ভারতীয় ব্যাটাররা মানসম্মত স্পিনে দুর্বল!

ভারতীয় ব্যাটাররা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্পিন খেলতে জানেন – ক্রিকেট পাড়ার এক প্রচলিত উক্তি। ঘরের মাঠে র‍্যাংক টার্নার বানিয়েই সিরিজ জিততে অভ্যস্ত টিম ইন্ডিয়া। তবে এবারের বোর্ডার – গাভাস্কার সিরিজ শুরুর আগে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার এবং বিশেষজ্ঞরা সুর পাল্টেছেন। তাঁদের মতে ভারতের বর্তমান ব্যাটাররা স্পিননির্ভর পিচে স্বাছন্দ্য নন, বরং স্পোর্টিং পিচই বানানো উচিত। 

ভারতের ব্যাটসম্যানরা বরাবরই স্পিনে ভালো। ঘরের মাঠে স্পিন নির্ভর পিচ বানিয়ে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাকে বেশ কয়েকবার নাস্তানাবুদ করেছে স্বাগতিকরা। তাঁদের স্পিনারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি প্রতিপক্ষের ব্যাটাররা। তবে গত বছরদুয়েকে বদলে গেছে সে দৃশ্য। ক্রমশই উন্নতি করেছে ভারতের পেসাররা, অন্যদিকে ব্যাটারদের ফর্মটা যেন পড়তির মুখে। এক্সপ্রেস গতির পেসার আর মানসম্মত স্পিনারদের বিপক্ষে ব্যাটিং অর্ডার ধ্বসে পড়েছে বাজেভাবে। 

গত ডিসেম্বরে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের কথাই ধরুন না। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সেদিন সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম এবং মেহেদি হাসান মিরাজের বলে রীতিমতো চোখে সর্ষেফুল দেখছিলেন ভারতীয় ব্যাটাররা। শেষপর্যন্ত শ্রেয়াস আইয়ার এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ব্যাটে ভর করে সেবার রক্ষা পায় রোহিত শর্মার দল। অন্যথায় বড় লজ্জা অপেক্ষা করছিল তাঁদের জন্য। 

সাবেক ভারতীয় স্পিনার এবং ধারাভাষ্যকার মুরালি কার্তিক বলেন, ‘ফ্ল্যাট পিচে স্পিনারদের সামলানো বড় কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু আমাদের মানতেই হবে র‍্যাংক টার্নার পিচগুলোতে মানসম্মত স্পিনারদের বিপক্ষে ভারতের ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা আছে। আমি জানি না অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেমন ধরনের পিচে খেলা হবে। তবে র‍্যাংক টার্নার বানানো হলে আমাদের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে।’

এছাড়া কার্তিকের মতে ঘরোয়া ক্রিকেটেও এখন আগের মতো ভালো স্পিন খেলতে জানা ব্যাটসম্যান উঠে আসছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি যখন ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে চেন্নাইতে টুর্নামেন্ট খেলা শুরু করেছি, তখন বিক্রম রাঠোর, এস শরথ, শেনথিলনাথনের মতো দারুণ ব্যাটসম্যানরা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতেন। এরপর রঞ্জির দুই সেরা ব্যাটসম্যান রমন লাম্বা এবং অজয় শর্মাকে বল করেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় তাঁদের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা আমাকে ভীষণ সাহায্য করেছে।’

এছাড়া তৃতীয় স্পিনারের প্রশ্নে কুলদীপ যাদব আর অক্ষর প্যাটেলের মাঝে একজনকে বেছে ব্যাপারটা কার্তিক ছেড়ে দিয়েছেন পিচের উপর। তাঁর ভাষায়, ‘যদি ফ্ল্যাট পিচ হয়, তবে কুলদীপকে খেলানো যেতে পারে। সে বোলিংয়ে বৈচিত্র্য এনে দিতে পারে। আর যদি দ্বিতীয় দিন থেকেই বল ঘুরতে শুরু করে তবে আক্সারকে খেলানো উচিত। তবে ফর্মের বিচারে খুব সম্ভবত আক্সারই তৃতীয় স্পিনার হতে যাচ্ছেন।’

পাঁচ বছর আগে ধর্মশালাতে অজিদের বিপক্ষে চার উইকেট শিকার করেই টেস্টে অভিষেক চায়নাম্যান কুলদীপের। কিন্তু ইনজুরি আর টিম কম্বিনেশনের অজুহাতে এখনো পর্যন্ত মাত্র সাত টেস্টে মাঠে নেমেছেন। লাল বলে তাঁর উইকেটসংখ্যা ৩৪। অন্যদিকে আক্সার প্যাটেল গত দুই বছরেই সাত টেস্ট খেলে তুলে নিয়েছেন ৪৭ উইকেট।

সাবেক জাতীয় নির্বাচক যতিন প্রজাপতি বলেন, ‘কোনো সন্দেহ ছাড়াই অশ্বিন আর জাদেজার সাথে তৃতীয় স্পিনার হিসেবে আক্সারের সুযোগ পাওয়া উচিত। গত দুই বছর যাবত সে ফর্মের তুঙ্গে আছে এবং সে সুযোগটা প্রাপ্য।’

এছাড়া ব্যাটিং লাইনআপ নিয়েও খানিকটা দুশ্চিন্তা আছে ভারতের। এমনিতে রোহিত শর্মার সাথে লোকেশ রাহুল ইনিংস উদ্বোধন করলেও রাহুলের অফফর্ম আর সাম্প্রতিক সময়ে শুভমান গিলের অনবদ্য পারফরম্যাস্ন সব হিসেব বদলে দিয়েছে। এছাড়া রিশাভ পান্তের বদলি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।

সাবেক প্রধান নির্বাচক এমএসকে প্রসাদ বলেন, ‘রাহুলকে মিডল অর্ডারে পাঁচে নামানো যেতে পারে। শুভমান ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছে, তাঁকে ওপেনিং থেকে সরানোর প্রশ্নই আসে না। রাহুল সাদা বলের ক্রিকেটে ভালো ফর্মে আছে। আমার মনে হয় না তাঁর নিচে নামতে অসুবিধা আছে।’

এছাড়া ঋষাভ পান্তের বদলি হিসেবে প্রসাদের প্রথম পছন্দ কেএস ভরত। তিনি বলেন, ‘পান্ত থাকাকালীন সময়েই গত দুই বছর ধরে ভরতকে গড়ে তোলা হয়েছে। এখনই সুযোগ দায়িত্বটা তাঁর হাতে তুলে দেয়ার। আমার ধারণা সে প্রস্তুত।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link