দুই বছরের চুক্তিতে ২০২১ সালের নভেম্বরে ভারতের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন দ্রাবিড়। রাহুল যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ভারত বিশ্বকাপ শেষে। তবে বিশ্বকাপ শেষের পরই আবার তাঁর সাথে চুক্তি নবায়ন করেছে বিসিসিআই। দুই বছরের সময়কালে তাঁর অধীনে ভারত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে হারলেও জিতেছে এশিয়া কাপ। তিন সংস্করণেই দলকে তিনি আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষেও তুলেছেন।
তবে লাল বলের ক্রিকেটে কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড়ের সাফল্যের ধারাটা বেশ অধারাবাহিক। এমনিতে ঘরের মাটিতে সিংহভাগ ম্যাচেই সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু উপমহাদেশের বাইরে এই চিত্রটা আবার উল্টো। এই যেমন সেঞ্চুরিয়ন টেস্টেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে ভারত। শুধু এই সেঞ্চুরিয়ন টেস্ট নয়, রাহুল দ্রাবিড়ের অধীনে গত দুই বছরে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলা ৫ টি টেস্টেই হারের তিক্ত স্বাদ নিতে হয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে।
রাহুল দ্রাবিড় কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জিতে নতুন এক ইতিহাস গড়েছিল ভারত। তাই বাইরের কন্ডিশনে রাহুল দ্রাবিড়ের অধীনস্ত ভারতকে নিয়ে শুরু থেকেই প্রত্যাশা ছিল অনেক। তবে ২০২১ এর শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার সফরে গিয়ে টেস্ট সিরিজে রীতিমত বিধ্বস্ত হয় টিম ইন্ডিয়া। জোহানেসবার্গ ও কেপটাউন, দুই টেস্টেই হারে ভারত। তবে সবচাইতে দৃষ্টিকটু ব্যাপার ছিল, ওই সিরিজে ভারত তাদের দলীয় সংগ্রহ একবার ৩০০ পেরোতে পারেনি। দলের এমন ব্যর্থতার পর, এই সিরিজ শেষেই ভারতের টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন বিরাট কোহলি।
২০২২ সাল। সেবার এজবাস্টন টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-ইংল্যান্ড। ৫ ম্যাচের সিরিজে ভারত ২-১ এ এগিয়ে গেলেও টানা ২ টেস্ট জিতে সিরিজটি নিজেদের করে নেয় ইংল্যান্ড। যার সর্বশেষ এজবাস্টন টেস্টই শেষ হয়েছিল নানা রোমাঞ্চে। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯০/৪ থেকে ২৪৫ রানে গুটিয়ে যাওয়া ভারত ইংল্যান্ডের সামনে ৩৭৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল। যা টপকাতে হলে রেকর্ডই গড়তে হতো ইংল্যান্ডকে। সেবার ইংল্যান্ড রেকর্ড গড়েই জিতেছিল। জো রুট আর জনি বেয়ারস্টো তো রীতিমতো ছেলেখেলা করেই রেকর্ড গড়ে ইংলিশদের ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে ১৩২ রানের ভালো লিড পেয়েও দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে ভারত ইংল্যান্ডের লক্ষ্যকে আর কঠিন করতে পারেনি।
ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনাল খেলতে এসে খালি হাতেই ফিরতে হয় ভারতকে। ওভালের ফাইনালে এবার তাঁরা হারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। শেষ দিন ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ভারতের প্রয়োজন ছিল আরও ২৮০ রান। উইকেটে বিরাট কোহলি ছিলেন বলেই আশা ছিল ভারতের। তবে সেই আশা আর পূরণ হয়নি। ওভালে পঞ্চম দিনে বর্ধিত প্রথম সেশনেই ৫৫ রান তুলতে শেষ ৭ উইকেট হারায় রোহিত শর্মার দল। ফলে প্রথমবার ফাইনাল খেলতে এসেই চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডের পর অস্ট্রেলিয়া—টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দুই আসরের শিরোপা যায় তাসমান-পাড়ের দুই দেশে। আর টানা দুই ফাইনালে গিয়েও রানার্সআপের তিক্ত স্বাদ নিতে হয় রাহুল দ্রাবিড় শিষ্যদের।
দুই বছর বাদে, আবারো প্রোটিয়া দূর্গে অসহায় আত্মসমর্পণ। ২০২১ সালে তবুও কিছুটা লড়াই করেছিল ভারত। তবে ২০২৩-এ এসে যেন তার ছিটেফোটাও মিলল না। সেঞ্চুরিয়নে ভারত হেরেছে ইনিংস ও ৩২ রানে। নন্দ্রে বার্গার, কাগিসো রাবাদা ও মার্কো ইয়ানসেনের বোলিং তোপে বক্সিং ডে টেস্টে রীতিমত দাঁড়াতেই পারেনি রোহিত-বিরাটরা। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে লোকেশ রাহুলের সেঞ্চুরিতে কোনোমতে ২০০ পেরিয়েছিল ভারত। তার বিপরীতে ৪০৮ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে সেই ২৭৭ রানে পিছিয়ে থেকেই দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে নেমেছিল ভারত। তবে ঘুরে দাঁড়ানো তো হয়-ই নি, উল্টো ব্যাটিং ব্যর্থতার চরম নিদর্শন ঘটিয়ে মাত্র ১৩১ রানে গুটিয়ে যায় রোহিতের দল।
ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্টে কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড় এখন জয়হীন। অবশ্য প্রোটিয়াদের দূর্গে কখনোই সিরিজ জিততে পারেনি ভারত। এবার সেই দুঃস্মৃতি মুছে ফেলার লক্ষ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রেখেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। তবে সেটি আপাতত হচ্ছে না। এখন দেখার পালা, নিজের ২ বছরের এ মেয়াদকালে সেখানে অন্তত ম্যাচ জিততে পারেন কিনা দ্রাবিড়। লাল বলের ক্রিকেটে ব্যর্থতা ঢাকতে তাঁর এখন জয় চাই-ই চায়।