে এনে দিয়েছেন অনেক সাফল্য। দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরেও প্রতিটি সিরিজেই দাপটে দেখিয়েছে বিরাট কোহলির দল। তবে আইসিসি ট্রফি ঝুলিতে পুরতে পারেননি শাস্ত্রী। দলের শক্তিমত্তা বিবেচনা করলে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, কিংবা চলতি আসরেও ভার‍ত ছিলো অন্যতম ফেবারিট। কিন্তু আইসিসির ইভেন্ট এলেই ঠিক কোথায় যেনো বার বার আটকে যেনো দলটি।

ট্রফি না জিতলেও ভার‍তের হয়ে অন্যতম সফল কোচ যে শাস্ত্রী সেটাতে দ্বিমত থাকবার কথা নয়। নামিবিয়ার বিপক্ষে জয় দিয়েই শেষ হলো শাস্ত্রীর কোচিং সফর। এবারের আসরে ফেবারিট তকমা নিয়ে এলেও মূল পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে তাঁর দল। বিদায় বেলায় জানালেন কোচিং ক্যারিয়ারে সফলতা-ব্যর্থতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির অনেকটাই।

তিনি বলেন, ‘যখন আমি এই পদে দায়িত্ব পেয়েছিলাম, আমি নিজেকে বলেছিলাম আমি একটা পার্থক্য গড়ে দিতে চাই। আমি মনে করি আমি এটা পেরেছি। মাঝেমধ্যে দেখা যায় আপনি কতটা চান তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ আপনি কতটা উন্নতি করতে পেরেছেন। আমার মনে হয় গত পাঁচ বছরে এরা যথেষ্ট উন্নতি করেছে। পৃথিবির যে প্রান্তেই তাঁরা ভ্রমণ করেছে সব ফরম্যাটেই তাঁরা সাফল্যের ছাপ রেখেছে।’

দেশের মাটিতেই নয় দেশের বাইরেও শাস্ত্রীর অধিনে ভার‍ত ছিলো দুর্দান্ত। তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় দুই সিরিজ জয়, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সিরিজ জয়, ইংল্যান্ডেও আমরা লিড নিয়েছি। লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের সাফল্য এখন অনেক উপরে। বড় বড় দলগুলোর বিপক্ষে সাদা বলেও তাঁদের ঘরে আমরা জিতেছি। আমার সহ দলের জন্য এটি বড় সাফল্য। অনেক দল ঘরের মাটিতে সেরা হলেও বাইরে জিততে পারে না। কিন্তু আমার দল সেটি করে দেখিয়েছে।’

নতুন কোচ হিসেবে ভারতের হয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়। জুনিয়র লেভেল থেকে ক্রিকেটার তৈরির পেছনে অনেক বড় অবদান দ্রাবিডের। ঘরোয়া ক্রিকেটে পেয়েছেন অনেক সাফল্য। দ্রাবিড়ের দায়িত্ব নেওয়াটা দলের জন্য অনেক বড় পাওয়া উল্লেখ করে শাস্ত্রী বলেন, ‘সে দারুণ একটা দল গড়েছে। আমি আশা করি সময় যত গড়াবে দ্রাবিড়ের অধিনে দলের পারফরম্যান্স আরো উপরের দিকে যাবে। কারণ এখানে ৩-৪ জন এমন খেলোয়াড় আছে যারা আরো ৩-৪ বছর খেলবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিরাট এখনো খেলছে, অধিনায়ক হিসেবে সে দারুন কাজ করেছে। গত পাঁচ বছর ধরে টেস্টে সে অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। সে যেভাবে দলের জন্য ভেবেছে সত্যি অসাধারণ।’

আইপিএলের পরপরই বিশ্বকাপে আসে ভারত। টানা খেলার মধ্যে থাকায় ক্লান্তিটা ছিলো খেলোয়াড়দের চেহারায় স্পষ্ট। এর জন্য টানা খেলার মধ্যে রাখাকে দোষ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বিশ্রাম না পাওয়া ব্যর্থতার বড় কারণ। এরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে বেশ পিছিয়ে ছিলো। টানা ছয় মাস বায়োবাবলে থাকা, আইপিএল ও বিশ্বকাপের মাঝে একটা বড় গ্যাপের দরকার ছিলো। যখন বিগ ম্যাচ গুলো আসলো, চাপ সৃষ্টি হলো – আপনি নিজেকে সেটার সাথে মানিয়ে নিতে পারলেন না। এটা কোনো অজুহাত নয়। হারতে ভয় পাইনা, কিন্তু আমরা জয়ের জন্য চেষ্টাই করিনি। ওইখানে এক্স-ফ্যাক্টরটাই ছিলো না।’

বোলিং কোচ ভারত অরুণ ও ফিল্ডিং কোচ শ্রীধর রবি শাস্ত্রীর সাথেই কাজ করছিলেন বিরাট, রোহিতদের সাথে। বিদায় বেলায় সহকারী কোচদেরও প্রশংসা করতে বাদ দেননি শাস্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভারত অরুন ও রামাকৃষ্ণান শ্রীধর অসাধারণ কাজ করেছে। আমি ভারতকে বোলিং বিভাগে গুরু মানি। প্রায় ২০ বছর ধরে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা আছে তার। সে অনেক কোচকেই কোচিং করিয়েছে। সে অনেক কোচকে গড়ার পরেই এখানে এসেছে। যার কারণেই আমি তাকে নিয়েছি। আমি কিছু সময় জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে (এনসিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলাম। শ্রীধর, অরুন, ডেভ হোয়াটমোররা সেখানে যুক্ত ছিলেন। ভরতের সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো সহজেই বোলারদের সাথে মিশতে পারে। সে কারো টেকনিকে পরিবর্তন না করেই সেরাটা বের করে আনতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শ্রীধর বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডিং কোচ সেটা নি:সন্দেহে। তার অধীনে ভারত বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডিং সাইড ছিলো। আমি প্রতি ম্যাচেই বলতাম, আমি উন্নতি চাই। এটায় কোনো ছাড় নেই, এটা হতেই হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link