বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান স্বভাবগত দিক থেকে বড্ড ‘স্পষ্টভাষী’ মানুষ। অকপটে বাস্তব চিত্র স্বীকার করতে তাঁর বাঁধেনা। এই যে ভারত-বাংলাদেশের ম্যাচের আগের দিন এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে ফেভারিট নয়, দ্বিধাহীনভাবে স্বীকার করে নিলেন।
এতে অবশ্য সাকিবের উপর টাইগার ভক্তরা কিছুটা মন:ক্ষুণ্ণ হতে পারে। কোনো কোনো গণমাধ্যমে সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে চিন্তা করলে এটা স্রেফ ভারতের সাথে বাংলাদেশের পার্থক্য তুলে ধরার একটা স্পষ্ট বার্তা ছিল।
বাংলাদেশ বনাম ভারতের বিগত পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট হয়ে যায়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরে ভারতকে কখনো হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এই অবধি বাংলাদেশ ও ভারত ১১ টি–টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হয়েছে। তন্মধ্যে বাংলাদেশ কেবল ২০১৯ সালে ভারতকে মাত্র একবার হারাতে সক্ষম হয়েছিল। দুই দলের মধ্যে শক্তিমত্তার সুস্পষ্ট একটা পার্থক্য রয়েছে।
সাকিব তাঁর বক্তব্যে আরও বলেছিলেন যে ভারত এবারের আসরের ফেভারিট, তাঁরা বিশ্বকাপ জিততে এসেছে। ‘ম্যাচটিতে ভারতকে হারালে আপসেট হিসেবে গণ্য হবে’ সাকিবের এই নির্দিষ্ট বাক্যটি সব গণমাধ্যমে দেদারছে প্রকাশ হলেও, এই বক্তব্যের পরের অংশটি কিন্তু উহ্য থেকে গিয়েছে। যেখানে সাকিব বলেছিলেন তাঁরা আপসেটই ঘটাতে চান।
সাকিবের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তখন তিনি অস্বীকার করেছিলেন যে ভারত এই প্রতিযোগিতায় ‘ফেভারিট’ হিসেবে অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সম্মান করি। আমি মনে করি তাঁরা খুব ভাল দল। তাছাড়া আমার মনে হয় এই ফরম্যাট এবং এই বিশ্বকাপ সত্যিই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যে আপনি কোনো দলকে হালকাভাবে নিতে পারবেন না। আয়ারল্যান্ড ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তা প্রমাণ করে দেখিয়েছে। এই প্রতিযোগীটায় এমন যথেষ্ট ম্যাচ আমরা দেখেছি।’
ফেভারিটিজম প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এটি একটি সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট। মাত্র বিশ ওভার খেলা চলে। এখানে যেকোন কিছুই হতে পারে। তাই কে স্পষ্ট ফেভারিট তা বলা খুব কঠিন।’
দ্রাবিড় আরও যোগ করেন, ‘এই টুর্নামেন্টটি জমজমাট হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশকে কোনভাবেই হালকা ভাবে নিচ্ছি না। আমাদের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা তেমনই হবে যেমনটা পার্থে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছিল।’
সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে যে হালকাভাবে নিচ্ছে না ভারত সেই বার্তাই দিয়েছেন রাহুল দ্রাবিড়। কারণ আসলেই তো ক্রিকেটীয় দুনিয়ায় বিশেষ করে এই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ‘নাথিং ইজ ইম্পসিবল’। আর বাংলাদেশ যে নিজেদের দিনে কি করতে পারে সেটা তো ভালই জানেন দ্রাবিড়।
২০০৭ বিশ্বকাপে দ্রাবিড় অধিনায়ক হয়ে দল নিয়ে গিয়েছিলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপে, সেই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই ভারতকে ছিটকে দিয়েছিল হাবিবুল বাশার সুমনের বাংলাদেশ। দলে ছিলেন তরুণ সাকিবও, হাফ সেঞ্চুরিও করেছিলেন। ফলে সাকিবের মিষ্টি কথায় দ্রাবিড় অতীত ভুলছেন না!