বছর জুড়েই মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে আগ্রাসন। সেই আগ্রাসনটা সঙ্গী করেই বিশ্বকাপ মিশনে এসেছিলেন। একই সাথে নিজের নামের পাশে ছিল নাম্বার ওয়ান টি-টোয়েন্টি ব্যাটারের তকমা। কিন্তু বড় মঞ্চে এসেই যেন খেই হারিয়ে ফেললেন রিজওয়ান। বিশ্বকাপে ম্যাচের পর ম্যাচ পেরিয়ে যায়। কিন্তু রিজওয়ানের ব্যাটে রান আসে না।
একে বারে যে রান আসছিল না সেটাও নয়। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেই খেলেছিলেন ৪৯ রানের ইনিংস। কিন্তু সেই ইনিংস বাদে বাকি ৪ ম্যাচের দুই ম্যাচেই ফিরেছিলেন এক ডিজিটে। বিশ্বকাপ শুরুর আগের ১০ ম্যাচের মধ্যে যার পাঁচটিতেই ফিফটি ছিল, সেই রিজওয়ানই বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভেই থাকলেন ফিফটি শূণ্য। এর মাঝে সুরিয়াকুমার যাদবের কাছে শীর্ষ ব্যাটারের জায়গা হারালেন। সব মিলিয়ে পুরো বছর জুড়ে যার ব্যাটে রানের ফোয়ারা চলল, সেই রিজওয়ান বিশ্বকাপে এসে ব্রাত্য হয়ে রইলেন।
কিন্তু, মোহাম্মদ রিজওয়ান ঠিকই ফিরলেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে পাকিস্তান যেমন ঘুরে দাঁড়াল, ঠিক অনুরূপ ভাবেই রিজওয়ানও ফিরে এলেন দুর্দান্তভাবে। আর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বেছে নিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমি ফাইনাল ম্যাচ। খেললেন ৪৩ বলে ৫৭ রানের একটি ইনিংস। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানকে ফাইনালে তোলার ম্যাচে হলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।
নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ১৫৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট হাতে যেমন ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল ঠিক তেমনটাই শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। পাশে পেয়েছিলেন বাবর আজমকে। এমন রানের লক্ষ্যে তাড়াহুড়ো করার কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু উইকেট আগলে রেখে ব্যাটিং করে গেলেই হল। বাবর-রিজওয়ান জুটি সেটিই করে গিয়েছেন। দুজন মিলে ৫০ রানের জুটি পূরণ করার পর টপকেছেন ১০০ রানও। আর দুজনের ঐ ১০৫ রানের জুটিই পাকিস্তানকে জয়ের পথে এগিয়ে দেয়।
নিজের ৫৭ রানের ইনিংসের দিনে মোহাম্মদ রিজওয়ান বেশ কয়েকটি রেকর্ডেরও সঙ্গী হয়েছেন। কিউইদের বিপক্ষে এই ফিফটি দিয়েই তিনি এ বছরে নিজের ১০ম অর্ধশতক পূরণ করেছেন। রিজওয়ান আগের বছরেও ১২ টি ফিফটি করেছিলেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টানা দুই বছরে ১০ টি করে ফিফটি করার এটাই প্রথম কীর্তি।
এ ছাড়া এই ইনিংসের পর রিজওয়ান আরেকটি মাইলফলকেরও সামনে রয়েছেন। ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত ব্যাট হাতে তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রান করেছেন ৯৮১। বিশ্বকাপ ফাইনালে আর ১৯ রান করলেই তিনি ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় বারের মত এক পঞ্জিকাবর্ষে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন। রিজওয়ান আগের বছরেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৩২৬ রান করেছিলেন। টানা দুই বছরে পৃথকভাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক হাজার রান করা ব্যাটার ইতিহাসে আর একজনও নেই। মোহাম্মদ রিজওয়ান এখন সেই মাইলফলকই স্পর্শ করার সামনে।
রিজওয়ানের ৫৭ রানের ইনিংসের দিনে ফিফটি পেয়েছেন আরেক ওপেনার বাবর আজমও। আর এখানেই একটি রেকর্ডে নিজেদের যুক্ত করেছে এ জুটি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে সব মিলিয়ে ৫৭২ রানের জুটি নিয়ে পার্টনারশিপের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিলেন মাহেলা জয়াবর্ধনে আর দিলশান। আজকে ১০৫ রানের জুটির মাধ্যমে সেই রেকর্ডটিকেই টপকে যান বাবর-রিজওয়ান জুটি। তাদের জুটি থেকে এখন পর্যন্ত এসেছে ৬০৭ রান।
রিজওয়ান, বাবরের একই সাথে ফিরে আসা পাকিস্তানের জন্যও বেশ স্বস্তিদায়ক। বিশেষত, টুর্নামেন্টের একদম অন্তিম পর্যায়ে এসে রিজওয়ানের ফর্মে ফেরাটা খুবই জরুরি ছিল। কারণ আরেক ধাপ পেরোলেই ২০০৯ এর পর আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের স্বাদ পাবে পাকিস্তান। সে ক্ষেত্রে তাদের প্রতিপক্ষ হতে পারে ভারত অথবা ইংল্যান্ড।
এখন দেখার পালা, ২০০৭ এর সেই ফাইনাল আবার মেলবোর্নের মহারণে ফিরে আসে কিনা। তবে ফাইনাল যেহেতু মেলবোর্নে, ইংল্যান্ড ফাইনালে গেলে ৩০ বছর আগের সেই ফাইনাল আবারও ফিরে আসতে পারে। ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। আর সে ফাইনালটা হয়েছিল এই মেলবোর্নেই। অর্থাৎ এ বারের ফাইনালে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ যেই হোক, কাকতালীয় ঘটনার সূত্রপাত ইতোমধ্যে হয়ে গিয়েছে।