আমরা এমন একটি দেশের মানুষ যেখানে বয়স লুকানোটা সিস্টেমেরই অংশ। স্কুলে ভর্তির জন্য বয়স কমানো, চাকরির জন্য বয়স কমানো আমাদের এখানে খুব মামুলি ব্যাপার। বয়স কমানোর জন্য এখানে এফিডেভিটও করানো হয়। এসএসসি পরীক্ষার আগে এফিডেভিট করানোর হিড়িক পড়ে যায়। অনেক সময় এসব ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষকরাও এই কাজে উৎসাহ দেয়।
কি আজব ব্যাপার! সেই আমরাই আবার রশিদ খানের বয়স নিয়ে হাসি-তামাশা করি। ট্রল করি। অন্যকে ছোট করে আমরা এক ধরণের বিকৃত আনন্দ উপভোগ করি। ভাবটা এমন যে, রশিদ খান ক্রিকেট মাঠে যা কীর্তি গড়েছেন তা বয়স কমানোর জন্যই সম্ভব হয়েছে।
রশিদ খান যা করেছেন, বা বলা ভাল যা করছেন সেটা আমাদের সেটা কিন্তু তাঁর বয়সের জন্য নয়। সব কিছু সম্ভব হয়েছে তাঁর প্রতিভা আর অদম্য মানসিকতার সুবাদে। তা না হলে মাত্র চার-পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারেই বিশ্বসেরা হয়ে যাওয়া যায় না।
আধুনিক একজন বোলারের পক্ষে যা যা করা সম্ভব গেল তিন বছরে সেটাই করেছেন রশিদ খান। কোনো সন্দেহ ছাড়াই এই আফগান ক্রিকেটারকে সময়ের সেরা লেগ স্পিনার বলে রায় দিয়ে দেওয়া যায়। এখন যে, আফগানিস্তান প্রায়ই বড় চোখের ভীতির কারণ হয়ে উঠতে পারছে তাঁর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান এই রশিদ খান নামের ভদ্রলোকটির।
ভীতি সৃষ্টির জন্য রশিদ খানের পক্ষে কথা বলে তাঁর পরিসংখ্যান। তবে, রশিদ খানের প্রসঙ্গে বলতে গেলে এখানে থামলেই চলবে না। তিনি এখন বিশ্বব্যাপি চলমান টি-টোয়েন্টি ভিত্তিক ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের হট চকলেট। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল), পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) কিংবা বিগ ব্যাশ – সব জায়গাতেই তিনি নিয়মিত মুখ। ফলে, তাঁর পারফরম্যান্স কিংবা ব্যাংক ব্যালান্স – সব কিছুই ঈর্ষণীয়।
এর চেয়েও বড় ব্যাপার হল, তাঁর মত ক্যারিশমাটিক একজন বোলার থাকলে এখন ক্রিকেট বিশ্বের যেকোনো দলই বর্তে যায়। আফগানিস্তান দলটা যে কালক্রমে ক্রিকেট বিশ্বের জন্যই বড় একটা হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তার পেছনে রশিদ খানের অবদানটাই অন্য যে কারও চেয়ে বেশি।
আর যেখানে বাংলাদেশের মান সম্পন্ন কোনো লেগ স্পিনারই নেই, সেখানে বসে রশিদ খানের বয়স নিয়ে ট্রল করা আর বোকার স্বর্গে বসবাস করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ট্রল থাকবেই, হয়তো এখনকার স্যোশাল মিডিয়ার যুগে সেটাকে এড়িয়ে থাকা যাবে না, তবে সেটা যেন কখনোই রশিদ খানের প্রতিভা ও অর্জনে কালি না মাখে।