খাদ্যনালির ক্যান্সারের যন্ত্রণা ছাপিয়ে গিয়েছিল তাঁর সহনশক্তির সীমা। এই মারণ অসুখেই হারিয়েছিলেন তাঁর দীর্ঘ তেষট্টি বছরের সঙ্গীনী স্ত্রী শার্লিকে মাস কয়েক আগে। আবেদন করেছিলেন স্বেচ্ছামৃত্যুর , এই এক মাস আগে। ২০২১ এর নভেম্বরে, ইংল্যান্ডের হাউজ অব লর্ডস মানেনি। ইংল্যান্ড এখনও স্বেচ্ছামরণকে আইনী স্বীকৃতি দেয়নি। মাস খানেক বাদে নিয়তিই সদয় হল, জীবন নদীর ওপারে গেলেন রে ইলিংওয়ার্থ।
ইংল্যান্ডের হয়ে ৬১ টি টেস্ট ও তিনটি একদিনের ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। ১৯৫৮ সালে ম্যানচেস্টারে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক। ১৯৭৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে লর্ডসে খেলেন শেষ টেস্ট ম্যাচ। ১৯৭১ সালের মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত যে ম্যাচটিকে প্রথম একদিনের ম্যাচের স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তিনি ছিলেন সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক।
যে তিনটি একদিনের ম্যাচ খেলেছিলেন, সবগুলিতেই তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয় দলের । ১৯৭৩ সালে ম্যানচেস্টারে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেন জীবনের তৃতীয় তথা শেষ একদিনের ম্যাচ।
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন ৩১ টি টেস্টে , যার মধ্যে ১২ টিতে ইংল্যান্ড জয় পায়, হারে মাত্র পাঁচটিতে । ১৯৭০-৭১ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাশেজ জয় ছিল তাঁর অন্যতম সাফল্য। ইংলিশ অধিনায়ক হিসেবে নি:সন্দেহে তিনি ছিলেন সফলদের কাতারে।
মূলত ছিলেন বোলিং অলরাউন্ডার। ডান হাতে অফ ব্রেক বল করতেন, লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট হাতে ভরসা যোগাতেন। টেস্ট জীবনে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন তিনবার। সেরা বোলিং ১৯৬৭ সালে লর্ডসে ভারতের বিরুদ্ধে। বুধি কুন্দরন, অজিত ওয়াদেকার, রুসি সুর্তির উইকেট সহ ছয়টি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন মাত্র ২৯ রানের বিনিময়ে।
টেস্টে শতরানও করেছিলেন দুবার। ব্যাট হাতে সেরা ইনিংস খেলেছিলেন ১৯৬৯ সালে লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। সেই টেস্টে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে দশম উইকেটে জন স্নোর সাথে জুটি বেঁধে যোগ করেন মূল্যবান ৮৩ রান, যার মধ্যে স্নোর অবদান মাত্র নয় রান। আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সেই ইনিংসে ১১৩ রান করেন তিনি, যেটি তাঁর টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। টেস্টে মোট ১৮৩৬ রান ও ১২২ উইকেটের মালিক ছিলেন। বোঝাই যাচ্ছে, নিজের সময়ের বেশ প্রসিদ্ধ অলরাউন্ডার তিন।
নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। নিপুণ হাতে পরিচালনার করতেন ইয়র্কশায়ার ও ইংল্যান্ডের অধিনায়কেত্বর দায়িত্ব। জেফ বয়কট, জন স্নোর মত তারকাদের ইমেজ রে ইলিংওয়ার্থ সামলেছেন দক্ষ হাতে।
মাঠের খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পর ইংল্যান্ড দলের প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন ( ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ – তিন বছর)। আর এরপর ইংল্যান্ড জাতীয় দলের কোচের দায়িত্বও পালন করেন বছর খানেক (১৯৯৫ -৯৬)। মিডিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন সুনামের সাথে। ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট দলের সভাপতিও ছিলেন। ইয়র্কশায়ারই ছিল তাঁর ঘরবাড়ি। ১৯৬০ সালের উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন ইলিংওয়ার্থ।
গোটা ক্রিকেট জীবনের প্রতাপ জীবনের শেষ সময়ে ছিল না তাঁর। শেষ জীবনে কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে অনেক । সব যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর, বড় দিনের দিনটাতেই পারি দিলেন অমৃতলোকে। ইংল্যান্ড ক্রিকেটে তাঁর, অর্থাৎ রে ইলিংওয়ার্থের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে আজীবন।