শাস্ত্রীর জায়গায় দ্রাবিড়, দ্রাবিড়ের জায়গায় লক্ষ্মণ

ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হতে আনুষ্ঠানিক ভাবে আবেদন করেছেন রাহুল দ্রাবিড়। গত ক’দিনে বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ায় (বিসিসিআই) যে কানাঘুষা তাতে এটা স্পষ্ট যে ‘দ্য গ্রেট ওয়াল’ খ্যাত এই ব্যাটিং গ্রেটই হবেন ভারতের নতুন কোচ। বর্তমান কোচ রবি শাস্ত্রীর জায়গা নিতে যাচ্ছেন তিনি।

বর্তমানে ভারতের ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির (এনসিএ) প্রধানের দায়িত্বে আছেন রাহুল দ্রাবিড়। সেই জায়গার জন্য এখন হন্যে হয়ে কাউকে খুঁজছে বিসিসিআইয়ের ক্রিকেট অ্যাডভাইজরি কমিটি। আর সেই দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন দ্রাবিড়ের সাবেক সতীর্থ ভিভিএস লক্ষ্মণ।

রাহুল দ্রাবিড়ের নিয়োগ পাওয়াটা এখনও আনুষ্ঠানিকতা পায়নি। তবে, জানা গেছে বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি ও সচিব জয় শাহ’র প্রথম ও একমাত্র পছন্দ নাকি দ্রাবিড়।

বিসিসিআইয়ের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) রাহুল আনুষ্ঠানিক ভাবে আবেদন করেছে। আজই আবেদনের শেষ দিন ছিল। এনসিএ-তে তাঁর দলের বাকিরা মানে বোলিং কোচ পরশ মামব্রে  ও ফিল্ডিং কোচ অভয় শর্মা আগেই আবেদন করেছে। যদিও, রাহুলের আবেদন করাটা এখন কেবলই আনুষ্ঠানিকতা।’

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংস যখন মুখোমুখি হয় দুবাইতে, তখন দ্রাবিড়ের সাথে বৈঠকে বসেন সৌরভ ও জয় শাহ। সেখানেই নাকি দ্রাবিড়কে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে কথা পাকাপাকি হয়। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই কোচ হিসেবে নিজের লম্বা ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন রবি শাস্ত্রী।

এর আগে বেশ কয়েক বার জাতীয় দলের কোচ হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন দ্রাবিড়। ২০১৬ সালে দ্রাবিড়কে প্রথম বারের মত জাতীয় দলের কোচ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন দ্রাবিড়। দ্রাবিড় নাকচ করে দেওয়ার পর কোচ হন অনিল কুম্বলে। এক বছর পর কুম্বলে কোচিং ছেড়ে দিলে আবারো দ্রাবিড়কে প্রস্তাব দেয় বিসিসিআই।

কিন্তু সেই বারও প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন দ্রাবিড়। তখনই কোচ হন শাস্ত্রী। এবারও শাস্ত্রীর বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর বিসিসিআই প্রথমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে অনিল কুম্বলেকে। কুম্বলে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে বল যায় দ্রাবিড়ের কোর্টে।

ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী শাস্ত্রী ৮.৫ কোটি রুপি বেতন পেতেন, দ্রাবিড় বেতন পাবের তার চেয়েও। ধারণা করা হচ্ছে ১০ কোটি রুপি বেতন দেওয়া হবে তাঁকে।

২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়া রাহুল দ্রাবিড় ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন ভারত অনূর্ধ্ব ১৯ দল ও ভারত এ দলের প্রধান কোচ। দ্রাবিড়ের সময়েই ২০১৬ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে রানারআপ হয় ভারত এবং ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ান হয় ভারত। ২০১৯ সালেই এনসিএ’র ক্রিকেট পরিচালকের দায়িত্ব নেন তিনি।

ভারতের হয়ে ১৬৪ টি টেস্ট খেলেন দ্রাবিড়। এই ১৬৪ টেস্টের ২৮৬ ইনিংসে ৫২.৩১ গড়ে ১৩২৮৮ রান সংগ্রহ করেন দ্রাবিড়। টেস্টে ৬৩ টি হাফ সেঞ্চুরির সাথে ৩৬ টি সেঞ্চুরি করেন তিনি। আর ৩৪৪ ওয়ানডে খেলে ৩৯.১৭ গড়ে দ্রাবিড় সংগ্রহ করেন ১০৮৮৯ রান। ৮৩ টি হাফ সেঞ্চুরির সাথে ১২ টি সেঞ্চুরি করেন তিনি।

এখন রাহুল এনসিএ ছেড়ে দিলে তাঁর জায়গায় আসবেন কে? – সেটা নিয়ে ভাবছে বিসিসিআই। টাইমস অব ইন্ডিয়া এই দৌঁড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রেখেছে ভিভিএস লক্ষ্মণকে। লক্ষ্মন এই মুহুর্তে আইপিএলের দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের মেন্টরের দায়িত্বে আছেন। তবে, এনসিএর দায়িত্ব নিলে আইপিএল তো বটেই টেলিভিশন ধারাভাষ্য কলাম লেখার মায়াও ছাড়তে হবে ‘দ্য ভেরি ভেরি স্পেশাল’কে।

এনসিএ আর ভারতীয় জাতীয় দল পাশাপাশি নিজেদের কাজ পরিচালনা করে। আর দুই পক্ষের মাঝে ভাল বোঝাপড়াটাও জরুরী। আর দ্রাবিড়-লক্ষ্মণ জুটির কথা তো নতুন করে ভেঙে বলার কিছু নেই। এখানেই আসলে এগিয়ে আছেন লক্ষ্মণ।

বিসিসিআইয়ের প্রথম পছন্দ লক্ষ্মণ। তবে, তাঁর বাসস্থান আর পরিবার-পরিজন থাকে হায়দ্রাবাদে, লক্ষ্মণ নিজেও সেখানেই থাকেন। ফলে, পারিবারিক মায়া তিনি ছাড়তে পারবেন কি না, বা পরিবার নিয়ে ব্যাঙ্গালুরুতে যেতে চাইবেন কি – না – তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। কারণ, ব্যাঙ্গালুরুতে তাঁকে অন্তত বছরের ২০০ দিন কাটাতে হবে। যদিও, লক্ষ্মণকে না পেলে কুম্বলেও এনসিএ’র জন্য বিবেচনায় রেখেছে সংস্থাটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link